স্বল্প দূরত্বে যাতায়াতের জন্য আপনাকে এখন আর বাইসাইকেলের মালিক হতে হবে না। অ্যাপভিত্তিক সার্ভিস ‘জোবাইক’ নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের বিনিময়ে দিচ্ছে বাইসাইকেল সেবা। ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই সেবা।
বাংলাদেশে অ্যাপভিত্তিক বাহন শেয়ারিং সেবার যাত্রা বেশি আগের নয়। ২০১৫ সালে দেশীয় প্রতিষ্ঠান ‘চলো’ দিয়ে শুরু। ২০১৭ সালে ‘উবার’ আসার পর এ খাতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে চলেছে। রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি বড় শহরে এখন রাজত্ব করছে নানা প্রতিষ্ঠানের রাইড শেয়ারিং সেবা। অ্যাপভিত্তিক শেয়ারিং ব্যবস্থায় শুধুমাত্র বাইসাইকেল সেবা দিচ্ছে জোবাইক। উন্নত বিশ্বে এই সেবা বেশ পুরনো।
জোবাইকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মেহেদী রেজা বলেন, ‘যানজট বাংলাদেশের অন্যতম বড় সমস্যা। রাজধানী ঢাকায় একটি গাড়ির গড় গতি প্রতি ঘন্টায় ৬ কিলোমিটার। যানজটে একজন নগরবাসীর দিনে দুই ঘন্টা অপচয় হয় রাস্তায়। এছাড়া যানবাহনের কারণে দূষণ তো হচ্ছেই। এসব নানা দিক চিন্তা করে পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যকর এবং প্রযুক্তি নির্ভর বাইসাইকেল সেবা দেশে নিয়ে আসার চিন্তা করি।’
চলতি বছরের ১৮ জুন কক্সবাজারে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় জোবাইক। চীনে তৈরি নিজম্ব ডিজাইনের ২৫টি সাইকেল নিয়ে ১১ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ছেলে-মেয়ে উভয়ের ব্যবহার উপযোগী ১০০টি বেশি সাইকেল জাবিতে প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
অত্যাধুনিক লক, সোলার প্যানেল ও জিপিএস ট্র্যাকার রয়েছে এসব সাইকেলে। সেবা নিতে হলে প্রথমেই ‘জোবাইক’ এর একটি স্মার্টফোন অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপের ম্যাপ দেখে সাইকেল খুঁজে নিতে পারবেন একজন ব্যবহারকারী। অ্যাপের স্ক্যানার দিয়ে সাইকেলের কিউআর কোড স্ক্যান করলেই খুলে যাবে লক। রাইড শেষে জোবাইকের নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে যেকোনো দৃশ্যমান স্থানে পার্ক করতে হবে। আনলক করা থেকে ম্যানুয়ালি লক করা পর্যন্ত সময়ে মিনিট হিসেবে একজন ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কাটা যাবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি পাঁচ মিনিট তিন টাকা এবং কক্সবাজারে প্রতি মিনিট এক টাকা করে পরিশোধ করতে হবে ব্যবহারকারীকে।
প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী রেজা জানান, সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ২০টি বাইসাইকেল উন্নয়ন কর্মীদের বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছে। এছাড়া নভেম্বরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করবে জোবাইক। ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যটন এলাকা, আবাসিক এলাকা এবং সারাদেশে সেবার পরিধি বাড়ানো হবে।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে জোবাইক। পূর্বের যেকোনো সময়ের থেকে বিশেষ করে মেয়েদের সাইকেল চালানোর হার বেশি লক্ষ করা গেছে। সুযোগ হাতছাড়া করছেন না সাইকেল শিখতে আগ্রহীরাও।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ বড়ুয়া বলেন, ‘ক্যাম্পাসের যোগাযোগ ব্যবস্থায় জোবাইক ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। আগে ক্যাম্পাসের যাতায়াত ব্যবস্থা রিকশা নির্ভর ছিল। জোবাইক এই নির্ভরতা কমিয়ে সময় ও অর্থ বাঁচাচ্ছে।’
জোবাইকের ক্যাম্পাস লিড মীর রাসেল বলেন, ‘প্রত্যাশার থেকেও অনেক বেশি সাড়া পাচ্ছি। স্বল্প দূরত্বের জন্য জোবাইক একটি সহজ সমাধান। আইওটিভিত্তিক এই স্মার্ট সাইকেলগুলো সময় ও অর্থ বাঁচায়। বাইসাইকেলের জন্য পৃথক লেন তৈরি এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় জোবাইক ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।’
নির্দিষ্ট সীমার বাইরে সাইকেল নিয়ে যাওয়া, যন্ত্রাংশ চুরি বা বিকৃতি, দৃশ্যমান স্থানে পার্কিং না করাসহ কিছু প্রতিবন্ধকতার কথাও জানালেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক মো. আকতার মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা আধুনিক নগর পরিকল্পনায় পরিবহণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। সেগুলো হচ্ছে গণপরিবহণ, পথচারীবান্ধব অবকাঠামো এবং বাইসাইকেল চলাচল উপযোগী অবকাঠামো। পরিবেশবান্ধব, স্বল্প জায়গার চাহিদা এবং স্বাস্থ্যগত দিক থেকে বাইসাইকেল যেকোনো শহরের জন্য একটি ভালো মাধ্যম। তবে রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরের রাস্তাগুলো এখনও বাইসাইকেলের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ নয়। তাই আপাতত কমিউনিটিভিত্তিক ছোট ছোট এলাকাগুলোর জন্য জোবাইক একটি যুতসই মাধ্যম হতে পারে।’