গাজায় ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ করায় যুক্তরাষ্ট্রে ৯০০ শিক্ষক-শিক্ষার্থী গ্রেফতারের ঘটনা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচারের কথাটাই মনে করিয়ে দেয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২ মে) গণভবনে থাইল্যান্ড সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে ২৪ থেকে ২৯ এপ্রিল দেশটি সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কোনও বিক্ষোভের আয়োজন করা হবে কিনা, এই প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দাঁড়াচ্ছে। আমরা সবসময় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। যেখানেই যাই আমার কথা আমি বলবোই। যেভাবে গণহত্যা চলছে এটা অমানবিক।
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভকারীদের দমনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা নাকি গণতন্ত্রের একটা অংশ, সেটাও আমাদের শুনতে হয়। যেভাবে একজন প্রফেসরকে ধরে মাটিতে ফেলে গ্রেফতার করা হলো… ২০২১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরপরই যেভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির সন্ত্রাসী ও পুলিশ বাহিনী অত্যাচার করেছিল, এটা সেই অত্যাচারের কথাই মনে করিয়ে দেয়। তাদের (যুক্তরাষ্ট্রের) কাছ থেকে আবার মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়, সবক নিতে হয়। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর তৎপরতা এবং নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানো নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনটা যাতে না হয় সেজন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কারও কারও মনে একটু হতাশা ছিল আমি জানি। তবে আমার শক্তি হচ্ছে দেশের জনগণ। কাজেই জনগণের শক্তির ওপর আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি। এটাও বিশ্বাস করেছি, জনগণ যতক্ষণ চাইবে ততক্ষণই থাকবো ক্ষমতায়।
তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটেই নির্বাচিত হয়ে আসছি ক্ষমতায়। আমাদের দল তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী কোনও মিলিটারি ডিকটেটরের পকেট থেকে বের হয়নি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে আর্থসামাজিক উন্নয়নকে সামনে রেখে দেশের মানুষ যে শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল, তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে যায় এবং এটা প্রমাণিত সত্য। সে কারণে যত বাধাই আসুক আমরা সে বাধাটা উতরে যেতে পারি, যত চক্রান্তই হোক তা পাশ কাটিয়ে দেশের মানুষকে নিয়ে বিজয় নিয়ে আসি। সেটা স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় থেকে এই নির্বাচন—সবকিছু কিন্তু প্রমাণিত। কাজেই এখানে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনই ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা ‘গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই’ বলে তারাই তো মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এটা তারা ভুলে যায়। আর অনেকে নানান ধরনের কথা বলে। কেউ উন্নয়ন চোখে দেখে কেউ দেখে না। নাও দেখতে পারে। কারণ তাদের হয়তো উন্নয়নের ফর্মুলা ভিন্ন। আমার উন্নয়ন হলো গ্রামের মানুষ, গরিব মানুষ, তারা যেন দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারে। তাদের একটু বাসস্থান হবে, চিকিৎসা পাবে, শিক্ষা পাবে, জীবনমান উন্নত হবে। আপনারা সাংবাদিক, আপনারাই বলেন ১৫ বছর আগে দেশের অবস্থাটা কী ছিল? এখন কি কোনও পরিবর্তনই হয়নি? কেউ যদি না দেখে আমাদের তো কিছু করার নেই!
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের কিছু লোক আছে সারাক্ষণ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কান ভারী করার। তারা এখন অনেক জ্ঞানী-গুণী-বুদ্ধিজীবী। তাদের মতামত সারাক্ষণ বলতেই থাকে। মানুষ তো প্রভাবিত হয়, এটা স্বাভাবিক। দেশের মানুষ অনেকে প্রভাবিত হয়, বিদেশে তো হবেই। সাধারণ মানুষগুলো কিন্তু হয় না, তারা ঠিক আছে। তাদের আত্মবিশ্বাস আছে। জনগণের অধিকার নিশ্চিত করেই আমরা নির্বাচন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনের পুরো ইতিহাসটা যদি দেখেন, ১৯৭৫ সালের পর থেকে যত নির্বাচন, ৭৭ সালের হ্যাঁ-না ভোট নিয়ে যত নির্বাচন, প্রত্যেকটা নির্বাচনের সঙ্গে একটু ভালো করে তুলনা করলে দেখবেন ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সবচেয়ে বেশি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে; যেটা আমাদের লক্ষ্য ছিল। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরাই করেছি আন্দোলন-সংগ্রাম। সেটা ভুলে গেলে তো চলবে না।