X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

উল্টো পথে গাড়ি: প্রভাবশালীদের কাছে অসহায় পুলিশ

চৌধুরী আকবর হোসেন
২৯ এপ্রিল ২০১৬, ১৮:৫১আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০১৬, ২৩:৩৮


রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে রূপসী বাংলা হোটেলমুখী  রোডের উল্টো পথে চলছে পাজেরো গাড়ি উল্টো পথে গাড়ি চলার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট সৃষ্টি হলেও এ প্রবণতা বন্ধ করতে পারেনি পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভাবশালীদের উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধে ট্রাফিক পুলিশ অসহায় হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষেত্রে আইনি ব্যবস্থা নিতে গিয়ে নানাভাবে লাঞ্ছিত হতে হয় বলেও অভিযোগ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। এ কারণে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করে ব্যবস্থা নিলে উল্টো পথে গাড়ি চলার প্রবণতা কমবে বলে মত দিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
গত কয়েকদিনে সরজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে চলছে উল্টো পথে গাড়ি।  উত্তরা, বনানী, গুলশান, মহাখালী, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, বাংলামোটর, শাহবাগ, কাকরাইল, রমনা, নয়াপল্টন, মগবাজার, তেজগাঁওসহ অন্যান্য প্রধান সড়কে পুলিশের সামনেই চলছে উল্টো পথে গাড়ি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাইভেট কার, পাজারো, মাইক্রোবাস,মোটরসাইকেল উল্টো পথে চলতে দেখা গেছে। এরমধ্যে পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতরের স্টিকার যুক্ত গাড়ির সংখ্যাই বেশি। ট্রাফিক সিগন্যালে আগে যেতে কিছু কিছু সময়ে বাস, মিনিবাসও উল্টৈা পথে চলে। এমনকি পতাকাযুক্ত মন্ত্রীদের গাড়ি, জাতীয় সংসদের স্টিকারযুক্ত গাড়ি নিয়েও উল্টো পথে চলতে দেখা গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে। এসব গাড়ি উল্টো পথে চলার কারণে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং দ্রুত যেতে সহায়তা করছে ট্রাফিক পুলিশ।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কর্মরত একাধিক  ট্রাফিক পুলিশ সদস্য জানান, পর্যাপ্ত  ট্রাফিক  পুলিশ না থাকায় যানজট নিরসনে বেগ পেতে হয়। এর পাশাপাশি যানবাহনের বিভিন্ন অনিয়ম রোধেও সক্রিয় আছে ট্রাফিক পুলিশ। উল্টো পথে সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রভাবশালীদের গাড়ি বেশি চলে। সরকারি আমলা বা সংসদ সদস্যের গাড়ি উল্টো পথে গেলে একজন সাধারণ ট্রাফিক কনেস্টবল বাধা দিতেও গেলেও বিপদে পড়বেন। তারা জানান, ট্রাফিকের সিনিয়র কর্মকর্তারা অনেক সময় প্রভাবশালীদের উল্টো পথে চলা গাড়ি থামাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন। ফলে বিব্রত পরিস্থিতি এড়াতে অনেকে দেখেও এড়িয়ে যান। 

আরও পড়তে পারেন: ওবায়দুল কাদেরকে বিব্রত করলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

জানা গেছে, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বনানীর কাকলীতে ২৭ নম্বর রোড-সংলগ্ন ক্রসিংয়ে উল্টো পথে আসা পুলিশবাহী মিনিবাস ধাক্কায় দেয় একটি মোটরসাইকেলকে। মোটরসাইকেলে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজ উদ্দিন নিহত হন এবং তার সঙ্গে থাকা রাজিন নামে আরেক যুবক আহত হন। গত ৩ মার্চ উত্তরায় সিটি করপোরেশনের আবর্জনাবাহী একটি গাড়ি উল্টো পথে গিয়ে চাপা দিলে আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

 ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, জরুরি কারণে পুলিশের গাড়ি, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে উল্টো পথে চললে বাধা দেওয়া হয় না। এছাড়া, উল্টো পথে যানবাহন চলাচল ঠেকাতে ২০১৪ সালের ২৩ মে পরীক্ষামূলকভাবে  রাজধানীর হেয়ার রোডে বসানো হয়েছিল প্রতিরোধক যন্ত্র। তবে কোনও কাজে আসেনি ওই যন্ত্র। যানবাহনের চাপে কিছুদিনের মধ্যে ভেঙে যায় যন্ত্রের কাঁটাগুলো।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৩ সালের মোটরভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্সে সুনির্দিষ্টভাবে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর জন্য শাস্তির বিধান উল্লেখ নেই। এই অধ্যাদেশে উল্লেখ আছে, বেপরোয়াভাবে বা বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড কিংবা পাঁচ শত টাকা জরিমানা হবে। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নির্ধারিত মেয়াদের জন্য সাসপেন্ড থাকবে।

উল্টোপথে গাড়ি চলছে

 জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল বিআরটিএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উল্টো পথে গাড়ি চলা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।  বিআরটিএ-এর মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সড়কের রং সাইড দিয়ে যাওয়ার জন্য এ পর্যন্ত কোনও প্রভাবশালী বা ল’ মেকারকে (আইন প্রণেতা) ধরতে দেখিনি। আপনারা ধরছেন না কেন? ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আমার গাড়ি রং সাইডে গেলে আমাকেও ধরবেন। আইন প্রণেতারা আইন ভঙ্গ করলে তাদেরও ধরতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা যদি আইন না মেনে উল্টো পথে যান, তখন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, বাধা দিলেও নানাভাবে হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে যোগ দিতে উল্টো পথে যাওয়ার ব্যাপারে শৈথল্য দেখানো হয়। কিন্তু পুলিশ তো আর  জানেন, এখন তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছেন কিনা। অনেক প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলেও ফোনে নানা জায়গা থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। এরপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, উল্টো পথে যানচলাচল বন্ধ করতে। প্রভাবশালীরা উল্টো পথে না চললে, উল্টো পথে গাড়ি চলা শত ভাগ বন্ধ করা সম্ভব। ট্রাফিক বিভাগ থেকে বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় ভিডিও করে আইন ভঙ্গকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উল্টো পথে গাড়ি চলার ক্ষেত্রে  সিসি ক্যামেরা বা ভিডিও করে ব্যবস্থা নিলে এ প্রবণতা কমবে। আমরা বিভিন্ন মিটিংয়ে এমন পরামর্শ দিয়েছি।

আরও পড়তে পারেন: সিসিটিভি ফুটেজ ও খুনিদের ফেলে যাওয়া ব্যাগই গোয়েন্দাদের ভরসা

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সচিব শওকত আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উল্টো পথে গাড়ি চললে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। উল্টো পথে গাড়ি চলা প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে বিআরটি‘র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। পুলিশকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন উল্টো পথে গাড়ি চালানোর প্রবণতা আগের চেয়ে কমেছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি যানবাহন যা-ই হোক না কেন, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন সময়ে উল্টো পথে আসা গাড়ির ভিডিওচিত্র ধারণ করে মামলা করা হচ্ছে। মানুষ সচেতন হলে আরও কমে আসবে।

 /এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট