X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

চূড়ান্ত বিচারে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ মে ২০১৬, ১১:৩১আপডেট : ০৫ মে ২০১৬, ১১:৩৩

কারাগারের পথে প্রিজন ভ্যানের ভিতরে নিজামী (ফাইল ছবি)

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের আমির ও শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড চূড়ান্ত বিচারেও বহাল রেখেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বৃহস্পতিবার (৫ মে) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ নিজামীর আপিলের রিভিউ খারিজ করে দেন।
বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায়ে নিজামীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ঝুলিয়ে দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়ে রায়ে বলা হয়, আদালত সম্মত হয়েছেন যে, তিনি (নিজামী) যে মাত্রায় হত্যা-গণহত্যা ঘটিয়েছেন তাতে সর্বোচ্চ সাজা না দিলে তা হবে ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা।
২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর আপিলে রায়ের পর্যায়ে আসা সপ্তম মামলা এটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাবনায় হত্যা, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত ২৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন নিজামী। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ নিজামীর করা আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়। সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ায় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
এই আপিলের ওপর ২০১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শুনানি শুরু হয়। ১২ তম দিনে শুনানির শেষ দিনে নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি খণ্ডন করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলম তার জবাব দেন। পরবর্তী সময়ে গত ৬ জানুয়ারি আপিলে ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
আপিলের রায়ে ২, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে পাবনার বাউশগাড়ি, ডেমরা ও রূপসী গ্রামের প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে হত্যা ও ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ; পাবনার ধুলাউড়ি গ্রামে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ ৫২ জনকে হত্যা এবং পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়।
এরপর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে গত ২৯ শে মার্চ আইনজীবীদের মাধ্যমে আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন মতিউর রহমান নিজামী।
২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করার পর একই বছরের ২ অগাস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এরপর ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর জামায়াতের আমিরের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উপস্থাপন করে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ২৮ মে জামায়াত আমিরের বিচার শুরু হয়।

বক্তৃতা দেওয়ার সময় নিজামী
তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক খানের জবানবন্দি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গত বছর ২৬ অগাস্ট এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে সাক্ষ্য দেন মোট ২৬ জন। আর নিজামীর পক্ষে তার ছেলে মো. নাজিবুর রহমানসহ মোট চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। বাকি তিনজন হলেন অ্যাডভোকেট কে এ হামিদুর রহমান, মো. শামসুল আলম ও আবদুস সালাম মুকুল।
২০১৪ সালের ২৪ জুন রায়ের তারিখ রাখা হলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ নিজামীকে হাজির না করায় রায় আবারও পিছিয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ট্রাইব্যুনাল ১ তাকে ফাঁসির দণ্ড দেন।
ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘মতিউর রহমান নিজামী একজন প্রখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত (আসামিপক্ষের দাবি অনুযায়ী) হওয়ার পরও কোরআনের আদেশ ও মহানবীর শিক্ষার পরিপন্থী হয়ে আলবদর বাহিনী গঠন করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিকামী মানুষদের হত্যা ও নিধন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর কর্মকাণ্ডকে সহযোগিতা ও অনুমোদন আদায়।’ আদালত বলেন, “আমরা ধরে নিতে বাধ্য হচ্ছি যে মতিউর রহমান নিজামী ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও সচেতনভাবে এবং স্বেচ্ছায় ‘আল্লাহ’ ও পবিত্র ধর্ম ‘ইসলাম’ এর নামের অপব্যবহার করে ‘বাঙালি জাতিকে’ সমূলে ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন।”
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল গভীর রাতে চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড বা সিইউএফএল জেটিঘাটে ধরা পড়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র। এই অস্ত্র আটক মামলায় ৫০ জনকে আসামি করা হয়। নিজামী ঘটনার সময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। এই রায়ের ফলে মাবতাবিরোধী অপরাধসহ দুটি মামলায় তার মোট দুইবার ফাঁসির আদেশ হলো।

আরও পড়ুন-

 

 



/এমএনএইচ/এফএস/

 




সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: স্পিকার
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: স্পিকার
মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে ২ জন আহত
মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে ২ জন আহত
ইউনিয়ন পরিষদেও প্রশাসক নিয়োগের বিধান হচ্ছে
ইউনিয়ন পরিষদেও প্রশাসক নিয়োগের বিধান হচ্ছে
মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরির নির্দেশ
মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইট তৈরির নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার