‘যে নিজামীর নির্দেশে আমার স্বামী ডা. আলীম চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছিল, তার ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে শুনে আমি বেশ স্বস্তি পাচ্ছি। যেদিন ফাঁসি কার্যকর হবে, সেদিন আরও বেশি শান্তি পাবো।’ মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর চূড়ান্ত রায়ে ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকায় উত্তেজিত কণ্ঠে এভাবেই নিজের অনুভূতি জানালেন শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী। যিনি তার স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে নিজামীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘এই রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। যে আল বদর নেতার হুকুমে আমিসহ ৩০ লাখ পরিবারকে স্বজনহারা হতে হয়েছিল, তাকে এতোদিন বিচারের মুখোমুখি করতে না পারায় গ্লানিবোধ ছিল। আজ তার অবসান হলো।’
শ্যামলী নাসরিন বলেন, ‘বাকি যে যুদ্ধাপরাধীরা আছে, তাদের বিচারও হতে হবে। এ বিচার প্রক্রিয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’
বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘শেষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়া পর্যন্ত যেন বিচার কাজ চলে। সব উন্নয়নের বাধা হলো এ যুদ্ধাপরাধী দল। দল হিসবে এদের বিচার হতেই হবে। যারা জেলখানায় আছে তাদের বাইরে অনেকে আছে। দেশকে তারা অকার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যে সব রাজনৈতিক দল যুদ্ধাপরাধের কথা জেনেও তাদের সমর্থন করছে এবং পাকিস্তানিরা যখন বলছে যুদ্ধাপরাধ হয়নি, তখন সেটাকেও সমর্থন করছে, সেইসব দলেরও বাংলার মাটিতে বিচার হবে।’
আরও পড়ুন: চূড়ান্ত বিচারে নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল
১৯৭১ সালের পর নিজের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বারবার আমি মুষড়ে পড়েছি, কষ্ট হয়েছে। তবে আমি সান্ত্বনা খুঁজেছি আমার মতো আরও যারা আছেন তাদের কথা চিন্তা করে। ভেবেছি, আমিতো একা নই, এ দেশের জন্য ৩০ লাখ শহীদ পরিবার আছে। নিজেকে তাদের একজন মনে করে শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি।’
জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর নির্দেশেই ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এ ক্ষত শুকানোর নয়। তবে কান্না শুকিয়ে গেছে।
নিজামী হলেন দ্বিতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধী, যার বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বলেন, কীভাবে বিজয়ের আগে আগে দেশের সূর্য সন্তানদের ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল বদর বাহিনী। আর নিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিল নিজামীর নির্দেশেই তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর বৃহস্পতিবার (৫ মে) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের রিভিউ খারিজ করে দিলে ফাঁসির আদেশই বহাল থাকলো। এ সংবাদে স্বস্তি ফিরে এসেছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারে।
কেবল শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী নন, প্রতিটি শহীদ পরিবারের অপেক্ষা- কবে দেশ রাজাকারমুক্ত হবে। বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যার মাধ্যমে যারা দেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল, গত ৪৫ বছরে তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে না পারায় তাদের কষ্ট জমে ছিল। ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হলে তারা আশায় ছিলেন আজকের দিনের।
আরও পড়ুন: নিজামীর নির্দেশেই বুদ্ধিজীবী হত্যা: চোখের জলও শুকিয়ে গেছে
/এসটি/এজে