X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক শ্রমিক মা

উদিসা ইসলাম
০৮ মে ২০১৬, ০১:০৯আপডেট : ০৮ মে ২০১৬, ০১:১৫

পোশাক কারখানায় কাজ করা কয়েকজন মা সাভারের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন সালমা। মাসে ওভারটাইম মিলিয়ে দশ হাজার টাকা বেতন পান।তিন ছেলেমেয়েকে রেখে এসেছেন গ্রামে।দু’জন স্কুলে পড়ে, আরেকজন এখনও স্কুলের গন্ডিতে পা রাখেনি। সালমা তার আয়ের বেশিরভাগ অর্থ পাঠিয়ে দেন গ্রামে মায়ের কাছে রেখে আসা ছেলেমেয়েদের জন্য। আর হাতে যা থাকে ঘর ভাড়া দিয়ে নিজে একপেট খেয়ে থাকেন। আর দশ ফুট বাই দশ ফুটের ঘরে তিনজন শেয়ার করে থাকেন। বাকি দু’জনও তাদের সন্তানদের রেখে এসেছেন মায়ের কাছেই।পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন,এ শিল্পের ৮০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পুরুষ। যদিও গত কয়েক দশকে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।
আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশ সফর ফলপ্রসূ হয়েছে: নিশা দেশাই
বেসরকারি সংস্থা এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) জরিপ ও গবেষণার ভিত্তিতে বলছে, পোশাকশিল্পে ৬৫ শতাংশ নারী ও ৩৫ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই তাদের সন্তানদের রেখে আসেন গ্রামের বাড়িতে। কারণ, এখানে সন্তানদের দেখার কেউ নেই। বাসায় রেখে  গিয়ে কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না তারা।
আশুলিয়ায় এক পোশাক কারখানায় কর্মরত জাহানারা বলেন, ছেলের বয়স দু’বছর। বয়স যখন ৬ মাস তখনই রেখে এসেছি মায়ের কাছে। ছোট বোন দেখাশোনা করে। মাতৃত্বকালীন ছুটি পেয়েছিলেন দেড় মাস। এরপর ৬ মাস পূরণ না হওয়া পর‌্যন্ত বোনকে এনে রেখেছিলেন সন্তান দেখাশোনার জন্য। জাহানারা বলেন,বোনকে ঢাকায় রাখতে যে খরচ সেটা টানা আমার পক্ষে সম্ভব না। আর ছেলেকে বাসায় রেখে যাব কার ভরসায়। আমাদেরই অনেকেরই বাচ্চা হারিয়ে যায়। আমাদের বিশ্বাস বাচ্চা চুরি হয়। আর আমাদের বাচ্চা হারালে পুলিশেরও কিছু যায় আসে না। তাই নারী ছেঁড়া ধনকে রেখে এসেছি গ্রামে মায়ের বাসায়। এখন বছরে কয়েকবার দেখা হয়। প্রথম প্রথম আমাকে চিনতেও পারতো না বলে চোখের কোণে জমা জল আঁচলে মুছলেন জাহানারা।
এই মায়েরা সন্তানদের কাছে রাখতে চেয়েও পারেন না।গবেষণা বলছে,সন্তানদের রাখার কোনও সুযোগ তো নেই-ই, এমনকি মাতৃত্বকালীন ছুটি দেয় না ৯০ শতাংশ পোশাক কারখানা। শ্রম আইনে বেতনসহ চার মাসের ছুটি পাওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্ট মালিকরা তা মানছেন না। তাই,সন্তান জন্ম দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই কাজে যোগ দিতে বাধ্য হন সদ্য মা হওয়া অনেক নারী শ্রমিক।সন্তানের দেখাশোনার জন্য কেউ না থাকায় তাদের জীবন শুরুতেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আরও পড়তে পারেন: ২২ মে পবিত্র শবে বরাত
গার্মেন্ট ফেডারেশনের নেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এসব বিষয় নিয়ে এখনও কথা বলি না। সবাই এখন কারখানার নিরাপত্তার কথাই ভাবছে। কিন্তু ন্যূনতম মজুরির হার এতো কম যে,নারী শ্রমিক বা বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া নারীদের সন্তানদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন তৈরি হচ্ছে না। শুরুতেই মা সন্তানকে আলাদা করে দেওয়ার এই দায় আমাদের নিতেই হবে। আপনি দেখবেন এসব মায়ের চোখে মুখে একেবারেই সুখের আভাস নেই। কারণ,আয় করতে গিয়ে তিনি তার পারিবারিক জীবন হারিয়েছেন।

বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,নারী শ্রমিকরা তাদের সন্তানদের নিজেদের সিদ্ধান্তেই রেখে আসেন। আমরা তো ভাল ফ্যাক্টরিগুলোতে ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা রেখেছি। আর বাকিগুলোতে শিশুকে পরিবারের কেউ ফ্যাক্টরিতে নিয়ে এলে ব্রেস্টফিডিং এর ব্যবস্থা থাকে। তিনি বলেন,এর চেয়েও ভাল ব্যবস্থা করা উচিত। কিন্তু নিরাপত্তার জন্য কোনও নারী শ্রমিকের তার সন্তানদের গ্রামে রেখে আসাটা তার একান্তই নিজের সিদ্ধান্ত।

 /এমএসএম/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!