X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

শীর্ষ চার ‘জামায়াত গুরুর’ বিদায়

উদিসা ইসলাম
১১ মে ২০১৬, ০৭:৪৫আপডেট : ১১ মে ২০১৬, ২২:১৬

জামায়াতের প্রথম সারির নেতৃত্বের অবসান

জামায়াতের আমির চিহ্নিত মানবতাবিরোধী অপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি মঙ্গলবার কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে একে একে জামায়াতের গুরু যুগের অবসান ঘটলো।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে যার নাম আসে সবার আগে, সেই গোলাম আযম একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের সাজা ভোগের মধ্যেই মারা গেছেন। এরপর একে একে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মঙ্গলবার আমির মতিউর রহমানের একাত্তরেরর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়। এতে জামায়াতের ‘রাজনৈতিক গুরুর’ একটা অধ্যায়ের শেষ হলো।

জামায়াতের বর্তমান পরিস্থিতিকে একটা যুগের অবসান হিসেবে দেখছেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তিনি বলেন, শীর্ষ এই মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশ রাজাকারমুক্ত হওয়া পথে এগিয়ে চলেছে। একটি কালো অধ্যায়ের অবসান হলো। জামায়াতের নেতৃত্বস্থানীয়দের মধ্যে যারা একাত্তরে অপরাধের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল তাদের মধ্যে মীর কাসেম আলীসহ এটিএম আজহার ও আব্দুস সোবহানের মতো নেতাদের মামলা আপিল বিভাগে রয়েছে।

যুদ্ধাপরাধবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় কর্মীরা বলছেন, দেশ কালিমামুক্ত হতে শুরু করেছে। এই চার নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পরেও তাদের যে দম্ভ ছিল, তার অবসান ঘটলো।

২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর ৯২ বছর বয়সে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় জামায়াতে ইসলামের ‘নাটের গুরু’ শীর্ষ নেতা ও আমির গোলাম আযমের। মৃত্যুকালে তার আরও ৮৯ বছর কারাভোগ বাকি ছিল।

২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে ৯০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের আপিলের শুনানির দিন ঠিক হওয়ার একদিন বাদেই গোলাম আযমের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটার খবর আসে।

গোলাম আজম

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে শান্তি কমিটি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনে নেতৃত্ব দেন গোলাম আযম। আধা সামরিক এসব বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে ব্যাপক হত্যা ও নির্যাতন চালায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও প্রকাশ্যে তদবির চালান এই জামায়াত নেতা।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বপ্রথম জামায়াতে ইসলামীর নেতা কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর।

ট্রাইব্যুনাল-২ এর রায় অনুসারে, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগ ছাড়া বাকি পাঁচটি অভিযোগে অপরাধ প্রমাণিত হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংশ্লিষ্টতা বা সহযোগিতার জন্য, পঞ্চম অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে হত্যা ও ধর্ষণের অপরাধে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। আপিল বিভাগের রায়ে কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করার ব্যাপারে পাঁচ বিচারপতি একমত হলেও মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ভিন্নমত দেন।

জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী

২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর জামায়াতের অন্যতম আরেক নেতা সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। যিনি একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।   মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সেই সময়কার আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। পরবর্তীতে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগও। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদনও খারিজ হলে বিএনপি নেতা যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সঙ্গে একইদিনে মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়।

এর আগে ১২ এপ্রিল ২০১৫ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একাত্তরে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে ১৪৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হলে, তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চারজনের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়া এবং গোলাম আযমের মৃত্যুর কারণে জামায়াতের নেতৃত্বস্থানে নতুন মুখ দেখা দিবে। যদিও একাত্তরের ভূমিকার কারণে দল হিসেবে জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর আইনী কিছু জটিলতায় কার্যক্রম আটকে আছে।

এদিকে জমায়াতের অর্থনৈতিক খুঁটি হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম আলীর আপিলের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে রিভিউয়ের পর্যায়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন: অবশেষে শহীদ পরিবারে স্বস্তি

/এনএস/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নিলামে উঠছে ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল
নিলামে উঠছে ম্যারাডোনার গোল্ডেন বল
ভরিতে সোনার দাম বাড়লো ৪৫০০ টাকা
ভরিতে সোনার দাম বাড়লো ৪৫০০ টাকা
চট্টগ্রাম কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির মৃত্যু
চট্টগ্রাম কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদির মৃত্যু
মতিঝিলে ২০০ মিটার রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত
মতিঝিলে ২০০ মিটার রাস্তা অবৈধ দখলমুক্ত
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট