X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শহরের বাস্তবতা মাথায় রেখেই কাজ করতে হচ্ছে : মেয়র আনিসুল হক

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ মে ২০১৬, ২১:৫৬আপডেট : ২১ মে ২০১৬, ২২:২১

IMG_0724

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, শহরের বাস্তবতা মাথায় রেখেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। কারণ আমাদের এই শহর পুরনো। এখানে অনেক সমস্যা আছে। সবার সহযোগিতা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামী তিন বছর পর আপনারা ভিন্ন ঢাকা দেখতে পাবেন।

অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউন আয়োজিত ‘বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি’তে মেয়র এ কথা বলেন। শনিবার দুপুরে পান্থপথে বাংলা ট্রিবিউন কার্যালয়ে বৈঠকির আয়োজন করা হয়। ‘ঢাকা উত্তর মেয়রের এক বছর’ শীর্ষক বৈঠকিতে মেয়রের কর্মকাণ্ড এবং পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। গত বছরের ৬ মে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আনিসুল হক দায়িত্বগ্রহণ করেন।

বৈঠকিতে আরও অংশ নেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহ উদ্দিন, স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক স্থপতি খন্দকার আনসার হোসেন, বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক ড. কাজী আনিস আহমেদ, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, সিক্স সিজনস হোটেলের পরিচালক কাজী আকিব শামস, বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, সাংবাদিক ও কলামিস্ট প্রভাষ আমিন। টিভি উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা বৈঠকির সঞ্চালনা করেন। সম্প্রচার সহযোগী হিসেবে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে একাত্তর টেলিভিশন। প্রায় পৌণে দুই ঘণ্টার বৈঠকি শেষ হয় বেলা একটায়।

আলোচকরা শহরের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলেন এবং সমাধানে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পাশাপাশি ফেসবুক থেকে পাওয়া নাগরিকদের প্রশ্নও মেয়রের সামনে তুলে ধরা হয়। সাবলীলভাবে এসব প্রশ্নের জবাব দেন মেয়র। সব মিলিয়ে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকি। মেয়র বলেন, নগরীর ফুটপাত হকারমুক্ত করা, যানজট নিরসন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গত ৪৯ বছর কেউ না কেউ কাজ করেছেন। কেন কিছু হয়নি জানি না। আর আমি দায়িত্ব নিয়েছি এক বছর। সবাইকে নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। তবে আমার শহর পুরোনো শহর। এই শহরের বাস্তবতা মাথায় রেখে কাজগুলো করা হবে। তিনি বলেন, রাজধানীর জনসংখ্যা সমস্যার কারণে চাইলেই এটাকে উন্নত শহরগুলোর সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনায় আনা যাবে না। এ শহরে প্রতিদিন বর্জ্যই তৈরি হয় সাড়ে তিন হাজার টন এবং মানুষ সেটা শৃঙ্খলার সঙ্গে ফেলে না।

মেয়রের বৈঠকিতে অংশ নেওয়া অতিথিদের একাংশ

তিনি বলেন, গত পঞ্চাশ বছর ধরে ফুটপাত দখল চলছে। এর পেছনে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এরপরও সবার সঙ্গে আলোচনা করে বড় রাস্তাগুলোকে ক্লিয়ার করে দিয়েছি। শিগগিরই হলিডে মার্কেট চালু হলে ফুটপাত সমস্যা বহুলাংশে কমে যাবে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. সালেহউদ্দিন নগরীর যানজট নিরসনে মেয়রের ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে বলেন, পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়টা সিটি কর্তৃপক্ষের অধীনে নেওয়া হলে কাজ করতে সুবিধা হবে। কারণ এখানেও মেয়রের করণীয় আছে। এই যানজট থেকে নগরবাসী রেহাই পায়নি। বর্জ্য সরাতে ফুটপাতে বিন (ঝুড়ি) স্থাপন করায় মেয়রকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ময়লা ফেলার জায়গা করে দেওয়ায় পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বার্তা পৌঁছাচ্ছে যে, যেখানে-সেখানে আর ময়লা ফেলা যাবে না।  তবে বিনগুলো আরও সায়েন্টিফিক পদ্ধতিতে স্থাপন করলে চুরি কিংবা নষ্ট হবে না।

জবাবে মেয়র বলেন, যানজট নিরসনে মেয়রের আসলে তেমন কিছু করার নেই। এটা দেখার কথা বিআরটিএ এবং রাজউকের। আমরা যেটুকু করতে পারি সেটা হচ্ছে রাস্তা পরিষ্কার। আমরা সেটা করেছিও। এর সুফলও ভোগ করছে জনগণ। বর্তমানে তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর ও গাবতলীসহ যে কয়েকটি রাস্তায় খুব দ্রুততম সময়ে যাওয়া যাচ্ছে, সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের কারণেই সেটা সম্ভব হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউনের প্রকাশক ড. কাজী আনিস আহমেদ বলেন, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাধিক্য আছে, সবাই মানে। বাসিন্দাদেরও সমস্যা হচ্ছে। কোনও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান কিংবা কতটুকু সরাতে হবে, সবটা নাকি কিছুটা এগুলোর সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। রাজউক থেকেও বলা হচ্ছে না- কতটুকু থাকতে পারবে। মানুষকে অবগত করা বা তাদের সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পনার জায়গাও দেখা যায় না। একেক সময় একেক জনের কাছ থেকে আল্টিমেটাম আসে। কিছুই হয় না। অরাজকতা চলতেই থাকে।

মেয়র আনিসুল হক বলেন, আইন অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকবে না। ধানমণ্ডির বাইরের মানুষ ধানমণ্ডিতে আসবে কেন- এমন প্রশ্ন করে মানুষকে আটকে রাখা যাবে না। গুলশান-বনানীতে যে যেখানে পারছেন দোকান তুলে দিচ্ছেন। কোনওটাই হয়তো আইনসিদ্ধ নয়। আমি মনে করি পরিকল্পনা ও চাহিদার মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। সম্ভাবনার জায়গায় মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধান করতে হবে।

ঢাকা ট্রিবিউন সম্পাদক জাফর সোবহান নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চান। এ ছাড়া গাছ কাটা বন্ধ ও শব্দ দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

জবাবে মেয়র বলেন, মেয়রের কাজ হল শহর পরিষ্কার রাখা। এরপরও আমরা অন্য কাজও করছি। তিনি বলেন, শহরের পানি পাইপ ড্রেন হয়ে খালে নামে। কিন্তু খালগুলোর অবস্থা ভাল নেই। কয়েকটি খালে বর্জ্য জমেছে। মাঠও হয়েছে। এ অবস্থায় এবার বৃষ্টির পানি যাতে আটকা না পড়ে সেজন্য বিভিন্ন এলাকায় পাইপ ড্রেন নির্মাণ চলছে। মেয়র বলেন, কোনও গাছই অহেতুক কাটা হয় না। রাস্তাকে নিরাপদ করার প্রয়োজনেই এ কাজ করা হয়। এ ছাড়া আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা গাছ কাটলে তিনটা লাগানোর। আর, শব্দদূষণ নিয়ে শুধু আপনি না, আরও অনেকে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। বিষয়টা নিয়ে সেমিনার করব। দায়িত্ব যারই হোক আমরা উদ্যোগ নেব।

বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ঢাকার দুই মেয়রের এক বছরের কর্মকাণ্ডের ওপর পরিচালিত জরিপ এবং ফেসবুকে পাওয়া মেয়রের উদ্দেশ্যে নগরবাসীর বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেন।

বৈঠকিতে বাংলা ট্রিবিউন এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল(সর্ববামে)

মেয়র বলেন, নতুন পাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসব। এসব এলাকা নিয়ে একটা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। তিনি বলেন, এত টাকা খরচ করে নগরীর সৌন্দর্য বাড়াচ্ছি। আর কিছু লোক পোস্টার, ব্যানার ও দেয়াল লিখন দিয়ে তা নষ্ট করে দিচ্ছে। এটা বন্ধে কিছুদিন আগে যারা এসব করছে তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। এতে কাজ না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, নীতিমালা অনুসরণ করে কেউ নির্দিষ্ট স্থানে ব্যানার-পোস্টার লাগাতে চাইলে আমরা অনুমতি দেই।

সাংবাদিক-কলামিস্ট প্রভাষ আমিন বলেন, নেপথ্যে যাই থাকুক সমস্যা সমাধানে আমরা মেয়রের ভূমিকাই প্রত্যাশা করি। এ সময় বাংলা ট্রিবিউনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জুলফিকার রাসেল বলেন, এতই যদি সমস্যা থাকে তাহলে নির্বাচনের সময় এত প্রতিশ্রুতি দেন কেন?

মেয়র আনিসুল হক বলেন, নির্বাচনের সময় আমি যে ক’টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। এমনকি নিজের জীবনের রিস্ক নিয়েই করছি। কারণ কথা দিয়েছিলাম। নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ঢাকাকে সবুজ করবো, কারওয়ানবাজার অবৈধ দখলমুক্ত করব- কাজও হচ্ছে। আশাকরি আগামী তিন বছরের মধ্যে অন্য ঢাকা দেখবে রাজধানীবাসী।

বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে ঢাকাবাসীর মুখোমুখি ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক

মেয়র বলেন, সবাই মিলে হাতে-হাত মিলিয়ে একত্রিত না হলে মুশকিল। একটা বোতলে অর্ধেক পানি নাকি অর্ধেক খালি- কোনটা দেখতে চান? আমার দায়িত্ব রাস্তায় ইউলুপ বানানো না, কিন্তু আমি বানাতে চেষ্টা করেছি। বিলবোর্ড সরানো আমার দায়িত্ব না কিন্তু আমি সরাচ্ছি। আমার দায়িত্ব না বাসের ব্যবস্থা করা, আমার দায়িত্ব না পাইপের ব্যবস্থা করা। কিন্তু আমি করছি। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজগুলো করছি।

বৈঠকিতে মেয়র আনিসুল নিজেও হক বাংলা ট্রিবিউনের জরিপ রিপোর্ট তুলে ধরেন। বলেন, আমরা নাকি প্রশংসা করি না। কিন্তু আমি তো বিপরীতটি দেখছি। বাংলা ট্রিবিউনের জরিপে দেখা গেছে ঢাকা উত্তরের ৬৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষই সন্তুষ্ট। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ৩০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জরিপ থেকে দেখা যায়- ১৩টি প্রশ্ন নিয়ে সার্ভে হয়েছে। এর মধ্যে সাতটিতেই আমার প্রতি সন্তুষ্ট  ৫৫ ভাগের ওপরে। এটাই আমার ব্যারোমিটার।

 /ওএফ/টিএন/

আরও পড়তে পারেন:

‘আসামি হাজির’বাংলা ট্রিবিউন বৈঠকিতে ঢাকাবাসীর মুখোমুখি ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
তিন লাল কার্ডের ম্যাচে মোহামেডানের খেলতে অস্বীকৃতি, আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী