X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিনা পরোয়ানায় আটক ও রিমান্ড সংশোধনী রায়

পুলিশের যে ৩টি কাজ এখন থেকে বেআইনি

উদিসা ইসলাম
২৪ মে ২০১৬, ২৩:০০আপডেট : ২৪ মে ২০১৬, ২৩:০০

হাইকোর্ট+৫৪ ধারা সাদা পোশাকে আটক, পুলিশ হেফাজতে রিমান্ড কিংবা পরিচয় না দিয়ে কাউকে গ্রেফতার করা এখন থেকে বেআইনি হবে। বিনা পরোয়ানায় আটক ও রিমান্ড সংশোধনী রায় আপিলে বহাল থাকায় সন্দেহভাজনদের প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণে অনেক পরিবর্তন আসবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায়ে যে ১৫ দফা নির্দেশনা ও সাতটি সুপারিশ ছিল, সেই আদেশ আপিলে বহাল থাকায় এখন আর ডিটেনশন (আটকাদেশ) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।
আজ মঙ্গলবার ফৌজদারি কার্যবিধির বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা দেওয়ার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে হাইকোর্টের ১৫ দফা নির্দেশনা বহাল থাকলো- যেখানে কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে নেওয়ার বিধানে পরিবর্তন এনে কিছু নির্দেশনা দেওয়া আছে।
আইনজীবীরা মনে করছেন, এই আদেশের ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। চাইলেই রাজনৈতিক কারণেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার সহজ হবে না। তারা বলছেন, সন্দেহভাজনদের ক্ষেত্রে আচরণ কী হবে সেটা পুলিশকে এখন ভাবতে হবে। পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়লে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত হবেন না।

হাইকোর্টের আদেশ আপিলেও বহাল থাকায় এখন থেকে কাউকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে এবং গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে কারণ জানাতে হবে। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিনা পরোয়ানায় আটক ও রিমান্ডের বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলোতে কিছু সংশোধন থাকবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।

এ বিষয়ে আরও খবর পড়ুন-

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল আপিল বিভাগের রায় মেনে না চললে বিভাগীয় ব্যবস্থা

আদালত থেকে বেরিয়ে রিট আবেদনকারী পক্ষের অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, ‘আজকের রায়ের পর হাইকোর্টের নির্দেশনাগুলো বহালের কারণে সেগুলো মানায় এক ধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হলো। আপিল হওয়ার পর নির্দেশনা স্থগিত না করলেও এতদিন এগুলোর কোনোটিই মানা হয়নি। এতে ১৮ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটলো।’

মঙ্গলবার আদালত রায়ে বলেছেন- ‘আপিল খারিজ করা হলো। হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- ৫৪ ধারা ও ১৬৭ ধারার কিছু বিষয় সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে হাইকোর্ট কয়েক দফা সুপারিশ করেছে। এ বিষয়ে কিছু সংশোধনী থাকবে। আমরা একটি নীতিমালা ঠিক করে দেব।’

এই রায়ের ফলে সন্দেহভাজনদের প্রতি আচরণ বদলাতে পুলিশ বাধ্য হবে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তিনি বলেন, সভ্যতার সংজ্ঞা বদলেছে। এই নির্দেশনা ও সুপারিশগুলো বহাল থাকায় এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। একইসঙ্গে আচরণ সম্পর্কে সতর্ক হওয়ার কারণে চাইলেই রাজনৈতিক কারণেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার সহজ হবে না।

একই কথা উঠে আসে সঙ্গে থাকা এ মামলার অন্যতম আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের কথায়। তিনি আদেশের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, মনে হচ্ছে ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে প্রবেশ করলাম। সময়ের সঙ্গে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসা জরুরি। সেটা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করছি।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে বেসরকারি ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র শামীম রেজা রুবেলকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৩ জুলাই মিন্টো রোডের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রুবেল মারা যান। এ ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধন চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল ওই রিট আবেদনের রায়ে হাইকোর্ট কয়েকটি সুপারিশসহ সিআরপিসি’র ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের নির্দেশ দেন। আর যতদিন আইন সংশোধন না হচ্ছে, ততদিন পুলিশকে মেনে চলার জন্য কয়েকটি অন্তবর্তী নির্দেশনা দেন।

পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় সরকার। ২০০৩ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ সরকারের আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) মঞ্জুর করেন। তবে হাইকোর্টের ওই অন্তবর্তী নির্দেশনাগুলো আপিল বিভাগ স্থগিত করেননি। এরপর আপিল করে সরকার। ১৭ মে আপিলের শুনানি শেষ করে আজ রায়ের দিন ধার্য করে দেন আদালত।

 

নির্দেশনা অনুযায়ী এখন যা করা যাবে না:

ক. আটকাদেশ দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না।

খ. গ্রেফতারের সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।

গ. গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে তার কারণ জানাতে হবে এবং গ্রেফতার ব্যক্তির নিকট আত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে জানাতে হবে।

ঘ. গ্রেফতার ব্যক্তিকে তার পছন্দ অনুযায়ী আইনজীবী ও আত্মীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে।

ঙ. গ্রেফতার ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে কারাগারের ভেতরে কাচের তৈরি বিশেষ কক্ষে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ওই কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকট আত্মীয় থাকতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে হবে।

চ. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নেবেন এবং তাকে দণ্ডবিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে।

/এএইচ/

আরও খবর পড়ুন-

এইচএসসি পরীক্ষা এইচএসসি’র ২৭ মে’র পরীক্ষা ১২ জুন

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফার ভোট কাল
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
তীব্র গরমে পানি চাইতে চাইতেই ট্রাফিক পুলিশের মৃত্যু
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
বাংলাদেশের উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে ফ্রান্স
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা