X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কায় সমাজবিজ্ঞানীরা

শিশুরা বেড়ে উঠছে মানসিক টানাপড়েনে

উদিসা ইসলাম
২৭ মে ২০১৬, ১০:৩৬আপডেট : ২৭ মে ২০১৬, ১০:৪৪

শিশুরা বেড়ে উঠছে মানসিক টানাপড়েনে এই সময়ের শিশুরা এক ধরনের মানসিক টানাপড়েনের ভেতর দিয়েই বেড়ে উঠছে। বিশেষ করে চাকরিজীবী মায়েদের সন্তানরা এই এই মানসিক দ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছে বেশি। তারা চায় না, মা চাকরি করুন। আবার মা চাকরি না করলে সংসারে টাকা খরচের অধিকার কম থাকে তাদের। সেক্ষেত্রে বাবার কাছে থেকে নিয়ে খরচ করতে হয়। শেষপর্যন্ত শিশুরা মায়েদের  চাকরি না করার পক্ষে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে। তবে এ সব বিষয় নিয়ে আজকের শিশুরা মানসিক টানাপড়েনের ভেতর দিয়ে বড় হচ্ছে বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দশ বছরের মেয়ে নুমাইসা। যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠছে। নুমাইসা যখন পেটে, তখন তার মা চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন সন্তানকে সময় দেওয়ার জন্য। বাড়ির আর দুই বউ চাকরি করেন। নুমাইসা চাচিদের যতটা গুরুত্ব দেয়, মাকে ততটা দেয় না। কেন জানতে চাইলে বলে, চাচিরা খেলনা নিয়ে আসেন অফিস থেকে আসার সময়। আর মা? এ প্রশ্নে এই বয়সী মেয়ের উত্তর, মা দেন, তবে বাবার থেকে নিয়ে দেন।
দশ বছরের ছেলে রায়হান। যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠছে। মা চাকরি করেন। স্কুলে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজই কাজের মানুষ করে আর কখনও কখনও মা। স্কুল থেকে এসে কিছু খেতেও রুচি নেই তার। মা বাসায় ফিরে দেখেন গাল ফুলিয়ে আছে তার সন্তান।তার অভিযোগ, আর দশজন বন্ধুর মায়েরা তাদের সময় দেন, স্কুলে রেখে বাইরে বসে থাকেন, তার মা থাকেন না, মানে ভালোবাসেন না।

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, আমরা যখন ভাবছি নারীর বাইরে কাজ করাটা প্রতিষ্ঠা পাবে তখন আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, গত পাঁচ বছরে আমরা পেছনের দিকে হাঁটতে শুরু করেছি। এখন মায়ের চাকরি নিয়ে শিশুদের প্রবল আপত্তি লক্ষণীয় হারে বাড়ছে।

নিউইয়র্কের বার্নার্ড কলেজ সেন্টার ফর টডলার ডেভেলপমেন্টের এক গবেষণা বলছে, শিশুর আচরণের কারণগুলো অভিভাবকদের ব্যাখ্যা করতে জানতে হবে। শিশুর আচরণে বিরক্ত যেমন পরিস্থিতি বদলায় না ঠিক তেমনই শিশুর আচরণ পাত্তা না দিলেও শিশুমনে অপমান বোধ জন্মায়। আবার আজকের শিশু আগামীর প্রজন্ম। ফলে পুরোটা যদি একটা সঠিক পথে না থাকে, শিশুকে যদি আমরা বুঝিয়ে বড় না করি, তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম একটা ভঙ্গুর অবস্থায় পড়বে।

এই গবেষণার সূত্র টেনে বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুর বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়েই যেহেতু সে বিশ্বকে চেনে, সমাজকে চেনে সেহেতু অভিভাবকের দায়িত্ব বেশি এবং অভিভাবকের অভিভাবকত্বও যে শেখার বিষয় তা যত দ্রুত জানবে তত ভালো।

আমাদের দেশে পরিস্থিতি এবং মানসিক গঠনের পরিবর্তন ঘটছিল। তবে হঠাৎই পিছনের দিকে ফেরার প্রবণতা কেন এবং নারীর চাকরি না করলেও তার গৃহস্থালী কাজটাকে শ্রম বিবেচনা করার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে চিন্তার পরিবর্তন সম্ভব কিনা প্রশ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরিন বলেন, এরমধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে। নারী যদি স্বেচ্ছায় ঘরে থাকতে চায় তাহলে শিশুকে শেখানোর দরকার যে তার ঘরের কাজটা গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি বাইরে কাজ করতে জায় সেক্ষেত্রেই প্রথম থেকেই শিশুকে বোঝাতে হবে বাইরে টাকে কেন থাকতে হচ্ছে। এটাও বুঝাতে হবে এটা কোনওভাবেই তাকে গুরুত্ব না দেওয়ার জন্য না।বরং মায়ের চাকরি থাকলে কী কী বাড়তি সুবিধা দেবে সেটা তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে কেয়ার নিয়ে আমরা সতর্ক নই, সেটাও সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

শিশু তার মাকে চাকরিতে দেখতে চাইছে না তাতে সমাজ আবারও আগের অবস্থায় যেতে শুরু করেছে সমাজবিজ্ঞানীদের এমন শঙ্কার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুবা নাসরিন বলেন, সামাজিক অস্থিরতার প্রভাব সব জায়গায় পড়ে। আমরা একটা পাল্টে যাওয়া প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি ফলে নারীদের চাকরি করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিতেও প্রভাব পড়ছে। বাড়ির কর্তা যতক্ষণ পুরুষ তখন সে মনে করে তার আয় যথেষ্ট হলে নারীর চাকরি দরকার নেই, আয় যথেষ্ট না হলে সহায়ক আয়কারী হিসেবে নারীর চাকরির প্রয়োজন আছে। এই ধারণাটাই ভুল। নারীর চাকরি পুরুষের প্রয়াজন অপ্রয়োজনের ওপর না। এটা যতক্ষণ অভিভাবক ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বুঝতে না পারবেন ততক্ষণ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্যটি যাবে না।ফলে আগামী প্রজন্মের কাছে মা চরিত্রটা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য যাওয়ার শঙ্কা আছে। সেটাকে সামাজিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

শিশু বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, পারিবারিক আবহটা এমন হতে হবে, যেন শিশু বুঝতে পারে, মায়েরা বাসার বাইরে কাজ করলে সেটা তাদের অবহেলা করা হয় না। শিশু আইনের সুপারিশমতো প্রতিটি থানায় শুধু শিশু ডেস্ক প্রতিষ্ঠা করলেই হবে না, সেগুলোকে সত্যিকার অর্থে শিশুদের অধিকার রক্ষার কাজে সচল করতে হবে ।

/এমএনএইচ/

আপ: এএইচ

আরও খবর পড়ুন-

শিশুরা বেড়ে উঠছে মানসিক টানাপড়েনে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে বহু শরণার্থীর প্রাণহানির আশঙ্কা

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
একসঙ্গে ইফতার করলেন ছাত্রলীগ-ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের নেতারা
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
শনিবার সকালে আবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ইসরায়েল যা যা অস্ত্র চেয়েছিল সব পায়নি: মার্কিন সেনাপ্রধান
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
ছুটির দিনে নিউ মার্কেটে জনসমুদ্র
সর্বাধিক পঠিত
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ
২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেট্রোরেল লাইনের ওপর থেকে ক্যাবল সরানোর অনুরোধ