X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১
মিতু হত্যাকাণ্ড: বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ

শ্বাসরুদ্ধকর ১৬ ঘণ্টায় যা ঘটলো

আরশাদ আলী
২৬ জুন ২০১৬, ০৬:২০আপডেট : ২৬ জুন ২০১৬, ০৬:২৮

এসপি বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের আলোচিত মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তার স্বামী পুলিশ সুপার (এসপি)বাবুল আক্তারকে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা থেকে শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনা নিয়ে চলে শ্বাসরুদ্ধকর নাটকীয়তা। গভীর রাতে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া দিয়ে শুরু, এরপর জিজ্ঞাসাবাদ ও বাসায় পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত ছিল নাটকীয়তা। জিজ্ঞাসাবাদের এ সময়কালে এসপি বাবুল আক্তারের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন তার স্বজনেরা। জিজ্ঞাসাবাদের কারণ নিয়ে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে বিভিন্ন তথ্য।

নাটকীয়তার শুরু শুক্রবার মধ্যরাতে

শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটার দিকে বাবুল আক্তারকে খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া এলাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে নিয়ে যান পুলিশের দুই কর্মকর্তা। শনিবার সকালে বাবুল আক্তারের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন ও খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল হোসেন তাকে এসে নিয়ে যান। আইজিপি স্যার যেতে বলছেন, এটা বলেই নিয়ে গেলো। ১৫ মিনিটের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হলেও অনেক সময় পরও ফিরে আসেনি। এতেই আমাদের সন্দেহ হয়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তার কিছুই জানায়নি। এরপর আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, তবে পাইনি। যারা নিয়েছিলেন তারা কেউ ফোনও ধরেননি।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আনুমানিক রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাবুল বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় আসেন। এর কিছুক্ষণ পরই বাসায় পুলিশ আসে। জামা-কাপড় পরিবর্তনেরও সুযোগ পায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে পরশুদিন ইফতারের আগে আইজিপি স্যারের বাসায় ইফতারের দাওয়াত ছিল বলে ডেকে নিয়েছিল পুলিশ। আবার ফিরেও আসে।’

বাবুল আক্তারের বাবা ওয়াদুদ মিয়া শনিবার সকালে জানান, ছেলের সঙ্গে কোনওভাবেই তিনি যোগাযোগ করতে পারছেন না। ওসি তার ফোন ধরছেন না। ডিবি অফিসে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ কোনও সহযোগিতা করছেন না। 

জিজ্ঞাসাবাদের কথা প্রথম জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও কিছু জানা না গেলেও স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের প্রথম জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার ৩ আসামিকে চিহ্নিত করতে এবং তাদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও সবকিছু জানানোর সময় হয়নি। তবে শিগগিরই জানতে পারবেন।’

অবশ্য শনিবার বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আসামি শনাক্তের জন্য তাকে নেওয়া হয়েছিল। মুঠোফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘কয়েকজন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের শনাক্তের জন্য তাকে নেওয়া হয়েছিল।’

জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ডিবি কার্যালয়ে

শুক্রবার রাতে বাসা থেকে নিয়ে আসার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে। ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন জানান, মিতু হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের একটি দল ডিবি কার্যালয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। 

ডিবির আরেক কর্মকর্তা পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুব জানান, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার ডিবি কার্যালয়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে প্রায় সারা রাত কথা বলেন। বাবুলের কাছে থাকা তথ্য এবং পুলিশের কাছে থাকা তথ্য তারা মিলিয়ে দেখেন এবং মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ওই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও অন্তত দু’জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান।

বাসায় ফেরা

বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ১৬ ঘণ্টা পর শনিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বাবুল আক্তারকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন জানান, বিকাল ৪টার পর বাবুল তাকে ফোন করে বাড়িতে আসছেন বলে জানান। এরপর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুব আলমের গাড়িতে করে তাকে খিলগাঁওয়ের মাদারটেকের ভূঁইয়াপাড়ায় বাসার কাছে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি হেঁটেই বাসায় পৌঁছান।

মোশাররফ হোসেন আরও জানান, বাবুল তাকে ফোনে বলেছেন তিনি কোনও মিডিয়ার মুখোমুখি হবেন না। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার জন্য তাকেও অনুরোধ করেছেন। ডিবি কার্যালয়ে কী হয়েছে সে বিষয়ে বাবুল তাকে কিছু বলেননি।

যা বললেন বাবুল আক্তার

পুলিশ হেফাজতে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে রাতে মুখ খোলেন এসপি বাবুল আক্তার। তিনি জানান, পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করতে তাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। শনিবার বিকালে তিনি বলেন,মামলার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার জন্য আমাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। আমাকে আটক বা গ্রেফতার কোনও কিছুই করা হয়নি।

জিজ্ঞাসাবাদের কারণ সম্পর্কে বাবুল আক্তার বলেন, আমি মামলার বাদী। অপরাধীরা অনেক তথ্য দিয়েছে , তা নিয়ে ও তদন্তের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতে ডেকে নেওয়া হয়েছিল।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে বাবুল আক্তার দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে সুনাম অর্জন করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর:

/এএ/এমএসএম /

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক