গুলশানের হামলায় শুক্রবার নিহত হয়েছেন যারা তিনদিনেও স্বজনরা তাদের কাছে পাননি। সোমবার আর্মি স্টেডিয়ামে ততক্ষণে আনুষ্ঠানিকতা শেষ। পরিবারের সদস্যরা লাশ নিয়ে যেতে পারবেন জানানোর পর চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠেন অবিন্তার পরিবারের সদস্যদের ভেতর থেকে কেউ একজন। মা রুবা আহমেদ স্টেজের সামনের দিকে গিয়ে সেনাসদস্যদের বলেন, মেয়ের লাশ পরিবারের সদস্যরা ধরবেন। তার চোখে মুখে শঙ্কা এখনও কাটেনি। মেয়েকে যেন পরম আদরে সেখান থেকে নিয়ে যেতে পারলেই বাঁচেন। এমন আঁকুতি করবেনইবা না কেন, মেয়ে বেঁচে নেই, কষ্ট দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে জানার পরও মেয়ের লাশটাকে কোলে নিয়ে, হাতে ছুঁয়ে দেখতে পাননি তিনদিন। রুবা এ্যালিগেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান।
স্টেজ থেকে একটু দূরে রাখা হয় ইশরাত আখন্দ এর লাশবাহী কফিনটি। তার মামা বিচারপতি ওবায়দুল হক, ভাইসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সামনে কফিন খুলে দেখানো হয় সেখানেই। তারপর তাদের জানানো হয়, লাশ গোসল করানো হয়নি, কেবল পরিস্কার করিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেনা কর্মকর্তা যখন লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় এসে বললেন, ভেতরে ডেথ সার্টিফিকেট আছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেতে কিছুদিন সময় লাগবে, তখন যেন একটু কেঁপে উঠলো তার ভাইয়ের দুচোখ। তারপরও বোনের লাশ নিয়ে বৃষ্টিভেজা মাঠ ধরেই হাঁটেন তিনি।
এর আগে এদিকে উপস্থিত ছিলেন নিহত বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা। মেয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, এতো কষ্ট। বাবা নেই ভাবছি আবার মনে হচ্ছে আছেন। নিহতদের পরিবারগুলো কেউ কাউকে চেনেন না কিন্তু তাদের অনুভূতি, আবেগ, পরিস্থিতি সবই আজ এক।
ফারাজ তার দুই বন্ধুকে ছেড়ে আসতে চাননি বলেই তাকে মরতে হয়েছে নৃশংসভাবে। সকালে আর্মি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রীর শোক ও রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার পর বেলা পৌনে একটার দিকে ফারাজের মরদেহ গুলশানে নেওয়া হয়। এবয়সী একজন সন্তানকে হারিয়ে স্বজনদের শোক যেন বাধ মানছে না, কিন্তু তাদের ছেলে যে সাহসী কাজ করেছে সেটুকু ভেবেই সান্ত্বনা খুঁজছেন যেন। ফারাজ এর নানা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লতিফুর রহমান।
সোমবার সকালে আর্মি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী ও সর্বস্তরের জনগণের ভালোবাসা ও শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন গুলশান হামলায় নিহত দেশি-বিদেশিরা। দল মত নির্বিশেষে পুরো জাতি শ্রদ্ধা জানায় বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের। নিহতদের স্মরণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোকের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে এই শ্রদ্ধা নিবেদনের আনুষ্ঠানিকতা হয়। প্রধানমন্ত্রী পায়ে হেঁটে শ্রদ্ধা নিবেদন মঞ্চে গিয়ে কফিনে ফুল দেন এবং কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।এর আগে ভুটান সফরে থাকা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
এপিএইচ/
আরও পড়ুন:
নিহতদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা, লাশ হস্তান্তর
গুলশান হামলা প্রসঙ্গে জয়: এই একবার আমরা ব্যর্থ হয়েছি
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক প্রকৌশলী হাসনাত করিমের ল্যাপটপ জব্দ