রাজধানীর গুলশানে হামলাকারীদের মধ্যে একজন নিবরাস ইসলাম। ধনী পরিবারের উচ্চ শিক্ষিত সন্তান। টার্কিশহোপ স্কুল থেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি; এরপর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মনাশ ইউনির্ভাসিটিতে পড়ছিলেন। চলতি বছরের জানুয়ারির আগ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিবরাসের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, হাসিঠাট্টায় মেতে থাকতেন মিশুক নিবরাস। হামলাকারী হিসেবে নিবরাসকে চিহ্নিত করার পর তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভ হয়ে গেলেও তার বেশ কয়েকটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে ফেসবুকে।
পবন সিংহ নামের একজন টুইটারে একটি ভিডিও রিটুইট করেছেন ৩ জুলাই। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি প্রাইভেটকারে বন্ধুদের সঙ্গে কোথাও যাচ্ছিলেন নিবরাস। নিবরাস ছাড়াও ভিডিওতে আরও দুজনকে দেখা যায়। এসময় নিবরাসকে তার পাশে বসা বন্ধুকে নিয়ে মজা করতে দেখা যায়। সবাই তারা ইংরেজিতে কথা বলছিলেন।
বন্ধুদের নিয়ে হাসিঠাট্টার ভিডিও
Nibras islam one of the terrorist in #DhakaAttack with his friends pic.twitter.com/jQX3DBCcbQ
— Pawan SinghA (@urbanpendu00) July 3, 2016
ফেসবুকে নিবরাসের আরেকটি ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফেসবুক, ইউটিউবে ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটিতে নিবরাস তার এক বন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ভিডিও বার্তায় নিবরাস তার বন্ধুর সুন্দর জীবন ও শিগগিরই দেখা হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বন্ধুর জন্মদিনে নিবরাসের ভিডিও বার্তা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিবরাসের আরেকটি ভিডিওর কথা বলা হচ্ছে যদিও এখন তা আর দেখা যাচ্ছে না। ভিডিওটির একটি ছবি পাওয়া যাচ্ছে ফেসবুকে। ওই ভিডিও ধরে জানা যাচ্ছে, নিবরাস ছিলেন বলিউড নায়িকা শ্রদ্ধা কাপুরের একজন ভক্ত। শ্রদ্ধার সঙ্গে একবার দেখাও করেছিলেন তিনি। সেই দেখা করার মুহূর্তের ভিডিও শেয়ার করে নিবরাস লিখেছিলেন, সম্পূর্ণতা অনুভব করছি। শ্রদ্ধা কাপুরের হাত ধরার কথাও জানিয়েছিলেন নিবরাস।
এমন একটি উচ্চ শিক্ষিত ও হাসিখুশি ছেলে কীভাবে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হয়ে উঠল তা নিয়ে বিস্ময়ের অন্ত নেই দেশের মানুষের। নিবরাসের পরিচিত ও বন্ধুদের মধ্যে যারা ফেসবুকে তার ছবি শেয়ার করে মন্তব্য করছেন তারাও সীমাহীন বিস্মিত। এত হাসিখুশি ও একটা মিশুক ছেলে, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ভাল ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয় ছিল সেই নিবরাস এমন নৃশংস কাণ্ড করতে পারে তা কেউ- ভাবতে অবাক লাগছে তাদের। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রেস্তোরাঁ, মার্কেট কিংবা পার্কে ঘুরতে যাওয়া, পরিচিতদের সঙ্গে উৎসব-অনুষ্ঠানে মেতে ওঠার যে সব ছবি নিবরাসের ফেসবুকে রয়েছে তাতে তার জঙ্গি হয়ে ওঠার আশঙ্কার কথা ভাবাই যায় না।
নিবরাসের এক পরিচিত লিখেছেন, ‘আমার পারিবারিক ঐতিহ্য যেমন, নিবরাসেরও তেমন। ওকে অনেক দিন ধরে চিনি। ও আমার ভাইয়ের বন্ধু ছিল। আমাদের আশপাশের লোকজনই এই রকম হয়ে উঠছে! বিশ্বাস করতে পারছি না।’
চৌধুরী জারিয়া ইসলাম নামে এক তরুণী লিখেছেন, ‘আমি এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। নিবরাস ইসলাম ১ জুলাই, ২০১৬-র হামলাকারীদের এক জন। খুব হ্যান্ডসম, সুদর্শন, শিক্ষিত যুবক সে। এনএসইউ-এর ছাত্র। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। সে এক জন শয়তানে পরিণত হতে পারে কী করে এবং কেন?’
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে রাজধানী ঢাকার গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নিবরাসসহ ৭ জঙ্গি হামলার ২২জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তা, ইতালির ৯, জাপানের ৭, বাংলাদেশি ৩ ও ভারতীয় ১ জন। হামলাকারীরা রাতে বেশ কয়েকজনকে রেস্টুরেন্টে জিম্মি করে রাখে। শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন থান্ডারবোল্টের মাধ্যমে বেশ কয়েকজন জিম্মিকে উদ্ধার করা হয়। এ সময় মারা যান নিবরাসসহ আরও পাঁচ হামলাকারী। এক হামলাকারীকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে আইএসের বরাত দিয়ে সাইট ইন্টেলিজেন্স পাঁচ হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে। পরদিন পুলিশও নিহত ৫ হামলাকারীর ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করে।
/এএ/