তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী দেশে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা সম্পর্কে বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নন। আমাদের জন্য আশার আলো হচ্ছে, দেশে বিপদগামীদের সংখ্যা অনেক কম।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বিভ্রান্ত,বিপথগামী তরুণ-শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, অভিভাবক, প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা ও সরকারের ভূমিকা এবং পাবলিক শিক্ষার সমর্থনে জাতিসংঘের ঐতিহাসিক প্রস্তাব’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
আলোচনা সভার আয়োজন করে ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) এবং জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে সরকার ২০১২ সালে চারটি সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ২০১৬ সালে বড় ধরনের একটি ধাক্কা খাওয়ার পর সরকারের টনক নড়েছে। তিনি বলেন,২০১২ সালে সরকার চারটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এগুলো হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মনিটরিং, মসজিদ মসজিদে অভিন্ন খুতবা পাঠ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে জঙ্গিবাদ নিয়ে আলোচনা এবং জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম মদিনা সনদ ও গৌতম বুদ্ধের বাণী বা নীতিবাক্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে। কিন্তু এখনও তা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তাহলে শিক্ষার্থীরা ধর্ম সম্পর্কে কী শিখবে!
তিনি বলেন, যে পরিবারের আয় ৪০ হাজার টাকা কিন্তু খরচ হচ্ছে লাখ টাকা তাহলে ওই পরিবারের সন্তান কী মূল্যবোধ শিখবে। আজকের সমাজের অবক্ষয়ের জন্য এ সব দায়ী।
কোচিং বাণিজ্যের কঠোর সমালোচনা করে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন,তথাকথিত কিছু শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের নামে টাকার পেছনে ছুটছেন। ওই সব শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী মূল্যবোধ বা নৈতিকতা শিখবে!
তিনি বলেন, রাজনীতির নামে কাদা ছোড়াছুড়ির ফাঁকে আমাদের তরুণরা বিভ্রান্ত হচ্ছে। আর তখনই অসুর তৈরি হচ্ছে। তাই, আজকে রাজনীতিবিদের কাছে প্রশ্ন করার সময় হয়েছে,কেন অপরাধীদের বিচার হচ্ছে না?
রাজনীতিবিদের সমালোচনা করে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই যে নিরীহ বাউলদের প্রতি অত্যাচার হচ্ছে প্রশাসন কী করছে? দু’চারটি বিচার হলেই তো জনগণ খুশি হয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য আজকে দেশের এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি বলেন,আকাশ সংস্কৃতির জন্য আমাদের সমাজে নোংরা সংস্কৃতি প্রবেশ করছে। তরুণরা নোংরামি শিখছে।
রাশেদা কে চৌধুরী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন,আমাদের জন্য আশার আলো হচ্ছে, এই বিপদগামীদের সংখ্যা অনেক কম। আর বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নন।
আলোচনায় বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হক বলেন,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির যখন রগ কাটা শুরু করলো তখনও জনগণ সচেতন হয়েছে। এখন আবার আইএস নামে গলা কাটা হচ্ছে।
বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত এবং দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে একটি মহল মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আইএইচডি’র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম সিদ্দিকী,এনজিওকর্মী মনিরা আফরোজ,ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ।
আরও পড়তে পারেন: তেলের দাম কমালেও বাজারে প্রভাব পড়েনি: প্রতিমন্ত্রী
আরও পড়তে পারেন: তিন জেলায় চার পুরোহিতকে হত্যার হুমকি
এসআইএস/এবি/এমএসএম/