X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাকে যা শোনালেন কাদের সিদ্দিকী

সালমান তারেক শাকিল
০৫ আগস্ট ২০১৬, ০৬:২২আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০১৬, ০৬:৪৫

খালেদা জিয়া ও কাদের সিদ্দিকী

বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠককে সাংবাদিকদের সামনে ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা’ আখ্যা দিলেও খালেদা জিয়াকে আদতে একটু কড়া কথাই শুনিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন পরবর্তী বিএনপি প্রধানের ‘অকৃতজ্ঞতা’কে মনে করিয়ে দিয়ে বঙ্গবীর বলেছেন, ওই নির্বাচনে আপনাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ না থাকলেও বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এটি আপনার নির্বাচন বর্জনকে বৈধতা দিয়েছিল। যদিও আপনি ওই সময় কোনও দলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাননি।

বৃহস্পতিবার রাতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়াসের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণে তার বাসায় গিয়েছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী  ও তার দলের কয়েকজন সিনিয়র সদস্য। ওই বৈঠকে জনতা লীগের ৫ জন ও বিএনপির ৫-৬ জন নেতা অংশ নেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া জনতা লীগের দুজন সিনিয়র সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে খালেদা-কাদের সিদ্দিকীর আলোচনার বিষয়ে জানান। গুলশানের বৈঠক শেষে রাতে কাদের সিদ্দিকীর মোহাম্মদপুরের বাসায় জরুরি বৈঠকও করে জনতা লীগ। এই বৈঠকে শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটায় অনুষ্ঠেয় সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য নির্ধারিত হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া জনতা লীগের এক নেতা জানান, পুরো আলোচনায় বিগত নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ, জাতীয় ঐক্যে জামায়াত বাধা, অন্যান্য বাম ও ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির অবস্থানসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। দুই ঘন্টার বৈঠকের মধ্যে খালেদা-বঙ্গবীরের ওয়ান-টু ওয়ান দশ মিনিটের আলোচনাও ছিল। তবে একক ওই বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জনতা লীগের দুই নেতা কিছুই জানাতে পারেননি। তাদের ভাষ্য, তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে, এ নিয়ে বঙ্গবীর কোনও কথা বলেননি।

বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির নেতারাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের কাছে জানতে চাইলে তারা নীরবতা প্রদর্শন করেন।

যদিও বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে বঙ্গবীর সাংবাদিকদের কাছে বলেন, দীর্ঘসময় আলোচনা হয়েছে। সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। তার বহু কথা। আমি খুশি হয়েছি। মতের অমিল থাকতেও খুশি হয়েছি। জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে তার সঙ্গে তফাৎটা বেশি নেই। আমি জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করব না। বঙ্গবন্ধুর মতের মানুষ হয়ে আমি মরতে চাই।

বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, পুরো আলোচনায় খালেদা জিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে জনতা লীগের নেতাদের কথা শুনেছেন। এমনকি সরাসরি বিএনপির আচরণের সমালোচনা করলেও তিনি চুপ ছিলেন। পুরো বৈঠকে আন্তরিক ছিলেন বিএনপি প্রধান। জনতা লীগের নেতার ভাষ্য, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) বেচেন কম, কিনেন বেশি। তার সমালোচনা হলেও তিনি ধীরস্থির ছিলেন।’

বৈঠকে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বিগত নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পর হঠাৎ করেই পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ অন্যান্য দলকে বিস্মিত করেছে। এ নিয়ে তার ভাষ্য ছিল, ‘মিনিমাম সম্মানটুকু বিএনপির পক্ষ থেকে দেখানো হয়নি। একটি চিঠি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। অথচ অন্য দলগুলো নির্বাচন বর্জন করেছিল। তবে সাফল্য কিন্তু আপনার ঝুড়িতেই গেছে।’

সূত্রের ভাষ্য, বঙ্গবীরের অনুযোগের উত্তরে খালেদা জিয়া ‘এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেই’ বলেছেন, আসলে এটা দরকার ছিল। কিন্তু আমরা তো ধন্যবাদ দিয়েছি মিডিয়ার মাধ্যমে।

সূত্রের দাবি, ২০১৫ সালে জানুয়ারি থেকে দেওয়া অবরোধ আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও তোলা হয়নি। এটা কেন, জানতে চাওয়া হয়েছে কাদের সিদ্দিকীর পক্ষে। সূত্রটি আরও জানায়, মূলত জামায়াতকেই ঐক্যের পথে বাধা হিসেবে দেখিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী। এটি সাংবাদিকদের সামনেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ‘মতের অমিল হলেও খুশি হয়েছি’ বলেছেন বঙ্গবীর।

জানা গেছে, শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মূলত কাদের সিদ্দিকী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেবেন। জামায়াত বিষয়ে তার আপত্তির কথাও তিনি গণমাধ্যমে তুলে ধরবেন।

বৈঠকে কাদের সিদ্দিকী জামায়াতকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেন, সিপিবি, বাসদ, জাসদ রবের সঙ্গে কথা বলতে খালেদা জিয়াকে অনুরোধ জানিয়েছেন। জামায়াত থাকলেও এই দলগুলোও যে ঐক্যের প্রশ্নে একমত হবে না, এ কথাও তিনি খালেদাকে শোনান।

বৈঠকসূত্র জানায়, জনতা লীগ মনে করে জঙ্গিবাদ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তিনি নিতে পারেননি। বরং এড়িয়ে গেছেন। এই ইস্যুতে খালেদা জিয়া সবার সঙ্গে বসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফলে, খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ইউনিটি উইথ ডিফারেন্ট মেনে নিয়েই ঐক্য করতে হবে। তবে জনতা লীগ মনে করে, সরকারবিরোধী শুধু নয়, জাতীয় চিন্তার জায়গা থেকেই প্রগতিশীল দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

সূত্রের দাবি, খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর আলোচনায় এমাজউদ্দীন প্রসঙ্গটিও ছিল। মঙ্গলবার এমাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে বুধবার বিএনপি মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনকে সহজভাবে নিতে পারেনি জনতা লীগ। এ কারণে বুধবার ফখরুলের সংবাদ সম্মেলনের পর জনতা লীগের নেতারা কাদের সিদ্দিকীকে বৈঠক প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানায়। যদিও কাদের সিদ্দিকী ফখরুলকে কথা দিয়েছেন এবং খালেদা জিয়াকে ফোনে কথা দিয়েছেন উল্লেখ করে চা চক্রে অংশ নেন বৃহস্পতিবারে।

জনতা লীগের ওই সূত্রটির দাবি, আমরা কালকেই বঙ্গবীরকে বলেছি, বিএনপি জামায়াতকে ছাড়বে না। বৈঠকে গিয়ে লাভ নেই।

সূত্রের দাবি, খালেদার আমন্ত্রণে না গেলে মির্জা ফখরুল ফেঁসে যেতেন। তাকেই দল দায়ী মনে করত। কারণ তিনিই দাওয়াত নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর বাসায় গিয়েছিলেন।

জনতা লীগের এক সিনিয়র নেতা বলেন, এক্ষেত্রে এমাজউদ্দীন আহমদ তো ভুল কিছু বলেননি। ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা এমাজউদ্দীন আহমদ ব্যাখ্যা করেছেন। আমরা তো স্যারকে সম্মান করি। তার জ্ঞান, তার বয়স সব মিলিয়ে তিনি এখন বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে প্রবীণ।

এসব বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আলোচনায় কী হয়েছে, আমাদের কী প্রস্তাব, এসব বিষয়ে শুক্রবার সকালে বঙ্গবীর ব্রিফ করবেন।

 /টিএন/

এ সংক্রান্ত আগের খবর: খালেদা জিয়ার কাছে আসতে বাধা পেয়েছি: কাদের সিদ্দিকী

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়