X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১
সংসদে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত

বঙ্গবন্ধুর খুনি ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২০:৪৫আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ২২:০৫

জাতীয় সংসদ



জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের ও দণ্ডপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সব ধরনের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে গৃহীত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে সংসদ সদস্যদের কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হয়।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক’ শিরোনামের এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন। পরে সংসদ মনিরুল ইসলাম ও সানজিদা খানমের সংশোধনী প্রস্তাব থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত অপরাধীদের বিষয়টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর তা কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। এ সময় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া সংসদে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
এ সম্পর্কিত আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে বাঙালির জাতির যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে তা আজও বন্ধ হয়নি। কিন্তু এটা এমন একটি বিষয়, যেখানে ইমোশন প্রকটভাবে কাজ করে। কাজেই বক্তব্য দিতে গিয়ে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে গেলে মাফ করে দেবেন। এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে চোখের পানি আসবেই। ৬১ জন সাক্ষীর মধ্যে পিডব্লিউ ১, পিডব্লিউ ২, পিডব্লিউ ৩ এবং পিডব্লিউ ৪ যা বলে গেছেন, তা যেকোনও মানুষ শুনলে তার চোখের পানি ঝরবেই।’
সংসদে উত্থাপিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি সময়োপযোগী বলে মনে করেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যে প্রস্তাব আনা হয়েছে, তার আগেই মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে যারা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি, তাদের ফিরিয়ে আনতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। গত ৩১ মে সেই টাস্কফোর্সের সভা হয়েছে।’
ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, ‘সভায় দণ্ডপ্রাপ্তদের নামে রক্ষিত সব সম্পত্তি খুঁজে বের করার আলোচনা হয়। কিন্তু প্রস্তাবটি যেন কার্যকর হয়, তার জন্য বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না। কারণ আলোচনার বিষয়টি খবরের কাগজে প্রকাশিত হলে যে সম্পত্তির পেছনে আমরা আছি, তার কাগজ বদল হয়ে যেতে পারে। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে হয়েছে। কী হয়েছে, আর কী হয়নি, তা আমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত দেখেছি- এই দেশে বঙ্গবন্ধু বলা যবে না, বঙ্গবন্ধুর নাম নেওয়া যাবে না। তাকে শেখ মুজিবুর রহমান বলতে হবে।’
এ সময় আইনমন্ত্রী সম্প্রতি মারা যাওয়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদি মুহিতুল ইসলামের দেওয়া সাক্ষ্যের কিছু অংশ তুলে ধরেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাংলাদেশে সম্পত্তি রাখার অধিকার নেই। এটা বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে। সেই আলোকে তাদের যেখানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি পাওয়া যাবে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। আইনের ধারা বজায় রেখে যাদের ফাসি কার্যকর করা হয়ে গেছে তাদের সম্পত্তি কিন্তু আইন মাফিক বাজেয়াপ্ত করতে হবে। কারণ আইনত যেদিন রায় কার্যকর করে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সেই মুহূর্ত থেকে তাদের সম্পত্তি তাদের ওয়ারিশের কাছে চলে গেছে। কাজেই এখন এই রায় ও আইনের মাধ্যমে এই সম্পত্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যারা পলাতক, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে নতুন কোনও আইনের প্রয়োজন হবে না। সেজন্য টাস্কফোর্স আগে পলাতক আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই আমি স্বস্তির সঙ্গে বলতে পারি, সংসদে যে প্রস্তাবটি উঠেছে, তার কাজ শুরু হয়েছে। যারা পলাতক, প্রথমে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করব। পরে আইনের মাধ্যমে আমরা অন্যদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করব। কারণ আমরা সবাই বিশ্বাস করি, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পারে, তাদের বাংলাদেশে সম্পত্তি থাকার অধিকার নেই। যিনি বাংলাদেশকে জন্ম দিয়েছেন, তাকে যারা হত্যা করেছে, তারা যেমনি বাংলাদেশে সম্পত্তি রাখতে পারে না, তেমনি যারা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে তারাও বাংলাদেশে সম্পত্তি রাখতে পারে না। সেজন্য মানবতাবিরোধী অপরাধে যাদের সাজা হয়েছে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য আইন করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আইন এই সংসদে এনে এখানে পাস করানোর জন্য উপস্থাপন করব।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার নির্মম ঘটনা বর্ণনা করে হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী আনিসুল হক বলেন, ‘সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলে কি রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে? আমরা যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকব, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন এই রক্তক্ষরণ হবে। কারণ এটা এমন একটা আঘাত যা কোনও ডাক্তার সেলাই করে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে পারবে না। হয়তো বাংলার মানুষ বিচার পেয়েছে। কিন্তু বাংলার কলঙ্ক মোছন হয়নি। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মারার পর যে কলঙ্ক বাংলাদেশে লেপন হয়েছে তা কোনও দিন মুছবে না। আমরা যত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করি, যত মানুষকেই ফাঁসি দেই, তারপরও হবে না। তাই আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি গ্রহণ করা উচিত।

 আরও পড়ুন: বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধারা খেতাববঞ্চিত: আ ক ম মোজাম্মেল হক

/ইএইচএস/এমও/এনএমএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভাসানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: একে একে চলে গেলেন ৩ জন
ভাসানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: একে একে চলে গেলেন ৩ জন
পাকিস্তানে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতে নিহত ৩৯
পাকিস্তানে ভারী বৃষ্টি ও বজ্রপাতে নিহত ৩৯
রাতে নামছে বার্সা-পিএসজি
রাতে নামছে বার্সা-পিএসজি
জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিকশিত করতে যে শর্ত দিলো চীন
জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিকশিত করতে যে শর্ত দিলো চীন
সর্বাধিক পঠিত
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি