X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

মেডিক্যালে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস: সরকারের নিরাপত্তা ‘জোক অব দ্য ইয়ার!’

জাকিয়া আহমেদ
০১ অক্টোবর ২০১৬, ০৭:৫৪আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৬, ০৭:৫৪

 

প্রশ্নপত্র ফাঁস (প্রতিকী ছবি) এবারের মেডিক্যাল কলেজের প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। পরিবর্তন এসেছে, প্রশ্নপত্র তৈরির কৌশলসহ পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্ন পৌঁছানোসহ। গঠিত হয়েছে, ওভার সাইট কমিটি। নিয়োগ করা হয়েছে, মডারেটর।

এমনকি প্রশ্ন ফাঁসের গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থাও। তারপরও শিক্ষার্থীদের মনে আশঙ্কা, এবারও হয়ত প্রশ্ন ফাঁস হবে। কোটি কোটি টাকার মাধ্যমে প্রশ্ন চলে যাবে শিক্ষার্থীদের হাতে। অযোগ্যরা জায়গা করে নেবে চিকিৎসা সেবার মতো মহৎ পেশায়। তারা বলছেন, সরকারের (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) এ ঘোষণা ‘জোক অব দ্য ইয়ার।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিক্যালে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেডিক্যাল প্রশ্ন ফাঁস রোধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বললেও ইতোমধ্যে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর প্রশ্ন ফাঁসের চক্রান্তে পড়ে এরই মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকও ভুয়া প্রশ্ন হাতে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন।

আগামী ৭ অক্টোবর সারাদেশে অনুষ্ঠিত হবে মেডিক্যাল কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা। এবার ৩১ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৯০ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার জন্য ফরম তুলেছেন যা কিনা গত শিক্ষাবছরের চেয়েও বেশি। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৮টি সেন্টারের ৩৭টি ভেন্যুতে। আগামী ২ অক্টোবর থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ইস্যু করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত শিক্ষাবছরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও সেটি আমলে নেয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চারজনকে আটক করে র্যা ব। তাদের কাছ থেকে মডেল প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্রসহ ১ কোটি ২১ লাখ টাকার চেক জব্দ করা হয়। আটক চারজনের মধ্যে জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া নামে একজন ছিলেন যাকে ২০১১ সালেও আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযোগ আছে, জসিম অধিদফতরের ছাপাখানার এক কর্মীর খালাতো ভাই। ওই কর্মীকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে দুবার ছাপাখানা থেকে বদলি করা হলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে বারবার ছাপাখানায় ফেরত আসেন বলে জানা গেছে।

‘মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে অভিযোগ আসবে বলে আমি মনে করি না’ মন্তব্য করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, সোস্যাল মিডিয়া এবার মনিটর করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অহেতুক প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ালে, বিভ্রান্তি ছড়ালে সাইবার সিকিউরিটি আইন আছে, সে আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

কিন্তু সরকারের এ পরিকল্পনাকে ‘জোক অব দ্য ইয়ার’ বলে অভিহিত করেছেন তুর্য নামে একজন মেডিক্যাল শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করতে চাই, এবার প্রশ্ন ফাঁস হবে না। কিন্তু ভরসা পাই না। প্রতিবারই তারা এটা বলে; কিন্তু শেষরক্ষা হয় না।’

এবারের মেডিক্যাল কলেজে প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পাঁচজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং একজন শিক্ষককে নিয়ে একটি ওভার সাইট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষা পর্যবেক্ষণে গঠিত হওয়া ওভার সাইট কমিটিতে রয়েছেন- প্রযুক্তিবিদ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জাফর ইকবাল। তিনিসহ ওভারসাইট কমিটির সদস্য ও একজন মডারেটর পুরো বিষয়টির পর্যবেক্ষণ করবেন, যা যা প্রি-কশন (পূর্ব সতর্কতা) নেওয়া দরকার, প্রশ্নফাঁস রোধে তারা সবই করবেন।’

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিজস্ব ছাপাখানায় প্রশ্নপত্র ছাপানো হলেও এবার মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর প্রশ্ন ছাপানোর পুরো প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকবে। তবে ছাপাখানার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার বিষয় পর্যবেক্ষণ করবেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা। মেডিক্যালের প্রশ্নবাহী ট্র্যাংকের ভেতরে থাকবে ট্র্যাকিং ডিভাইস। অধিদফতরের নির্দেশনা ছাড়া কিংবা নির্দেশনার আগে যদি কেউ এই প্রশ্নবাহী ট্রাংকের তালা খোলার চেষ্টা করেন, তাহলে ডিভাইসটি কর্মকর্তাদের সংকেত দেবে।

অধিদফতর থেকে আরও জানা যায়, এবার ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র থাকবে একইসঙ্গে। ছাপাখানায় প্রশ্ন তৈরির পর সেখানেই সেগুলো সিলগালা করে আটকানো হবে। এমনকী, প্রশ্ন পরিবহনের সময় যিনি সঙ্গে থাকবেন, তিনি স্মার্টফোনে কিছু সময় পরপর সিলগালার ছবি তুলে পাঠাবেন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের। এ ছাড়া প্রশ্ন বহনের সময় বিশেষ ডিভাইসে ট্র্যাকিং করা হবে। নিরাপত্তায় কোনও সমস্যা হলে কেন্দ্রে সিগন্যাল চলে আসবে।

একই সময়ে সব ভেন্যুতে প্রশ্নের তালা খুলবেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিট আগেই সবাইকে প্রবেশ করতে হবে। ১০ মিনিটের মধ্যে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। এছাড়া সারাদেশের সব সিভিল সার্জন অফিস ও কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ প্রোভাইডারদের সোস্যাল মিডিয়া মনিটর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি প্রস্তুতি-২০১৬-১৭’ নামে একটি গ্রুপে দেখা যায়, ‘আই অ্যাম সজিব’ নামের একজন লিখেছেন, ‘প্রতিবারেই বলা হয়ে থাকে যে, এবার প্রশ্ন আউট হবে না। কিন্তু পরে দেখা যায়, প্রশ্ন আউট। যদি প্রশ্ন আউটই হয়ে যায়, তাহলে আর আমাদের মেডিক্যালে পড়ার কী দরকার আর কোচিং করার-ই দরকার কী?’

আজাদ নামে এক শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের এমন লেকচার গতবারও শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস করে ঠিক করিনি। বাংলাদেশে সবই সম্ভব। এবার যদি প্রশ্ন আউট হয়, তারপর কী দায়ভার আপনি নেবেন?’

/জেএ/এবি/আপ-এসএনএইচ/

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী