X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

১০ টাকার চাল কারা খায়?

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ অক্টোবর ২০১৬, ২০:২৮আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:৩৩

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে হতদরিদ্রের তালিকায় ব্রহ্মগাতি গ্রামের প্রবাসী ছেলের বাবা জালাল শেখের নাম আছে। এই তালিকায় নাম আছে একই পরিবারের চারজনের। এরা হলেন আব্দুর রহিম, শাহীন, রুনা ও রিনা। নাম আছে ওই গ্রামের বহুতল ভবনের মালিক মো. শহীদ ও ধনী হিসেবে পরিচিতি কালাম সরদারের।

চাল দুর্নীতির বিরুদ্ধে গ্রামবাসীর প্রতিবাদ

দিঘলিয়া উপজেলা সদরের মানিক মিয়া ও অশোক কুমার অভিযোগ করেন, ডিলাররা ১০ টাকা কেজির চাল ১৩ টাকা করে নিচ্ছেন। কেউ ৩০ কেজি চাল নিলে ৩০০ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের বিভার গ্রামের বাসিন্দা আকমল। তিনি লালমনিরহাট বিদ্যুৎ বিভাগে সুইসবোর্ড অ্যাটেনডেন্ট (এসবিএ) হিসেবে ভালো বেতনে চাকরি করেন। আছে আধাপাকা বাড়িসহ আরও সহায় সম্পত্তি। ওই গ্রামের কার্ড বঞ্চিত কয়েকজন দুস্থ ব্যক্তির অভিযোগ, ‘শুধু আকমলই নয়, এখানকার সাবেক ইউপি সদস্য মমতাজ উদ্দিন, গত নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী আজিজুল ইসলাম, দেলা মিয়াসহ অনেকেই ১০ টাকায় চাল পাচ্ছেন। অথচ আমরা পাচ্ছি না।’   

জেলার হাতীবান্ধার উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হেলাল উদ্দিনের ছেলে সাজু ইসলামের নাম রয়েছে হাতে লেখা তালিকায় (ক্রমিক নং-৫৩)। তাদের রয়েছে চালের আড়ত ও মুদি দোকান। আছে দুটি ট্রাক, পাকা বাড়িসহ আরও সম্পত্তি। নতুন তালিকায় একই ওয়ার্ডের (ক্রমিক নং-৪৪) মোকছেদুলের ছেলে ওবায়দুলেরও নাম রয়েছে। সে কার্ড পাওয়ার যোগ্য হলেও তালিকার ৯৭ নম্বর ক্রমিকে আরেকবার তার নাম লেখা হয়েছে ‘ওবায়দার’ ও বাবার নাম ‘মকছুল’ হিসেবে। যদিও দুই ক্রমিকেই জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (৫২১৩৩৯৫৭৬৭৮৮৯) একই। ওবায়দুল ও ওবায়দার যে একই ব্যক্তি তা নিশ্চিত করেছে ওই ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র।

মাগুরা সদর উপজেলার কুছুন্দী ই্উনিয়নের চেয়ারম্যানের তৈরি করা ৬০ ভাগ কার্ড ভুয়া হিসেবে দাবি করেছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ পরিষদের সব সদস্য। কুছুন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানসহ অন্যরা অভিযোগ করেন, হতদরিদ্রদের ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণের জন্য সম্মিলিতভাবে একটি তালিকা করার কথা। কিন্তু কুছুন্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাশেম মোল্লা ইউনিয়নের কোনও সদস্যের সঙ্গেই আলাপ না করে নিজের আত্মীয়স্বজন ও ভুয়া লোকজনের নাম দিয়ে ২৩৫ জনের একটি তালিকা করে ডিলারের মাধ্যমে চাল দিচ্ছেন। যদিও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আবুল কাশেম মোল্লা।

এরকম অভিযোগ রয়েছে দেশের সব জেলায়। সেপ্টেম্বরে হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ শুরুর পরপরই অভিযোগের পাহাড় জমতে শুরু করে সব জেলায়।  চাল বিক্রির ডিলারশিপে অনিয়ম ও দলীয় প্রভাববিস্তার, হতদরিদ্রের তালিকায় অনিয়ম ও দুর্নীতি, তালিকায় স্বচ্ছল, প্রবাসী ও স্বজনদের পাশাপাশি ডিলারদের নাম, চাল কালোবাজারে বিক্রি, চালের পরিবর্তে নামেমাত্র টাকা গছিয়ে দেওয়া, ঘুষ, ওজনে কম দেওয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে।

‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’ স্লোগানের মাধ্যমে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দেশের প্রত্যেক উপজেলায় শুরু হয় চাল বিতরণে জন্য দরিদ্রদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ। কিন্তু শুরুতেই অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তালিকা প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা জনপ্রতিনিধিরা। দলীয় পরিচয় ও ভোটের কর্মী হিসেবে প্রাধান্য দিয়ে স্বচ্ছল, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী এমনকি বিদেশে কর্মরতদের পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করে চাল বিতরণ শুরুর অভিযোগ রয়েছে। সরকার যে উদ্দেশ্যে কর্মসূচি চালু করেছে তা নস্যাৎ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এসব অভিযোগ স্বীকার করে বলেছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডিলার, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাচ্ছেন তারা। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ও কর্মসূচি সফল করার আশ্বাস দেন তিনি।   

কুড়িগ্রামে ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড না পাওয়া গুচ্ছগ্রামবাসীদের একাংশ

যত অভিযোগ

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বেশিরভাগ অভিযোগই ডিলারদের বিরুদ্ধে। হতদরিদ্রের তালিকা তৈরি থেকে চাল বিক্রির প্রতিটি পর্যায়েই দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. হতদরিদ্রের পরিবর্তে তালিকায় অনেক স্বচ্ছলের নাম দেওয়া হয়েছে।

২. ডিলারদের স্বজন ও কাছের লোকজনের নাম তালিকায় স্থান পেয়েছে।

৩. হতদরিদ্র হিসেবে যারা তালিকায় নাম উঠাতে পেরেছেন, কোনও কোনও জায়গায় তারা চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

৪. তালিকায় নাম ওঠানো বা চাল পাওয়ার জন্য ডিলারদের ঘুষ দিতে হচ্ছে।

৫. কালোবাজারে বেশি দামে এই কর্মসূচির চাল বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

৬. এক ব্যক্তির নাম একাধিকবার এবং   একই পরিবারের একাধিক লোকের নাম তালিকায় ওঠানোর অভিযোগ রয়েছে।

৭. ওজনে কম দেওয়া হচ্ছে।

মাগুরারিএকটি অভিযোগপত্র

৮. শহরের রাজনৈতিক নেতারা প্রভাব খাটিয়ে গ্রামে তাদের কাছের লোকদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

৯. নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট গুদামে চাল রাখার কথা থাকলেও ডিলাররা চাল রাখছেন যেখানে-সেখানে।

১০. ডিজিটাল পদ্ধতির পরিবর্তে কোথাও কোথাও চাল দেওয়া হচ্ছে বালতিতে মেপে।

১১. দলীয় কোন্দলের কারণে হতদরিদ্রের তালিকা পরিবর্তন হচ্ছে।

১২. প্রশাসনের তরফ থেকে তদারকির অভাব।

১৩. চাল পাওয়ার পরপরই দালাল ফড়িয়ারা হতদরিদ্রদের কাছ থেকে কিছু বেশি টাকায় চাল কিনে নিচ্ছে।

১৪. নির্ধারিত সময়ের পরে এমনকি এক মাস দেরিতেও কর্মসূচি শুরুর অভিযোগ রয়েছে।  

দুর্নীতির যত কৌশল

আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জনিয়েছেন, জেলায় তালিকাভুক্ত অনেককে চাল দেওয়া হচ্ছে না। আবার অনেককে চালের পরিবর্তে ৩০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে বরাদ্দ চালের মধ্যে দুয়েকটি ইউনিয়নে সামান্য কিছু বিতরণ হলেও বেশিরভাগ চাল ডিলারসহ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কালোবাজারে চলে গেছে।  

খুলনায় ১০ টাকার চাল বিতরণ

নওগাঁয় ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণে দলীয় নেতাকর্মী ও চেয়ারম্যান মেম্বারদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে বেশি। তালিকায়  হতদরিদ্রদের পরিবর্তে রয়েছে তাদের আত্মীয় স্বজনের নাম, যারা বেশিরভাগই স্বচ্ছল।

বরগুনায়ও হতদরিদ্রের তালিকায় স্বচ্ছলদের নাম থাকার অভিযোগ উঠেছে। তালিকা প্রণয়নে জটিলতার কারণে সদর উপজেলার গৌরিচন্না ইউনিয়নে বন্ধ রয়েছে চাল বিক্রয়। এক ব্যক্তির একাধিক নাম, দলীয়করণ, রেশন কার্ডের পরিবর্তে স্লিপের মাধ্যমে চাল বিক্রি, ওজনে কম দেওয়াসহ রয়েছে নানা অভিযোগ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। একইসঙ্গে কর্মসূচিতে দলীয় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও রয়েছে।

বরিশালে ডিলার নিয়োগেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় মাপে চাল কম দেওয়ার অভিযোগ করছেন চাল ক্রয়কারী অনেকেই। নিয়মানুযায়ী অধিকাংশ ডিলারদেরই নেই চাল গুদামে রাখার জন্য পর্যাপ্ত গুদাম ঘর। যে কারণে চাল রাখা হচ্ছে কাপড়ের দোকান, পরিত্যক্ত টিনের ঘর এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়গুলোতে।

হবিগঞ্জে প্রভাব খাটিয়ে ডিলারশিপ নিয়োগ পাওয়ার এবং ডিলাররা চাল কালোবাজারে বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বঞ্চিত হয়েছে অসহায় ও দরিদ্র মানুষ। এবিষয়ে জেলা আদালতে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।

ঝালকাঠিতে হতদরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে দলীয় বিবেচনা, স্বজনপ্রীতি, উৎকোচ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে ডিলারদের বিরুদ্ধে। জেলার প্রায় এলাকায়ই এমন অভিযোগ। রাজাপুর উপজেলার গালুয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মোস্তফা ও ডিলার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদকের ছেলে মো. রফিক শরীফের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগীরা। ইউপি সদস্য মোস্তফা ও ডিলারের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে প্রতি কার্ডে ১০০- ২০০টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যারা টাকা দিতে পেরেছেন, শুধু তারাই ১০টাকা দরের চালের কার্ড পেয়েছেন। এছাড়া, ডিলার রফিক শরীফের বিরুদ্ধে জনপ্রতি  ৫ কেজি চাল কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। দুই মাস না পেলেও কার্ডে লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে চাল দেওয়া হয়েছে।

যে কুড়িগ্রাম থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির শুরু, সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মাধ্যমে স্বচ্ছল পরিবারের মাঝে অধিকাংশ চালের কার্ড বিতরণের। এমনকি জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার দু‘টি আবাসন প্রকল্পে আশ্রয় নেওয়া ভূমিহীন হতদরিদ্ররা এই কর্মসূচির সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছেন। চাল বিতরণে অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন খোদ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. নজির হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরাও।

লালমনিরহাটে হতদরিদ্রের বদলে কার্ড পেয়েছেন ব্যবসায়ী, ট্রাকের মালিক, চাকুরীজীবীসহ স্বচ্ছলরা। দলীয় কোন্দলে তালিকা পরিবর্তনের অভিযোগ উঠেছে হাতীবান্ধা উপজেলায়।

মাগুরা সদর উপজেলার কুছুন্দী ই্উনিয়নের চেয়ারম্যানের হাতে করা ৬০ ভাগ কার্ড ভুয়া হিসেবে দাবি করেছেন ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ পরিষদের সব সদস্য।  দলীয় কর্মী বিবেচনায় ডিলার নিয়োগ, পৌর এলাকার হতদরিদ্র ব্যক্তিরা চাল না পাওয়া, ওজনে কম দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

নেত্রকোনায় অসাধু ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হতদরিদ্রদের নামের তালিকায় চাকরিজীবী, ডিলারসহ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের স্ত্রী-সন্তানের নামও যুক্ত করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হতদরিদ্রদের কাছ থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রেশন কার্ড দেওয়ার নাম করে নগদ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, দেশের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মুখে ভাত তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। দেশের সব উপজেলায় এই কর্মসূচি চলছে। এই চাল নিয়ে যাতে কোনও দুর্নীতি না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে কর্মসূচির এক মাস পার হতে না হতেই অনিয়মের হাজারো অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।  

এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার ১০ টাকা কেজিতে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। প্রতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর এই পাঁচ মাস কর্মসূচির আওতায় চাল পাবে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। তারা ডিলারের কাছ থেকে কার্ডের মাধ্যমে এই চাল পাবেন।

প্রতি কেজি চাল ৩৭ টাকা দরে কিনে ১০ টাকা দরে হতদরিদ্রদের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রতি কেজি চালের ওপর ২৭ টাকা ভর্তুকি প্রদান করছে সরকার।  এর ফলে সরকারকে প্রতি বছর ২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।

দেশব্যাপী ১০ টাকা কর্মসূচিতে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেশকিছু অনিয়ম পেয়েছি। সেগুলোর বিরুদ্ধে কঠিনভাবে অ্যাকশন নেবো। কোনও অবস্থায় কারও খামখেয়ালিতে কারও দুর্নীতিতে সরকারের এ কর্মসূচি নষ্ট হতে দেবো না। যেসব জায়গায় যাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি তাদের নামে মামলা হয়েছে। অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা ও গ্রেফতার চলবে। প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে মনিটরিং টিম কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘অভিযোগগুলো আসছে সাধারণত ডিলারের বিরুদ্ধে, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

মন্ত্রী জানান, ‘কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, নীলফামারী- এসব জেলা থেকে  অভিযোগ পাওয়া গেছে।’

যশোরে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ চাল বিক্রি

যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে

অভিযোগের কারণে ব্যবস্থাও নিচ্ছে বিভিন্ন জেলার স্থানীয় প্রশাসন। খুলনায় কয়েক জায়গায় চাল বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। এক ডিলার দম্পতির বিরুদ্ধে মামলাসহ ডিলারশিপ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

মুন্সীগঞ্জের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম কবির  জানান, ‘মাঠ পর্যায়ে তদারকি নেই, এই অভিযোগ ঠিক নয়।  প্রতিটি ডিলার সেন্টারে ট্যাগ অফিসার আছেন।’

যশোরে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ রায়হান কবীর বলেন, ‘চাল বিতরণের পর বিভিন্ন স্থান থেকে ধনী মানুষদের কার্ড দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ আসা শুরু করে। সেই কারণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের কার্ড আটকে দেওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট ডিলারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন আলা বললেন, ‘তড়িঘড়ি করে তালিকা প্রস্তুত করায় কিছুটা ভুল ত্রুটি হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা সংশোধন করে প্রকৃত দুস্থদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

ঝালকাঠিতে রাজাপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শাহ মো. রফিকুল ইসলাম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

জয়পুরহাটে সম্প্রতি অনিয়ম রোধে জেলার ৩২টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার, সচিব, ডিলার ও তদারকি কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন জেলা প্রশাসন।

নেত্রকোনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. আব্দুর রহিম ১০ টাকার চাল নিয়ে অনিয়মের  সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ’

মাগুরা, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বেশকিছু জেলায় স্থানীয় প্রশাসন ১০ টাকার চাল কর্মসূচির বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

/এফএস/এপিএইচ/আপ-এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘দরিদ্ররা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না’
‘দরিদ্ররা সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না’
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
হজ পালন করতে গিয়ে আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ