X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজউকের অথরাইজড অফিসারদের গণপূর্তমন্ত্রীর তিরস্কার

ওমর ফারুক
১৭ অক্টোবর ২০১৬, ০২:৪৫আপডেট : ১৭ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:০৪

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজধানীতে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের কাজ ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় রাজউকের ‘অথরাইজড অফিসারদের’ তিরস্কার করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘এই ব্যর্থতা আর সহ্য করা হবে না। যারা অবৈধ নির্মাণ কাজ ঠেকাতে না পারবেন, তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোসহ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অনুমোদনহীন নির্মাণ কাজ নিয়ে রাজউকের বিরুদ্ধে সমালোচনা দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে মন্ত্রী নিজেও বারবার সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছেন। কিন্তু কোনও সুফল আসছে না। এ অবস্থায় রবিবার দুপুরে রাজউকের অথরাইজড অফিসারদের তলব করেন মন্ত্রী। সভা করেন তাদের নিয়ে। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহিদ উল্লাহ, রাজউক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী, সদস্য-উন্নয়ন প্রকৌশলী আবদুর রহমান ও সদস্য-উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ মো. আসমাউল হোসেন এবং বিভিন্ন জোনের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় একজন অথরাইজ অফিসার তখন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা বাস্তবায়নের অন্তরায় হিসেবে লোকবল সংকটের কথা বলেন। জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘লোকবল সংকট আছে, এটা ঠিক। কিন্তু যারা আছেন তারা কী করছেন? জনবল ১৩ জন বলেন, আর ৬০ জনই বলেন, এটা বড় কথা না। আন্তরিকতা থাকলে সংকটের মধ্যেই অনেক কিছু করা যায়। আন্তরিকতা না থাকলে ৬০ জনেও কাজ হবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার উন্নয়ন সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, সেটা দেখার দায়িত্ব আপনাদের। কিন্তু যা দেখছি, ঢাকার কোনও মা-বাপ নেই। মনে হয় না আপনারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। ১০ তলার জায়গায় ১৫ তলা হচ্ছে। আপনারা বাধা দিচ্ছে না। সেদিন দেখলাম নদীর তীরে হাইরাইজ ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তারা কি অনুমোদন নিয়েছে? এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে রাজউককে ঢেলে সাজাতে হবে। অফিস বাদ দিয়ে আমি নিজেই বিভিন্ন এলাকা ঘুরবো। দেখব কয়টা ভবনের অনুমোদন আছে। যদি আমাকেই এসব কাজ করতে হয় তাহলে অথরাইজড অফিসার, ইন্সপেক্টরদের দরকার কী?’

তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমি ফোন করে বারিধারায় একটা হোটেলের কাজ বন্ধ করেছি। এটা তো অথরাইজড অফিসারদের করার কথা। কাজ করলে ঠিক মতো করুন। সরকার যদি হেল্প না করে আমাকে বলুন, তখন তো বলতে পারব। যদি কখনও দেখেন পুলিশ পাওয়া যাচ্ছে না, তখন পুলিশ ছাড়াই অভিযান চালান। প্রয়োজনে মার খাবেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে খবর আছে, আপনারা কে কী করেন। রাজউকে চাকরি করে নিজস্ব অফিস খুলে বসেছেন। সেখান থেকে নকশা তৈরি করে দেন। ওই নকশা রাজউক থেকে পাস করিয়ে দেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের নিজ নিজ দায়িত্ব আন্তরিকভাবে পালন করতে হবে। নদীরপাড়ে যেসব ভবন হচ্ছে, সেগুলোর অনুমোদন আছে কিনা সাত দিনের মধ্যে সার্ভে করবেন। অনুমতি না থাকলে বন্ধ করে দিন। যেসব ভবন নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণ হচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। অনুমোদনহীন ভবন নোটিস ছাড়াই ভেঙে দিন। প্রতীকী অর্থে হলেও কয়েকটি ভাঙুন, দেখবেন অন্যরা সচেতন হবে। বৃহস্পতিবার ভাঙ্গা শুরু করবেন, শেষ করবেন শনিবার। এরপর তারা কোর্টে যাক।’

রাজউক চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘ভবন নির্মাণে আইন কার্যকর করতে না পারায় সব অথরাইজড অফিসারের কাছ থেকে ব্যাখ্যা তলব করুন। এরপর যাদের এলাকায় অননুমোদিত নির্মাণ কাজ হবে, সেসব অফিসারের নামে কারণ দর্শানোর নোটিস দিতে হবে।’

সচিব মো. শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘রাজউকের অনেক ভালো কাজ আছে। কিন্তু কিছু কারণে সেসব সুনাম ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। একজন ইন্সপেক্টর (ইমারত পরিদর্শক) রেজিস্ট্রার খাতায় এন্ট্রি করে ফিল্ডে গেলেন কিনা, তা মনিটরিং করতে হবে। নকশা প্রণয়নকারী ইঞ্জিনিয়ারদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে; না হলে অননুমোদিত নির্মাণ ঠেকানো যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘এখন যেসব ভবন নির্মাণ হচ্ছে সেগুলোর প্রতিটির জন্য অক্যুপেন্সি সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করতে হবে। অক্যুপেন্সি সার্টিফিকেট না থাকলে যাতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়া হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে চিঠি দিতে হবে।’

অথরাইজড অফিসারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মেধা, দক্ষতা ও সততা দেখাতে না পারলে উপরে উঠতে পারবেন না। চাকরি এ পর্যন্তই থাকবে। আপনাদের মেধা ও দক্ষতা আছে। এবার সততা দেখতে চাই।’

রাজউক চেয়ারম্যান এম বজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমি তো দেখি ইন্সপেক্টররা (ইমারত পরিদর্শক) মাঠেই যান না। দায়িত্ব নেওয়ার পর রেজিস্ট্রার চালু করেছি। এই রেজিস্ট্রার কি আপনারা মানেন? রাজউকে যোগ দেওয়ার পর আমি সবাইকে বলেছি, আগে কী হয়েছে সেটা ভুলে যাই। এখন থেকে যেন কোনও ফাকা স্থানে অননুমোদিত ভবন নির্মাণ না হয়। আপনারা আইন প্রয়োগ করুন।’

একজন অথরাইজড অফিসার বলেন, ‘ভবন মালিকদের উচ্ছেদ নোটিস দিলে তারা আদালতে গিয়ে স্টে অর্ডার নিয়ে আসেন। এ কারণে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।’ রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্টে অর্ডার পর্যন্ত আপনারা যান কেন? ভবনটি যখন নির্মাণ হয় তখন দেখেন না?’

তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্প কখন আসবে, কেউ জানেন না। ব্যক্তি জীবনেও কখন ভূমিকম্প আসবে কেউ জানে না। মন্ত্রণালয়ে ডেকে এনে এভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে- আমাদের জন্য এটা দুঃখজনক। ভবিষ্যতে যাতে মন্ত্রণালয়ে এসে জবাবদিহি করতে না হয়, সে জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করুন।’

/ওএফ/এআরএল/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
লোকসভা নির্বাচন: মণিপুরে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?