X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের টাকা জায়েজ!

নুরুজ্জামান লাবু
১৮ অক্টোবর ২০১৬, ২২:৪৯আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০১৬, ০৯:২৫

তেজগাঁওয়ে আটক সাত জেএমবি সদস্য

ওদের কাছে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের টাকা জায়েজ! এজন্য তারা চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই করে। এখান থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ নিজেদের জন্য খরচ করে। আরেক অংশ ব্যয় করে সাংগঠনিক কার্যক্রমের জন্য। কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করে আসছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্যরা। শুধু চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই নয়, চোরাকারবারী, জাল টাকার ব্যবসাসহ নানা রকম অপরাধ কর্মকাণ্ডকেও জায়েজ দাবি তাদের। সোমবার রাতে তেজগাঁও এলাকা থেকে জেএমবির সাত সদস্যকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব তথ্য জানিয়েছে। মঙ্গলবার তাদের আদালতে সোপর্দ করে ছয় দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে জেএমবির নেতাকর্মীরা কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দিয়ে কর্মীদের দিয়ে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইসহ নানারকম অপরাধ কর্মকাণ্ড করিয়ে থাকে। তাদের হিসেবে এসব টাকা কথিত জিহাদের পথে বা ইসলাম কায়েমের পথে খরচ করা হলে তা বৈধ হয়ে যায়। একারণে সংগঠনের তহবিল বাড়াতে নিয়মিত চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই করে থাকে জেএমবির সদস্যরা।’

সিটি সূত্র জানায়, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের টাকা গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের মামলা পরিচালনার কাজে ব্যবহার করে জেএমবি সদস্যরা। একই সঙ্গে তারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহের মাধ্যমে কারাবন্দি গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের হামলা চালিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। সূত্র জানায়, তহবিলের টাকা দিয়ে জেএমবির সাংগঠনিক কার্যক্রমও চালানো হয় বলে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে জেএমবি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই কাজে ঝুঁকে পড়ে সংগঠনের সদস্যরা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা তহবিলের পাশাপাশি আরও বেশি তহবিল বাড়াতে তারা চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই শুরু করে। এক্ষেত্রে সদস্যদের কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা দেয় তারা। তাদের ভাষ্য মতে, ‘কাফের-মুশরেকদের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে  জিহাদ বা ইসলাম কায়েমের জন্য খরচ করা জায়েজ।’ জঙ্গি প্রতিরোধে নিয়োজিত শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, ‘কারাবন্দি জেএমবির আমির সাইদুর রহমানও জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবি সদস্যদের চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের কথা জানিয়েছিল।’

দীর্ঘ দিন ধরে জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করে আসা সিটির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে জেএমবি সদস্যরা গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও কার্যালয়ে গিয়ে ডাকাতি বা চুরি করতো। কখনও এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের কাছ থেকেও অর্থ ছিনিয়ে নিতো। পরবর্তীতে তারা জাল টাকার ব্যবসা ও চোরাকারবারীতেও জড়িয়ে পড়ে।’

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র থেকে পাওয়া জেএমবির বর্তমান আমির সালাউদ্দিন সালেহীনের ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক একটি জবানবন্দি থেকে জানা গেছে, সাংগঠনিক তহবিল বাড়ানোর জন্য ২০০৩ সালে তারা ময়মনসিংহের মুক্তগাছায় ব্র্যাক অফিসে ডাকাতি করে। ওই বছর জানুয়ারি মাসে তারা মুক্তগাছার চেঁচুয়া গ্রামে ব্র্যাক অফিস থেকে তিনটি মোটরসাইকেল, একটি ফ্রিজ, ঔষধ ও কিছু অফিস স্টেশনারি সামগ্রী ডাকাতি করে। পরবর্তীতে এসব জিনিসপত্র বিক্রি করে পাওয়া অর্থ সংগঠনের তহবিলে জমা দেয়।

সূত্র জানায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর নরসিংদী জেলার বাসাইলের একটি পাঁচ তলা ভবনে ডাকাতি করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি হয়। এসময় হাতে নাতে চার ডাকাত ও পরে আরেক ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তারা নিজেদের জেএমবি সদস্য বলে স্বীকার করে। সংগঠনের তহবিলের জন্য তারা ডাকাতি করতে গিয়েছিল বলেও জানায়। এর আগে গত বছর ২১ এপ্রিল ঢাকার উপকণ্ঠ আশুলিয়ার কাঠগড়ায় বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের শাখায় ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা। ডাকাতদের গুলি ও ছুরির আঘাতে নিহত হন ৮ জন। পরে জানা যায়, ওই ডাকাতির সঙ্গে জেএমবি সদস্যরা জড়িত ছিল। ওই বছরের ৭ জুন ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ৯ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিচার শেষে গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৬ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এসব ছাড়াও দিনাজপুরে একটি পেট্রোলপাম্পসহ বিভিন্ন স্থানেও জেএমবি সদস্যরা ডাকাতি ও ছিনতাই করেছে বলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুসন্ধানে জানা গেছে।

ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নরসিংদীর ডাকাতির ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে তারা গত জুন মাসে রাজধানীর বনানী এলাকায় একটি ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জেএমবি সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পান। এছাড়া, চলতি মাসে তেজগাঁও এলাকায় একটি ডাকাতির সঙ্গেও জেএমবি সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। পরে সোমবার রাতে তেজগাঁও এলাকার একটি বাসা থেকে সাত জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

সিটির একজন কর্মকর্তা জানান, একজন জাল টাকার ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তাকে মোটিভেটেড করা হয় এবং সে  জাল টাকা বিক্রয়ের একটি অংশ জেএমবির তহবিলে যোগান দিতো। জেএমবির তহবিলে অর্থ দিলে এই অবৈধ কাজে কোনও ‘পাপ’ হবে না বলেও তাকে বোঝানো হয়। ওই কর্মকর্তা জানান, এভাবে জেএমবি সদস্যরা জাল টাকা ও চোরাকারবারের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ে।

উল্লেখ্য, সোমবার রাতে গ্রেফতারকৃত সাত জেএমবি সদস্য হলো- আবুল কাসেম ওরফে কাউসার ওরফে কাসু (২০), নাজমুল হাসান ওরফে নয়ন ওরফে নরেশ (২৩), রাশেদ (২৭), সেন্টু হাওলাদার ওরফে জাহিদ (২৬), আবুবক্কর সিদ্দিক ওরফে আকাশ ওরফে শুভ্র (২০), আবদুল বাসেদ (২২) ও জুয়েল সরকার ওরফে সৌরভ ওরফে সরকার (৩২)।

এপিএইচ/

আরও পড়ুন:
জেএমবিতেও 'জিহাদ ম্যারেজ'!

আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনার কথা জানালো আকলিমা

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা