X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক দুর্ঘটনার ‘সাইড ইফেক্ট’ নজরের বাইরে

উদিসা ইসলাম
২৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:৩১আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০১৬, ০৩:৪০

সড়ক দুর্ঘটনা

রিকশাচালক রকিবুল হাসান তার স্ত্রী ও দুই মেয়েসহ চারজনের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি রাজধানীতে রিকশা চালালেও তার পরিবার থাকে রংপুরে। ২০১০ সালে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে না গিয়ে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে থেকে যান রাজধানীতেই। ঈদের পরদিন রাতে রিকশা নিয়ে গ্যারেজে ফেরার পথে একটি পিকআপের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ছিকটে পড়ে যান। এ দুর্ঘটনায় রকিবুলকে তার বাম পা  হারাতে হয় । এরপর চিকিৎসা আর নিজেকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টায় কেটে যায় এক বছর। এই খরচ সামলাতে না পেরে রকিবুলের ৯ বছরের মেয়েকে ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজে দেওয়া হয়। আরেক মেয়েকে নিসন্তান এক  আত্মীয়ের কাছে দিতে বাধ্য হন।

সড়ক দুর্ঘটনায় কেবল রকিবুলের পরিবারই নয়, এরকম করে তছনছ হয়ে গেছে হাজারো পরিবার। আহত-নিহতের সংখ্যা বারবার সামনে আসলেও আহত ব্যক্তিদের জীবন ও তাদের পারিবারিক সংকট নজরের বাইরে থেকে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা খরচ চালানো, আয় উপার্জন না থাকায় নাবালক সন্তানকে কাজে দেওয়া, কখনও কখনও সন্তানকে কোনও নিসন্তান দম্পতির কাছে দিয়ে দেওয়াসহ পারিবারিক জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।

এসব ‘সাইড-ইফেক্ট’ হতে পারে বিবেচনায় তাদের জন্য নেই কোনও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। সড়ক পরিবহন দুর্ঘটনা ও এর প্রভাব নিয়ে কাজ করেন যারা তারা বলছেন, এখন নতুন করে এ বিষয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে।

ইকোনমিক বার্ডেন অফ রোড ট্রাফিক ইনজুরিস অন হাউসহোল্ড ইন সাউথ এশিয়া শীর্ষক এক গবেষণা বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে পঙ্গুত্ব ও মৃত্যুর চতুর্থ প্রধান কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনাকে বিবেচনা করা হবে। গতবছর কেবল সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় এক দশমিক ৩৬ মিলিয়ন লোক প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা পঙ্গুত্বের এক পঞ্চমাংশ ঘটনা ঘটে দক্ষিণ এশিয়াতে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইন্সটিটিউট এর এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার ২১%। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে এ পরিমাণ মাত্র ৪%।  বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃতদের শতকরা ৬০% কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অংশ, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে এবং ২১ ভাগের বয়স ১৬ বছরের নিচে।

এই ৬০ শতাংশ পরিবার পরবর্তীতে কিভাবে টিকে থাকে, আগামী গবেষণা সে বিষয়ে হওয়া জরুরি উল্লেখ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিবারের কর্মক্ষম ব্যক্তি হঠাৎ যদি আয় অনুপযোগী হয়ে পড়েন, তাহলে পারিবারিকভাবে টিকে থাকার লড়াই কয়েকগুণ কঠিন হয় এবং আহত ব্যক্তির বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষাও ক্ষীণ হয়ে যায়। কারণ, তিনি তখন স্বাভাবিকভাবেই নিজেকে বোঝা মনে করেন।’ এ ক্ষেত্রে করণীয় প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিবেচনায় কর্মজীবী পুরুষের আয়হীন হয়ে পড়ায় যে হতাশা, সেটা দূর করতে কাউন্সিলিং দরকার। আর তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। সেটা দেওয়া হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং এর আওতায় থাকতে হবে। ’

গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কায় জরিপ চালানো হয়েছে। তাদের বক্তব্য, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও স্বাভাবিক পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব বাড়িতে আহত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন, তাদের খরচের হার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। মাসিক ওষুধ আর কাউন্সিলিং এর পাশাপাশি সেই কর্মক্ষম ৬০ শতাংশের হঠাৎ আয় না থাকাটা তাদের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ লেবার স্টাডিজের সহকারী নির্বাহী পরিচালক সুলতান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও দুর্ঘটনাতেই নিহত ব্যক্তির পরিবার যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, আহত ব্যক্তির পরিবার তার চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হন,বিষয়টি এমন নয়। আমাদের এখানে এখনও ক্ষতিপূরণের হিসাব নিহত না জীবিত সেটার ওপর নির্ভর করেই করা হয়। কিন্তু যিনি আহত অবস্থায় বেঁচে থাকলেন তার জীবনে কর্মক্ষমতার যে সময়সীমা ছিল, সেটা ধরে তাকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। ফলে তিনি যেমন হেনস্তার শিকার হন, তার পরিবারের সদস্যরাও একইসঙ্গে ভুক্তভোগী হন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার বিচারের দাবি তোলার পাশাপাশি ‘সাইড ইফেক্ট’গুলো ঠিকমতো চিহ্নিত করে, সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণে নতুন আইন প্রণয়ন করা জরুরি।

/ইউআই / এপিএইচ/



 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ