X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসাধীন ‘আসামির’ হাতকড়া নিয়ে পুলিশের নেই স্পষ্ট ধারণা

উদিসা ইসলাম
১৪ নভেম্বর ২০১৬, ০২:২১আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০১৬, ০৮:০৯

গোবিন্দগঞ্জের ঘটনায় আহত সাঁওতাল হাতকড়া হাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ‘আসামি’র হাতে হাতকড়া দেওয়া যায় কিনা, এ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই পুলিশের। তারা নিজেদের মতো করে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। অপরদিকে এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মীদের রয়েছে ক্ষোভ। তাদের ভাষ্যমতে বিষয়টি অমানবিক।

চিকিৎসাধীন আসামির হাতকড়া বিষয়ে পুলিশ সদস্যরা বলছেন, গ্রেফতার হলেই তার হাতে হাতকড়া পরাতে হয়। কেউ কেউ বলছেন, নারী ছাড়া সবধরনের আসামিকেই হাতকড়া পরানোর কথা আইনে বলা আছে। আবার বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মুমূর্ষু রোগী বা গুলিবিদ্ধ কোনও চিকিৎসাধীন আসামির হাতে হাতকড়া পরানোর আইনত বাধ্যবাধকতা আছে কিনা তা তাদের জানা নেই। আইনে আলাদা করে এর উল্লেখও নেই। তবে পুলিশ আইনে গ্রেফতার হওয়া আসামিকে আদালতে বা থানার বাইরে নেওয়ার সময় হাতকড়া পরানোর কথা বলা আছে।

এদিকে তেজগাঁও শিল্প অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দণ্ডবিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, বয়স্ক, নারী, শিশু ও মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে হাতকড়া পরানো যাবে না। যারা সক্ষম ব্যক্তি নন, তাদের ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত আসামি হলেও হাতকড়া পরানোর কোনও বিধান নেই। এটা করা যাবেই না।’

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দ্বিজেন টুডু

এ বছরই একাধিক ঘটনার প্রেক্ষিতে, পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলার পর আহতদের চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতকড়া পরিয়ে রাখা নিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হয় পুলিশ।

বিষয়ে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, বিষয়টি অমানবিক।  এতে রাষ্ট্রের অসহিষ্ণুতাও প্রমাণিত হয়।

চিহ্নিত কোনও আসামি নন, ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্ত নন, কেবল জমির দাবি নিয়ে আন্দোলন থেকে সৃষ্ট একের পর একটা ঘটনায় মামলা হামলার শিকার সাধারণ মানুষকেও হাসপাতালে হাতকড়া পরিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

৬ নভেম্বর গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকল এলাকার মাদারপুর ও জয়পুরে সাঁওতাল পল্লীতে পুলিশ ও দুর্বৃত্তদের হামলার ঘটনায় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করে চারজন মুমূর্ষুকে গ্রেফতার দেখিয়ে হাসপাতালের বেডে কোমরে রশি বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

ছররা গুলিতে গুরুতর আহতদের একজন, দ্বিজেন টুডু, বর্তমানে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার দুপুর ৩ টায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১৫ নম্বর সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত চরণ সরেন বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার কোমরে রশি দিয়ে হাসপাতালের বেডের সঙ্গে বেঁধে রাখা, হাতে রয়েছে হাতকড়া। পাশেই দুই পুলিশ সদস্য তাকে পাহারা দিচ্ছেন।

বাঁশখালীর ঘটনায় আহত এলাকাবাসী হাতকড়া হাতে চিকিৎসাধীন

এর আগে গত এপ্রিলে এস আলম গ্রুপের উদ্যোগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে উচ্ছেদ ও জীবিকা হারানোর শঙ্কায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। উচ্ছেদের ভয় আর এস আলম গ্রুপের কাছে জমি বিক্রি করে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ হারান কমপক্ষে ৪ জন। আহতদের চট্টগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি করার পর থেকে হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়।

যিনি হাসপাতালের বেড থেকে একা নেমে এক পা হাঁটার শক্তি রাখেন না, তাকে কেন হাতকড়া পরিয়ে রাখা হয়ছে, এমন প্রশ্নে পুলিশ বলছে, ‘তারা গ্রেফতার হওয়া আসামি। সে কারণে তাদের হাতকড়া পরানো হয়েছে।

সব আসামির ক্ষেত্রেই এ ধরনের হাতকড়া পরিয়ে রাখেন কিনা, জানতে চাইলে কর্তব্যরত পুলিশের এএসআই আসাদ বলেন, ‘তা সবসময় করা হয় না। আমরা পুলিশ লাইন থেকে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। আমাদের যেভাবে বলা হয়েছে, আমরা সেভাবেই রেখেছি।’ তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্রেফতার হলেই তার হাতে হাতকড়া পরাতে হয়,  তবে নারীদের হাতকড়া পরানো যাবে না বলে পুলিশ আইনে উল্লেখ আছে।’

এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে প্রতিশোধের মামলা ও এই নড়তে না পারা রোগীদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে রাখা অমানবিক উল্লেখ করে মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব করে রাষ্ট্র তার অমানবিক চেহারা দেখাচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠিত হয় তারা কোনও নিয়মনীতি মানবে না, যার যেখানে যে আচরণ করার কথা না করে ঔদ্ধত্বের আচরণ দেখাচ্ছে।

বাঁশখালীর ঘটনায় আহত এলাকাবাসী হাতকড়া হাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন

তিনি আরও বলেন, কখন কোনও আসামিদের হাতকড়া পরিয়ে রাখা হবে তা নিয়ে পুলিশের নিজস্ব কিছু নিয়মনীতি আছে। কিন্তু যেখানে কার্যত কোনও সিস্টেম নেই, দেখা যাচ্ছে, সেখানে আপনি কেবল দুর্বলকে আইন মানার বয়ান দেবেন। তা কী করে হয়?

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কাদের হাতকড়া বা ডাণ্ডাবেরি পরাবেন তার কোন নিয়মনীতি থাকবে না। একজন ক্ষমতায় আপনার কাছাকাছি না বলে তার প্রতি এধরনের অমানবিক আচরণ করবেন এটা কোনও ধরনের নিয়ম হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, এই মারাত্মক আহতদের নড়ার সামর্থ নেই, তারা শরীরে গুলি নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। এমন মুমূর্ষু রোগীকে হাতকড়া পরানোর কোনও প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ অসহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে এবং তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করছে।

সুলতানা কামাল বলেন, এমনিতেই  এদের কারোরই শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। এখনও সঠিক চিকিৎসা তারা পাননি। এ অবস্থায় কোমরে রশি দিয়ে বেঁধে ও হাতে হাতকড়া পড়িয়ে রাষ্ট্র কী প্রমাণ করতে চান তা তারাই বলতে পারবেন।

 /ইউআই/এইচকে/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা