দেশে খাদ্য ঘাটতি না থাকলেও ঠিকমতো তার সুফল পায় না কৃষক। সরকারের দেওয়া কৃষি প্রণোদনাও ঠিকমতো পৌঁছে না তাদের হাতে। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয় কৃষককেই। এ কারণে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে পারছেন না কৃষক। ফলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ খাদ্যশস্য চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় চাষিদের হাতে সরাসরি প্রণোদনা পৌঁছে দেওয়াসহ কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী বাংলা টিবিউনকে বলেন, ‘কৃষি প্রণোদনা কৃষকের হাতে ঠিকমতো পৌঁছানোসহ উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষকের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পুরো ব্যবস্থা মনিটরিং করবে মাঠ প্রশাসন।’
গত ২৩ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদের দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারের ধারাবাহিক বিশেষ উদ্যোগ ও কর্মসূচির ফলে ইতোমধ্যেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে।
এছাড়া পুষ্টিমানসমৃদ্ধ খাদ্য উৎপাদন, পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ উদ্যোগ, অনাবাদি জমি আবাদ করার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। এ জন্য বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দেওয়া ১৪টি নির্দেশনায় যা বলা হয়েছে:
- উৎপাদন বাড়াতে অনাবাদি ও পতিত জমি চাষের ব্যবস্থা করা।
- অকৃষিকাজে কৃষি জমির ব্যবহার রোধ কার্যকর করা।
- সরকারের দেওয়া বিভিন্ন প্রণোদনা কৃষদের হাতে সঠিকভাবে পৌঁছানো নিশ্চিত করা।
- কৃষকের উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার জন্য বাজার ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পাইকারি ও খুরচা বাজার, অ্যাসেম্বল সেন্টার, প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও বিশেষায়িত হিমাগার মনিটরিং করা।
- বরেন্দ্র এলাকায় সেচকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে পাতকুয়া স্থপান করা।
- মৌ-চাষের জন্য মৌ-চাষিদের বাক্স নির্বেঘ্নে পরিবহন সহায়তা দেওয়া।
- উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততাসহিষ্ণু ধান ও জলমগ্ন এলাকার জন্য নতুন ধানের জাত এবং খরাপীড়িত এলাকায় খরা-সহিষ্ণু ধান, গম, সরিষা, আলু তিলসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ সম্প্রসারণে কৃষককে উৎসাহিত করা।
- উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় নারিকেল উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পুষ্টি ঘাটতি মেটাতে ভিয়েতনাম ও কেরালা থেকে খাটো জাতের নারিকেল চাষের জন্য উপকূলীয় এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া।
- সমন্বিত রোগবালাই ব্যবস্থপনার বিষয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা।
- দেশের বাজারে ফুলের বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা।
- দেশের হাওর ও দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নভূমিতে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদনে প্রযুক্তি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া।
- কৃষি কাজে যান্ত্রিকীকরণে সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া।
- জনগণের খাদ্যাভাস পরিবর্তন করে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সচল রাখা।
/এমএনএইচ/