X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘সবই ম্যানেজ হয়,শুধু টাকা ঢালতে হয়’

জাকিয়া আহমেদ
০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:১০আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ২২:১০

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের বারান্দায় ঠাঁই নিয়েছেন রোগীরা মায়ের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে মিরপুর থেকে এসেছেন আয়েশা। কিন্তু তিনদিন ধরে তিনতলার বারান্দার খোলা জায়গায় বিছানা বানিয়ে পড়ে আছেন তিনি। শীতের ভেতরে রাতে অনেক কষ্ট হয় জানিয়ে আয়েশা বলেন,‘বেড পাই নাই। সমস্যা হইতেছে, কিন্তু কিছু তো করার নাই। সিট নাই,পাবো কীভাবে? আমরা তো আর জোর করে সিট নিতে পারবো না,এখানেই থাকতে হবে।’

শুধু বেড সমস্যা নয়, জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে আসা রোগীরা ভুগছেন নানা সমস্যায়, পড়ছেন নানা দুর্ভোগে। রোগীদের অভিযোগ, টাকা ছাড়া এখানে কোনও কাজ হয় না। ট্রলিতে করে রোগী ওঠানোর নামে টাকা আদায় করছেন ট্রলিম্যানরা,পাওয়া যায় না প্যাথলজি বিভাগের সিরিয়াল, ঠিকমতো নার্সদেরও পাওয়া যায় না।তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, অভিযোগ একেবারেই সত্যি নয়। পুরো হাসপাতাল সিসি (ক্লোজ সার্কিট)ক্যামেরার আওতাভুক্ত, এখানে কেউ কাউকে টাকা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাদের নোটিশ করা হয়।  

একই রকম দুর্ভোগের শিকার নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা শামীমা পারভীন। হাসপাতালে বেড না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।স্বামী রইস উদ্দিন তালকুদারকে নিয়ে এখানে এসে বেড না পেয়ে দিশেহারা শামীমা বলেন,‘পিসিইউতে (পোস্ট করোনারি কেয়ার ইউনিট) ছিলাম।একসময় তারা ওয়ার্ডে পাঠালো, কিন্তু এখানে এসে বেড পাই নাই, এখন ফ্লোরে থাকতেছি। এই রোগী নিয়া আমি এখানে কীভাবে থাকবো তাই ভাবতেছি। স্ট্রোকের রোগী, বাম পাশ অবশ হয়ে গেছে। কিন্তু বেড পাচ্ছি না, এভাবে তো ফ্লোরে থাকা সম্ভব না। কিন্তু কী করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।’ তখন পাশে থাকা এক রোগীর স্বজন তাকে বলেন, ‘টাকা দেন, সিট মিলে যাবে।’ পরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়পুরহাট থেকে আসা বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত ওই ব্যক্তি বলেন,‘আমিও রোগী নিয়ে আসার পর সিট পাইনি। কিন্তু ম্যানেজ করেছি, সবই ম্যানেজ হয়ে যায়, শুধু টাকা ঢালতে হয়।’

জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের খোলা বারান্দায় এভাবেই থাকতে হচ্ছে রোগীদের

হাসপাতালটিতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভেতরে অপরিচ্ছন্ন, নোংরা, অন্ধকার পরিবেশ। বাথরুমের অবস্থা ভীষণ খারাপ, নাক চেপে যেতে হয় সেখানে। ছোট ওয়ার্ডের ভেতরে প্রতিটি বেডে রোগী থাকার পাশাপাশি মেঝেতেও বিছানা পাতা হয়েছে। তাই হাঁটার জায়গা নেই।বিছানার চাদর পর্যন্ত অপরিষ্কার।

রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে সিট বরাদ্দে চলছে রমরমা বাণিজ্য।সরকারি হাসপাতাল হলেও সিট নিতে দরিদ্র মানুষদের গুণতে হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। রোগীদের অভিযোগ, ওষুধও কিনে আনতে হচ্ছে। তাহলে সরকারি হাসপাতালে এসে কী লাভ হলো এমন অভিযোগ করে রাজশাহীর তৈমুর হোসেন ক্ষুব্ধ কন্ঠে বলেন,‘ব্যথার ওষুধ ছাড়া আর কোনও ওষুধই এখানে নেই। ইনজেকশনসহ সবকিছু কিনে আনতে হয় বাইরে থেকে।’

হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু আজম  রোগীদের উপচে পড়া ভীড়ের কারণে তাদের নানা সমস্যার কথা স্বীকার করলেন। তিনি বলেন,‘রোগীরা যখন গভীর রাতে এসে হাজির হয় তখন তো আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে রোগীদের যে অসুবিধা হচ্ছে এটাও সত্যি। বারান্দায়, ওয়ার্ডের ফ্লোরে তারা থাকছেন। কিন্তু আমরা নিরুপায়।’ তবে তিনি হাসপাতালটির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন জানিয়ে বলেন,‘হাসপাতালটির দায়িত্ব নেওয়ার পর আমি নানাভাবে উন্নয়ন করার চেষ্টা করছি। ৪ মাস আগে একটা ফিমেল ওয়ার্ড এবং ক্যাথল্যাব করেছি। বারান্দায় ফ্যান ছিল না, ৪ মাস আগে সেখানে সিলিং ফ্যান দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘রোগীদের ভোগান্তি কমাতে হাসপাতালের বর্ধিত ভবনের জন্য আবেদন করেছি। বর্তমান হাসপাতাল ভবনের দুপাশে ৭ তলা এবং পেছনের আরেকটি ভবনকে ১৫ তলা করার জন্য আমরা আবেদন করেছি। এগুলো হয়ে গেলে রোগীদের আর  বেড সংকট থাকবে না।’

হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে রোগীদের সিট পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রোগীরা এমন অভিযোগ করে ঠিকই, কিন্তু তদন্ত করলে তার সত্যতা পাওয়া যায় না। যারা এসব আপনাকে বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে।’

/এএআর / 

আরও পড়ুন: 
বুধবার খোলা হচ্ছে লুই কানের মূল নকশা, আসছে সফট কপিও

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
স্টয়নিস ঝড়ে পাত্তা পেলো না মোস্তাফিজরা
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
রানা প্লাজা ধস: ১১ বছরেও শেষ হয়নি তিন মামলার বিচার
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রয়োজন ৫৩৪ বিলিয়ন ডলার: পরিবেশমন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: মন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট