পটকা কোনও মাছ নয়, এটি একটি জলজ প্রাণী। এর কানের কাছের গ্রন্থিতে থাকে বিষ, এবং রান্না করার পরও এই বিষ থেকে যায় তার শরীরে। যার ফলে পটকা মাছ খাবার কারণে মানুষের মৃত্যু হয়। মানুষ যদি সচেতন হয় তাহলেই কেবল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিলেটের জৈন্তাপুরে পটকা মাছ খেয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে সম্প্রতি। সিলেট ওসমানী হাসপাতাল ও শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে গতকাল ৬ ডিসেম্বর ভর্তি হয়েছেন আরও ৩০ জন। এ ঘটনায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পটকা মাছ নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বিশেষ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে জানানো হয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যদি প্রয়োজন মনে করা হয়, তাহলে এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এসএম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে যে বিষ খেয়ে সৈন্যরা আত্মহত্যা করে সেই পটাসিয়াম সায়ানাইড রয়েছে পটকা মাছের শরীরে। মাছের গলার নিচের কানের পাশের থলিতে থাকা এই বিষ রান্না করলেও দূর করা সম্ভব নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালে পটকা মাছ খেয়ে নরসিংদী, নাটোরসহ আরও দুটি জেলার মানুষ যখন মারা যায়, তখন আইইডিসিআর এ নিয়ে কাজ করেছিল। পটকা মাছ খেতে আমরা মানুষকে নিরুৎসাহিত করি। কেউ খেতে চাইলে বিষাক্ত ঐ থলি ফেলে দিয়ে খেতে পারে।’ পটকা মাছ যে বিষাক্ত তা সাধারণ মানুষ জানে বলে মন্তব্য করে এসএম আলমগীর বলেন, ‘যারা পটকা মাছ খায় তারা এই বিষাক্ত থলিটা ফেলে দেয় সাধারণত।’ পটকা মাছের বিষকে ‘ডেডলি টক্সিন’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পটকার বিষ পটাসিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও অনেক বেশি বিষাক্ত, প্রায় ১ হাজার ২০০ গুণ বেশি বিষাক্ত। একটা পটকা মাছের বিষে ৩০ জন মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পটকা মাছের বিষ এতটাই মারাত্মক যে এটি রান্না করলেও নষ্ট হয় না, থেকে যায়। তাই এই মাছ খেলে মানুষের মৃত্যু হয়।’
আইইডিসিআর থেকে এ বিষয়ে সারা দেশে কোনও সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হবে কিনা জানতে চাইলে এসএম আলমগীর বলেন, ‘সাধারণত যেসব এলাকায় এই মাছ খাওয়া হয় আমরা সেখানে প্রচারণা করি। কারণ সারাদেশে এ ধরণের কাজ করলে একটা ভীতির সঞ্চার হয়। তাই যেসব এলাকায় এই মাছ খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে আমরা সেখানেই প্রচারণা চালিয়ে থাকি।’ সিলেটের জৈন্তাপুরে ইতোমধ্যে আইইডিসিআর-এর তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি মনে করি এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, তাহলে আমরা সেটি করবো।’
পটকা মাছের বিষকে সাপের বিষের সঙ্গে তুলনা করে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পটকা মাছের বিষ স্নায়ুতন্ত্রকে নির্জীব করে দেয়, ফলে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুবরণ করে। এটাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় নিউরোটক্সিক। পটকা মাছ মানুষের একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। কারণ এই মাছের বিষে মৃত্যুই হয় বেশি।’
/জেএ/এএআর/আপ-এসএনএইচ/