বিশেষ প্রেক্ষাপটে মেয়েদের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ের বিধান রেখে বহুল আলোচিত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল ২০১৬’’ সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন। এরপর এক মাসের মধ্যে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হলো।
প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ আদালতের নির্দেশনা নিয়ে এবং বাবা-মায়ের সমর্থনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়।
এতে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহে উৎসাহিত হবে মন্তব্য করে তা বাতিলের দাবি তুলেছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
তবে খসড়া আইনটির বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে বুধবার সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, তারা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা সম্পর্কে ‘অজ্ঞাত’। সমাজ বাস্তবতার কথা বিবেচনায় রেখেই খসড়াটি করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে বয়স ২১ বছর রাখা হলেও বিশেষ বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বিশেষ বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনও বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনও নারীর সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাক্রমে এবং বাবা-মায়ের সম্মতিক্রমে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বলেন, ‘বাল্যবিবাহ সারাবিশ্বের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এ সমস্যাটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বাল্যবিবাহ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
সরকার এ লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাল্যবিবাহ বন্ধে একটি যুগোপযোগী আইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের দেশের মানুষ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জানেন কিন্তু মানেন না। বাল্যবিবাহ বন্ধে সংসদে উত্থাপিত আইনের ভূমিকা অনস্বীকার্য।’
বিলে বলা হয়েছে, কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষ বাল্য বিয়ে করলে তিনি সর্বোচ্চ ১৫ দিনের আটকাদেশ বা পাঁচ হাজার জরিমানা বা উভয়দণ্ডের সম্মুখীন হতে হবে।
বাল্যবিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাবা-মাসহ অন্যদের সর্বোচ্চ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে, একমাসের কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। একইসঙ্গে নারীর ক্ষেত্রে এই অপরাধে কারাদণ্ডের বিধান মওকুফ করা ছিল।
বাল্যবিয়ে পরিচালনা বা সম্পাদনের ক্ষেত্রে আগের আইনের চেয়ে শাস্তির মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। ১৯২৯ সালের আইনে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক মাসের জেল ও এক হাজার জরিমানার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত আইনে সর্বোচ্চ দুই বছর থেকে সর্বনিম্ন ছয় মাসের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা কারা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বাল্যবিয়ে নিবন্ধকের জন্য একই শাস্তির পাশাপাশি সনদ বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, বাল্যবিয়ের জন্য উদ্যোগী অভিযুক্ত কোনও ব্যক্তি আদালতের নির্ধাতি ফরমে যদি মুচলেকা দেয় যে, তিনি তার এলাকায় বাল্যবিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হবেন এবং নিজে ভবিষ্যতে একাজে সম্পৃক্ত হবেন না, তবে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া যাবে।
এ আইনের অধীন আরোপিত জরিমানা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও প্রস্তাবিত আইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে এই আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য এবং অ-আপোষযোগ্য হবে। এ আইনের অধীন বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
/ইএইচএস/এমএনএইচ/