X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই শুরু হয় নারীর ভিন্ন লড়াই ‘যুদ্ধশিশু’

উদিসা ইসলাম
১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:১২আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬, ১০:১৫

যুদ্ধশিশু

‘একদিকে মুক্তিযুদ্ধ চলছে, আরেকদিকে নির্যাতনের শিকার নারীর গর্ভপাত। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার নারীদের যুদ্ধমধ্যবর্তী সময়ে যেসব ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাদের পরিবারে ও সমাজে গ্রহণ করা না করার বিতর্ক তখনই শুরু হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধাবস্থায় ‘নারীর সম্ভ্রম’ যাওয়াটাও সামাজিকভাবে গ্রহণ করতে কষ্ট হয়েছিল। সেই নারীদের লড়াইয়ের শুরু তখনই। কিভাবে গর্ভপাতের ব্যবস্থা করবেন, বা যাদের সেই সুযোগ হয়নি, তারা পেটের সন্তানকে নিয়ে নিজের জীবন কিভাবে বাঁচাবেন, সেই সংগ্রামে নামেন। এ লড়াই ছিল একেবারেই তার একার।’

কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সময় ও পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার নারীদের নিয়ে কাজ করছেন যিনি, সেই মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের সে সময়ের লড়াই আসলে এখন বোঝা মুশকিল। কেউ চায় না তার গর্ভে শত্রুপক্ষের বীজ থাকুক, কিন্তু আবার কোথায় গিয়ে লুকিয়ে সেই গর্ভপাত ঘটাবে সেটিও জানা নেই। লুকিয়ে বলছি এ কারণে যে, কেউ দেখে ফেললে ও জেনে ফেললে সমাজে কী হবে, সেটা নিয়েও কিন্তু ভীষণ চিন্তিত ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা নারীরা। কত মাইগ্রেশন যে তখন ঘটেছে, তার কোনও হিসাব সরকারি-বেসরকারিভাবে নেই।’

ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ডা. এম এ হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ফিল্ড গবেষণা বলছে, দেশে তিন লাখের বেশি নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যেটুকু পেয়েছি তা মোট নির্যাতনের শিকারের ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ নারীকে পাকিস্তানি সেনারা তাদের ক্যাম্পে রেখে দিনের পর দিন গণধর্ষণ করেছে।’ মিশনারিজ অব চ্যারিটি বিভিন্ন জেলায় ভূমিষ্ঠ হওয়া যুদ্ধশিশুদের বিষয়ে নানা সময়ে দেওয়া তথ্য মতে, সারাদেশ থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার শিশু ভূমিষ্ঠের খবর তাদের কাছে এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই শুরু হয় নারীর ভিন্ন লড়াই ‘যুদ্ধশিশু’

মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের ফলে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে যারা গর্ভপাতের সুযোগ না পেয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তাদের বিষয়ে ‘বাংলাদেশ পরিত্যক্ত শিশু (বিশেষ বিধান) আদেশ ১৯৭২’ নামে রাষ্ট্রপতির একটি আদেশ জারি করা হয়েছিল। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী,এই সময়ে সাহায্যে এগিয়ে আসা সংস্থাগুলো হলো জেনেভাভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সার্ভিসের (আইএসএস) যুক্তরাষ্ট্র শাখা, বাংলাদেশ সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর উইমেন রিহ্যাবিলিটেশন এবং বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি।

যুদ্ধশিশুদের খুঁজে বের করে তাদের নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী। সে সময়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধশিশু বলতেও চাই না। আমি বলতে চাই বিজয় শিশু। তাদের জন্মের বিনিময়ে এই দেশ হয়েছে, আমার জন্মের বিনিময়ে নয়। এখন প্রশ্ন তোলা উচিৎ, কী করেছি তাদের  জন্য? ৪৫ বছর ধরে আমরা স্বাধীনতার জন্য এত গর্ববোধ করি, আমরাই আবার গণহত্যাটা করেছি।’ যারা এখনও দেশে আছেন তাদের পরিচয় কেন লুকিয়ে রাখতে হয়,সেনিয়েও কাজ করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।

মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই শুরু হয় নারীর ভিন্ন লড়াই ‘যুদ্ধশিশু’

খুরশিদ জাহান বেগম তার ‘একাত্তরের যুদ্ধশিশু’ বইয়ে  লিখেছেন, ‘১৯৭২ সালে ধর্ষিতার জন্য গর্ভপাত এবং যুদ্ধশিশুদের জন্য শিশুদত্তক আইন পাশ হয়। সেই অনুযায়ী এসব অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাত ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এই কাজে অস্ট্রেলিয়ার শল্যচিকিৎসক ডা. জিওফ্রে ডেভিস বাংলাদেশে এসেছিলেন। এদেশ থেকে ফিরে গিয়ে তিনি বলেছিলেন,এক লাখ সত্তর হাজার গর্ভপাত করিয়েছেন তিনি। তার হিসাব মতে, দুই লাখ ধর্ষিতা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন। দুই লাখের অবশিষ্ট ত্রিশ হাজারের মধ্যে কিছু নারী আত্মহত্যা করেছিলেন। কিছু সাহসী নারী সেই অনাকাঙ্ক্ষিত নাড়ি ছেঁড়া ধনটিকে নিজেই লালন করার দুঃসাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন।’

নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের পরপরই ঢাকায় মাদার তেরেসা বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন আশ্রয়কেন্দ্র। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়া নির্যাতিতদের সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হতো। আবার সারা দেশ থেকে আসা জন্ম নেওয়া শিশুদের দত্তক দেওয়ার বিষয়েও তাদের ভূমিকা ছিল।কিন্তু নয় মাস নির্যাতন এবং গর্ভপাতের কারণে নারীর যে যন্ত্রনা, তা নিয়ে কোনও ধারাবাহিক কাজ করা সম্ভব হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘নারীর লড়াই আসলে যুদ্ধের শেষ মুহূর্ত থেকেই শুরু হয়েছে। সেই যুদ্ধের নাম ‘যুদ্ধশিশু’।’’

/ইউআই/ এপিএইচ/আপ-এসটি

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার হুমকি আব্বাসের
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লেতে ১২৫ রান করে হায়দরাবাদের বিশ্ব রেকর্ড!
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
গরমে খান দইয়ের এই ৫ শরবত
গরমে খান দইয়ের এই ৫ শরবত
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও