X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম বছরে কেবল খুঁজে চলা নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের

উদিসা ইসলাম
১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৪৯আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ২৩:১৭


প্রথম বছরে কেবল খুঁজে চলা নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের





বিজয়ের প্রথম বছরটা বিজয়ের আনন্দ উপভোগের চেয়ে বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতে ফেরা মানুষের জীবন সংগ্রাম আর নিখোঁজদের খোঁজখবর চালানোয় কাটিয়ে দিয়েছে মানুষ। তার সঙ্গে ছিল হত্যার কারণ নিয়ে আহাজারি এবং স্বজন শেষ চিহ্ন খুঁজে ফেরা। পত্রিকার পাতায় বছরজুড়েই ছিল ‘এখনও ফেরেনি যারা’ শিরোনামে নিখোঁজদের পরিচয় জানানোর কাজ। প্রথম বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসের পত্রিকাতেও তার ছোঁয়া ছিল। ১৯৭১ সালে যে বুদ্ধিজীবীরা জাতিকে বুদ্ধি পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে বিজয়কে দ্রুততম সময়ে নিশ্চিত করেছিলেন তাদের নিয়ে বিশেষ আয়োজন ছিল, ফিরে না পাওয়ার কান্না ছিল। প্রথম বছরে কেবল খুঁজে চলা নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের



বছর ঘুরতেই দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদে লেখা হয়, ‘ওরা একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার’। যেখানে বলা হয়, রাও ফরমান আলী বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যার যে ব্লুপ্রিন্ট প্রণয়ন করেছিলেন সে ব্লুপ্রিন্টের পেছনে নিশ্চয় কোনও বৃহৎ শক্তি ছিল। বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠানো সম্পর্কে মার্কিন সাংবাদিক এন্ডারসনের রিপোর্ট আমাদের শঙ্কাকে সত্য বলে প্রমাণিত করেছিল। এন্ডারসন জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগ অর্থাৎ সিআইএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম বছরে কেবল খুঁজে চলা নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের


পত্রিকাগুলো ততদিনে খুঁজে পেয়েছে শেষচিহ্নগুলো। ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে সহকর্মী ও ছাত্র অধ্যাপক আকরম হোসেন খানকে লেখা মুনীর চৌধুরীর শেষ চিঠি ‘কখনও কি লিখব আবার?’ যেখানে তিনি বলছেন, ‘তোমার উভয়পত্র হস্তগত। আশ্চর্য এখনও সবাই প্রায় জীবিত অন্তত। রফিক কিছুকাল আটক থেকে এখন মুক্ত যাকে বলে।..বেতারে ঘোষিত যশোহর ধুমায়িত ম্রিয়মান। আবার কি দেখব তোমাকে চোখের সামনে, প্রাণে, মেলাব প্রাণ? তোমার কথার রত্নভাণ্ডারে ভরে তুলবে আমার রচনাসম্ভার? কখনো কি লিখব আবার?’ যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে শহীদ স্যারের বাসা থেকে এই চিরকূট উদ্ধার করেন আকরম হোসেন খান।
ডা. রফিকুল হাসান লিখেছেন চিকিৎসকদের আত্মদানের কথা। তিনি লিখছেন, ‘যারা জনগণের জন্য মৃত্যুবরণ করেন তাদের মৃত্যু পাহাড়ের চাইতে ভারী। সেই ভারী পাহাড় আজ আমাদের বুকে চেপে আছে। আমরা উচ্চস্বরে কাঁদতে পারি না। আমরা শোকাতুর হয়ে পাথর হয়ে গেছি।’ প্রথম বছরে কেবল খুঁজে চলা নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের


৭৫ এর আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটলেও বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসে পত্রিকার পাতা ছিল বুদ্ধিজীবীদের জীবনগাঁথা দিয়ে ভরা। দৈনিক বাংলার শেষের পাতায় ‘স্মৃতিতে প্রদীপ্ত অনেক মুখ’ শিরোনামে ছবিসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়। ইতিহাসবিদরা বলছেন, ইতিহাস থেকে বাংলা বিজয় মুছে ফেলতে এবং ইতিহাস বদলে দিতে আরও কিছু সময় নিয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীরা।
প্রথম বছরে কেবল খুঁজে চলা নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের

২৫ শে মার্চের মাঝরাত থেকে দেশজুড়ে হত্যা-ধর্ষণ-লুটতরাজের পাশাপাশি বাছাই করে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিধন-পর্বও চলছিল প্রায় প্রতিদিনই, এমনকি বিজয়ের পরেও। স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরো নয় মাসই সুপরিকল্পিতভাবে একের পর এক বুদ্ধিজীবী হত্যা চলতে থাকে। পাকিস্তানি ঘাতকদের আত্মসমর্পণের ঠিক দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বরের বীভৎস-নারকীয়-পাশবিক হত্যাকাণ্ড ছিল ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে ১৪ ডিসেম্বর রাতে কুলাঙ্গার কিছু বাঙালির সহায়তায় হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পীসহ বহু গুণী বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জাতিকে মেধাহীন করাই ছিলো তাদের হীন উদ্দেশ্য।
প্রথম বছরে কেবল খুঁজে চলা নিখোঁজ বুদ্ধিজীবীদের

বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশন প্রণীত একটি দলিল থেকে জানা যায়, বুদ্ধিজীবী হত্যায় ভূমিকা রাখা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা হলো, ব্রিগেডিয়ার রাজা, ব্রিগেডিয়ার আসলাম, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্নেল তাজ ,কর্নেল তাহের, ভিসি প্রফেসর ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন, ড. মোহর আলী, আল বদরের এবিএম খালেক মজুমদার, আশরাফুজ্জামান চৌধুরী ও মাইনুদ্দিন। এদের নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গণহত্যার পরিকল্পনা হুট করে হওয়া কোনও বিষয় ছিল না। তারা এই তালিকা তৈরি ও পরিকল্পনার কাজটি শুরু থেকেই করেছিল। বাংলাদেশি দোসরদের সহায়তায় তারা চিনতে ভুল করেনি কাদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে দেশকে মেধাশূন্য করে ফেলা যাবে।’
তিনি পাকিস্তানের দোসরদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের বিচারের কাজটি সম্পন্ন করার তাগাদা দিয়ে বলেন, ‘একের পর এক যখন বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে তখন পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া বলে দেয় ওরা এখনও কী চায়। ফলে বিচারের মুখোমুখি ওদের হতেই হবে।’
ছবি সৌজন্যে : সিজিবিআর ও আইসিএসফ
/ইউআই/টিএন/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!