X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম ছড়িয়ে দেন ইপিআরের বাঙালি সদস্যরা

জামাল উদ্দিন
১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১২:৩৪আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:১৮

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাটি চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রথম পৌঁছে দিয়েছিলেন তৎকালীন ইপিআর বাহিনীর সদস্যরা, স্বাধীনতার পর এখন যা বিজিবি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা ইপিআরের সিগন্যাল সেন্টারের কর্মীদের পাঠানো হয় সুবেদার মেজর শওকত আলীর নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সেই ঘোষণা সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে উদ্বীপ্ত করেছিল এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে।

ইপিআরের বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত নূর মোহাম্মদ শেখ ও মুন্সী আব্দুর রউফ তবে  হানাদার বাহিনীর নির্যাতন ও হামলায় শহীদ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর বার্তা বহনকারী সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ ৮১৭ জন ইপিআর সদস্য। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বগাঁথা অবদানের জন্য স্বীকৃতি হিসেবে এ বাহিনীর ২ জনকে বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জনকে বীর উত্তম, ৩২ জনকে বীর বিক্রম এবং ৭৭ জনকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়।
বিজিবি’র কর্মকর্তারা জানান, 'সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে ২২১ বছরের ঐতিহ্যবাহী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে তৎকালীন ইপিআর বর্তমানে বিজিবি’র সদর দফতর পিলখানায় বর্বর আক্রমণ চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এ হামলায় ইপিআরের অনেক বাঙালি সদস্য শহীদ হন। হানাদার বাহিনীর হাতে আটক ও নির্মম নির্যাতনে পরবর্তীতে শাহাদাতবরণ করেন আরও অনেকে। বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে নস্যাৎ করার জন্য ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণা নিজস্ব ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পৌঁছে দেন ইপিআর সদস্যরা।
মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির ভূমিকা নিয়ে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে ইপিআর’ বইটিতে বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগের সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। বইয়ের তথ্য অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু তার ৩২ নম্বর ধানমণ্ডির বাড়িতে মুক্তিকামী জনতার মাঝে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলে ধরেন। একইদিন রাতে সদর দফতর পিলখানায় প্যারেড গ্রাউন্ডের বটবৃক্ষে নায়েব সুবেদার শামসুল হক, হাবিলদার খুরশিদ, নায়েক মহিউদ্দিন ভুইয়া, ল্যান্স নায়েক আব্দুল বাতেন, ল্যান্স নায়েক বাশার এবং সিপাহী আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলার সূর্য পতাকা উত্তোলন করা হয়। সিপাহী আওলাদ হোসেনের সহযোগিতায় পতাকাটি তৈরি করেছিলেন সিপাহী দর্জি মোশাররফ হোসেন। সদর দফতর ছাড়াও ওই রাতে যশোরের ভোলা ট্যাঙ্ক রোড়ে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের হেড কোয়ার্টার্সে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। যা পরদিন দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়া যশোর সেক্টরের অধীন শ্যামপুর, বেনীপুর ও কুসুমপুর বিওপিতে, ডি কোম্পানি হেডকোয়ার্টার সাতক্ষীরাতে, রাজশাহী সেক্টরের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানার মাদুপুর বিওপিতে, খুলনা উইং এ, দিনাজপুর সেক্টরের বিভিন্নস্থানে এবং চট্টগ্রাম সেক্টরের বরকল বিওপিতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।
যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইপিআরের সদস্যরা বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ইপিআরের বাঙালি সদস্য ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ ও মুন্সী আব্দুর রউফ বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব পান। নায়েব সুবেদার হাবিবুর রহমান, নায়েব সুবেদার ফজলুর রহমান, হাবিলদার মজিবুর রহমান, সফিক উদ্দিন চৌধুরী, সিপাহী আবু তালেব, ডিএডি সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সিপাহী আনোয়ার হোসেন ও সিপাহী এ কে এম এরশাদ আলী বীর উত্তম খেতাব পান। নায়েব সুবেদার হাবিবুর রহমান ও ডিএডি সালাহ উদ্দিন আহমেদ ছাড়া অন্য সবাই হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন।
যে ৩২ জন বীর বিক্রম খেতাব পেয়েছিলেন তারা হচ্ছেন- এডি মো. আব্দুস শুকুর, সুবেদার মেজর ফখর উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সুবেদার মেজর সুলতান আহমেদ, সুবেদার (সিগন্যাল) সৈয়দ আমিরুজ্জামান, নায়েব সুবেদার মো. মনিরুজ্জামান, নায়েব সুবেদার ভুলু মিয়া, নায়েব সুবেদার আব্দুল মালেক চৌধুরী, নায়েব সুবেদার হায়দার আলী, নায়েব সুবেদার আবুল খায়ের, নায়েব সুবেদার শাহ আলী আকন্দ, নায়েব সুবেদার নাজিমুদ্দিন, নাযেব সুবেদার ইউ কে চিং, হাবিলদার জুম্মা মিয়া, হাবিলদার আনিস মোল্লা, হাবিলদার মো. কামরুজ্জামান, হাবিলদার মো. নুরুল ইসলাম, হাবিলদার আব্দুস সালাম, হাবিলদার গোলাম রসুল, হাবিলদার মো. তরিক উল্লাহ, নাযেক আরব আলী, নায়েক দেলোয়ার হোসেন, নায়েক মো. আবুল কাশেম, নাযেক আব্দুল মালেক, নায়েক মোজাফফর আহমেদ, ল্যান্স নাযেক আব্দুস সাত্তার, সিপাহী আবুল বাশার, সিপাহী আতাহার আলী মল্লিক, সিপাহী মোহাম্মদ উল্লাহ, সিপাহী নিজাম উদ্দিন, সিপাহী আব্দুল মজিদ, সিপাহী লিলু মিয়া ও সিপাহী জিল্লুর রহমান। এছাড়াও ৭৭ জন বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন।
বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক (সদর দফতর) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুল করিম বলেন, ‘এ বাহিনীর প্রায় ১২ হাজার বাঙালি সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নিয়ে ৮১৭ জন সদস্য শহীদ হয়েছিলেন। তাদের বীরত্বগাঁথা বিজিবির ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। সেই সমৃদ্ধ ইতিহাসের পথ ধরে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমাস্ত রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছে।

/জেইউ/এফএস/আপ-এমও/

সম্পর্কিত
নানা আয়োজনে রাজধানীবাসীর বিজয় উদযাপন
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা
জাবিতে আলোকচিত্র প্রদর্শনী
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক