X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

'সেদিন ঢিলটা খেয়ে আজকের পথটা তৈরি করেছিলাম আমরা'

জাকিয়া আহমেদ
০৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:০৯আপডেট : ০৭ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪৬

স্কুটি চালানো নারীরা

আমাদের দেশে মেয়েদের যাতায়াত ব্যবস্থাটা খুব একটা ভালো নয়। বাসগুলোয় চালকের পাশেই থাকে মেয়েদের বসার জায়গা। আর গণপরিবহনে কিছু পুরুষের অশালীন আচরণেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় নারীদের। যারা গণপরিবহনে ওঠেন তাদের কম-বেশি এ ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে। নিত্য দিনের এ ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে তাই স্কুটির বিকল্প নেই। এটা আত্মনির্ভরশীল করার পাশাপাশি মেয়েদের মোবিলিটি বাড়াতেও সাহায্য করে। স্কুটি চালানো প্রসঙ্গে এমনটাই জানালেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত জেসমিন লিপি। শুধু লিপিই নন, আতিকা রোমা, শাইন তালুকদার, অদিতি, ফারহানা রূপমদের অভিমতও একই।

শুরুটা সহজ না হলেও বতর্মানে স্কুটি চালানো মেয়েদের জন্য পথটা অনেক প্রশস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রূপম। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সালে যখন আমি স্কুটি চালানো শুরু করি, তখন কয়েক প্রস্থ কাপড় পরে বের হতাম। কিন্তু এখন মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ এমনকি শাড়ি পরেও রাস্তা দাপিয়ে বেড়ায়। এই জায়গাটা এখন আমরা তৈরি করতে পেরেছি।’

আতিকা রোমা

রোমা বলেন, ‘আজ মেয়েদেরকে কেউ আর ঢিল ছুড়ছে না, কারণ সেদিন ঢিলটা খেয়ে আমরা আজকের পথটা তৈরি করেছিলাম।’

শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠেন স্কুটি রাইডাররা। তারা জানালেন, স্কুটি তাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। তবে সমাজ এখনও নারীদের স্কুটি চালানোর ব্যাপারে ধাতস্থ হতে পারেনি। রাস্তায় সার্জেন্টরাও অহেতুক গাড়ি থামিয়ে নানা ধরনের হয়রানি করে। স্কুটি চালানোর কারণে তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী-সন্তানকেও কথা শুনতে হয়।

উত্তরা থেকে মোহাম্মদপুরে অফিস করেন রোমা। বলেন, ‘আগে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সিএনজির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। দিতে হতো দ্বিগুণভাড়া, এখন সেটা নেই।’

রামপুরা থেকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অফিস করেন অদিতি। তিনি বলেন, ‘আগে যাতায়াতে অন্তত ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগতো। স্কুটিতে যাতায়াত করায় এখন অনেক কম সময় লাগে।’

জেসমিন লিপি

শেওড়াপাড়া থেকে মহাখালী ডিওএইচএসে যাতায়াত করেন জেসমিন লিপি। তিনি বলেন, ‘বাসে নারীদের জন্য ৯টি সিট। সেগুলোও পুরুষদের দখলে থাকে।’

শাইন বলেন, ‘অনেক বাসস্টপেজে মেয়েদেরকে বাসেই তুলতে চায় না। আবার বাসে উঠতে পারলেও প্রয়োজন না থাকার পরও হেলপাররা হাত ধরে। সঙ্গে রয়েছে পুরুষ যাত্রীদের বিরূপ আচরণ। মেয়েদের দাঁড়িয়ে যেতে আপত্তি নেই। তবে সেই পরিবেশ থাকতে হবে। যেখানে অহেতুক কেউ গায়ে হাত দেবে না, বাস থেকে নামার সময় ধাক্কা দেবে না।’ একজন মানুষের মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ার জন্য এ ধরনের একটা ঘটনাই যথেষ্ঠ বলে মন্তব্য করেছেন মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কর্মরত রূপম।

ভিকারুন্নিসা নূন স্কুলের শিক্ষক অদিতি শাড়ি পড়ে ১৯৯৮ সাল থেকে বাইক চালান। তিনি বলেন, ‘পোশাক কোনও সমস্যা নয়, সমস্যা সমাজের উৎসুক চোখ। যারা মেয়েদেরকে স্কুটি চালানো দেখতে অভ্যস্ত নন।’

অনেকের অভিযোগ, যেসব পুরুষরা বাইক চালান তারাও স্কুটি চালানো নারীদেরকে হুমকি বলে মনে করেন। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অযথা হর্ন দেয়, মোটরসাইকেল চাপিয়ে দেয়।

ফারহানা রূপম

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘আমি যদি একজন পুরুষকে পাশ কাটিয়ে আগে চলে যাই, তাহলে তার সঙ্গে থাকা নারী সঙ্গী তাকে টিজ করে। বলে, একজন মেয়ে হয়ে কী করে একজন পুরুষের আগে চলে গেল?’

এছাড়া বাসগুলো সবচেয়ে বেশি হেনস্থার চেষ্টা করে বলে জানান অদিতি ও রূপম। রোমা বলেন, ‘প্রাইভেটকারের মালিকের বদলে ড্রাইভার থাকলে তারা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়। তারা যে কতটা অশ্লীল আর অভদ্র হতে পারে সেটা না দেখলে বোঝা যাবে না।’

এসব স্কুটি রাইডাররা পথে চলতে চলতে একজন আরেকজনের বন্ধু হয়ে গেছেন বলে জানান রোমা। বলেন, ‘শুরুর দিকে যখন কোনও মেয়েকে দেখতাম আমারই মতো বাইক চালাচ্ছে, তখন রাস্তায় তাকে থামিয়ে পরিচিত হয়েছি, ফোন নম্বর বিনিময় হয়েছে, ফেসবুকে বন্ধু হয়েছি। এভাবে নিজেদের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি হয়েছে আমাদের।’

শাইন

রোমা আর শাইন স্কুটি চালিয়ে নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও কুয়াকাটা পর্যন্ত গিয়েছেন। তারা বলেন, অবাক হলেও ঢাকার বাইরের মানুষের চোখে যে শ্রদ্ধা দেখেছি তা এখানে পাই না।

মেয়েদের স্কুটি চালানো নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আগামীতে বদলাবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে লিপি, রোমা, রূপম একসঙ্গে বলেন, ‘বদলাবে নয়, ইতোমধ্যে বদলানো শুরু হয়েছে।’

গতবছর ২৩ নারী সার্জেন্টদেরকে ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে স্কুটি দেওয়া হয়। ঢাকার রাস্তায় এখন প্রায় ১৫০-১৭০ জনের মতো নারী স্কুটি চালান বলে জানালেন রোমা। যারা দল বেঁধে ঢাকা শহরের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান। কখনও বা ঘুরে আসেন শহরতলীতে।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

/এসটি/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা