জয়পুরহাটের দশম শ্রেণির এক ছাত্রী দীর্ঘ ২৫ দিন ধরে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে অচেতন হলেও মেয়েটিকে আশঙ্কামুক্ত বলে ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। শুরুতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) থাকলেও বর্তমানে তাকে রাখা হয়েছে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ)।চিকিৎসকরা বলছেন, মেয়েটির দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে জয়পুরহাটের কালাই থানার বানদিঘী গ্রামের ওই ছাত্রীকে ঘরে ঢুকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত মেয়েটিকে বগুড়ার শহীদ জিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ২৪ ডিসেম্বর রাত দেড়টার দিকে ঢাকার আগারগাঁও নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে আসা হলে সেখানেই ২৬ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার হয় মেয়েটির। ২৮ ডিসেম্বর ঢামেকের নিউরো সার্জারি, গাইনোকোলজি, জেনারেল সার্জারি এবং ওসিসির (ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার) কনসালটেন্টদের নিয়ে ৫ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী মেয়েটির চিকিৎসা হচ্ছে।
মেয়েটির ফুপা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এতো দিন পার হয়ে গেলেও মেয়েটির এখনও পুরোপুরি জ্ঞান ফেরেনি। সে কথা বলতে পারছে না। কবে কথা বলতে পারবে বা আদৌ পারবে কিনা সেটাও চিকিৎসকরা বলতে পারছেন না। তবে ও হাত-পা নাড়তে পারে, যেটা চিকিৎসকরা ভালো লক্ষণ বলে জানিয়েছেন।’
মেয়েটির মা সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন হাসপাতালের দুই তলায় এইচডিইউ’র সামনে। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি কাঁদতে-কাঁদতে বললেন, ‘আমার ময়না কেবল আমারে একটু ডাকুক, একবার আমাকে মা বলি ডাক দিক। ওর মুখে মা ডাক শুনি না কতো দিন!’
তবে মেয়েটির জীবন সংশয়মুক্ত বলেই জানিয়েছেন তার চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওর শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে বেশ ভালো। তাকে আমরা সংজ্ঞাহীন বলছি না, আবার সংজ্ঞা পুরোপুরি ফিরে এসেছে তাও বলছি না। মেয়েটি হঠাৎ শোয়া থেকে উঠে বসে, আবার হঠাৎ করেই শুয়ে পড়ে। কখনও হাত-পা ছুঁড়তে থাকে। নিজে থেকে শব্দ করে, কিন্তু প্রশ্ন করলে কিছু বলতে পারে না।’
ভেতরে-ভেতরে মেয়েটি প্রচণ্ড আতঙ্কগ্রস্ত জানিয়ে ডা. অসিত চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মানসিক ট্রমা কাটাতে তার আরও অনেক সময় এবং চিকিৎসা প্রয়োজন। সেজন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজেরই মানসিক বিভাগে নিতে রেফার করেছি আমরা। এখন ঢামেক এর মানসিক বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে দেখছেন, পাশাপাশি আমরাও আছি। মেয়েটির চোয়াল ও দাঁতে কিছু সমস্যা থাকায় জ্ঞান পুরোপুরি ফিরে আসার পর এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও তার চিকিৎসা করবেন।’
/এএআর/আপ-এআর/