X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রানার সংসদ সদস্য পদ নিয়ে কী হবে?

পাভেল হায়দার চৌধুরী
১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:৫০আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:০১

খুনের দায়ে অভিযুক্ত আমানুর রহমান খান রানা এমপি টাঙ্গাইলের বিতর্কিত সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানাকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের পর, সংসদে তার সদস্য পদ থাকছে কিনা,তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে। এই সংসদ সদস্যের কর্মকাণ্ড নিয়েও ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

গত সোমবার টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ খুনের দায়ে অভিযুক্ত সংসদ সদস্য রানাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।  জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্নটি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে যে, রানার সংসদ সদস্য পদের কী হবে।

তবে আইনজ্ঞ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, রানা এখনও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি। তার দলীয় সদস্য পদ এবং জাতীয় সংসদের সদস্য পদও যায়নি। জেলা আওয়ামী লীগ বহিষ্কার করতে পারে না। বহিষ্কার করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের। সদস্য পদ যাবে কেবলমাত্র কেন্দ্র থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলে, অথবা সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হওয়া সম্পর্কে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যত্যয় ঘটলে।

৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনও নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হইয়া কোনও ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইলে, তিনি যদি- (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোনও নির্বাচনে সংসদ সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’

আর আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪২. (ছ) অনুচ্ছেদে বলা আছে- ‘প্রতিষ্ঠানের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ̈ব্যবস্থা গ্রহণ করিবার ক্ষমতা কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের থাকিবে।’

সুতরাং দলে কিংবা সংসদে রানার সদস্য পদ যাওয়ার মতো ঘটনা এখনও ঘটেনি, বলে জানান আওয়ামী লগের নেতারা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কোনও পর্যায়ের নেতাকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার একমাত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদই কেবল বহিষ্কারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে সাংগঠনিক জেলা কাউকে বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারে। তারা তাদের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠালে কার্যনির্বাহী  সংসদ তা বিচার-বিবেচনা ও আমলে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘রানার ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তা এখনও কেন্দ্রের কাছে আসেনি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সংসদের চিপ হুইপ আ স ম ফিরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা কমিটি কাউকে বহিষ্কার করতে পারে না। তারা বহিষ্কারের সুপারিশ করতে পারে।  জেলা কমিটি রানাকে বহিষ্কারের  গঠনতান্ত্রিক এখতিয়ার রাখে না।’

চিপ হুইপ বলেন, ‘জেলা কমিটি যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটি যদি রানাকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করে এবং তা স্পিকারকে অবহিত করলে,তখন স্পিকার তা হাউসে ঘোষণা দেবেন। তারপরই কেবল রানা সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ব্যরিস্টার শফিক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও সংসদ সদস্য দলীয় মনোনয়ন পান দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে, জেলা কমিটি কাউকে মনোনয়ন দিতে পারে না। সুতরাং সংসদ সদস্য পদ যেতে হলে তাকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তারপর স্পিকার রুলিং দেবেন। জেলা কমিটি বহিষ্কার করলেই সদস্য পদ চলে যাওয়ার কোনও কারণ নাই।’

ব্যারিস্টার শফিক আহমদ আরও  বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কেউ রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়ে ওই দল থেকে যদি পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন- তাহলে সংসদে তার সদস্য পদ শূন্য হবে। এমপি রানার ক্ষেত্রে সেরকম কিছু এখনও ঘটেনি।’

উল্লেখ্য,আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪২ ধারায় বলা আছে, ‘সংগঠনের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি— প্রদানের জন্য আওয়ামী লীগের নিম্নতম যে কোনও শাখা বা যেকোনও সদস্যের লিখিত অভিযোগপত্র পাওয়ার পর উপজেলা/ থানা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ নিজেদের সিদ্ধান্তসহ উক্ত অনুরোধপত্র জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট পাঠাইবেন। জেলা কার্যনির্বাহী সংসদ এ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া উক্ত বিষয় বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ̈বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করিবেন।’

৪২ এর  ‘ঞ’ উপধারায় বলা আছে, ‘ সংগঠনের যেকোনও শাখা তাহার যেকোনও কর্মকর্তা বা সদস্যকে দলের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য পদ বা দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে।’ আর ৪২ এর ‘ট’ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘যেকোনও বহিষ্কারের বিষয়ে জেলা কমিটির সুপারিশের পর কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক তদন্তে দোষী সাব্যস্ত— হইলেই কেবল চূড়ান্তভাবে বহিষ্কৃত হইবে এবং অপরাধ প্রমাণিত না হইলে তাহার শাস্তি মওকুফ হইবে। কার্যনির্বাহী সংসদ তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে, নতুবা শাস্তি— মওকুফ  বলিয়া গণ্য হইবে।’

এপিএইচ/

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যুবলীগ নেতার ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে যুবলীগ নেতার ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল