X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চিকিৎসকদের খেয়ালখুশি মতো ফি আদায়ের লাগাম টানবে কে?

জাকিয়া আহমেদ ও চৌধুরী আকবর হোসেন
১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:২১আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ২১:০৯

চিকিৎসকদের খেয়ালখুশি মতো ফি আদায়ের লাগাম টানবে কে?

দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বার ও ক্লিনিকে খেয়ালখুশি মতো ফি আদায় করছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে  বিভিন্ন টেস্ট করে রিপোর্ট দেখাতে গেলেও ফি দিতে হচ্ছে। সারাদেশে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব ধরনের চিকিৎসক ব্যক্তিগত চেম্বার, বিভিন্ন ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণে ১৯৮২ সালে একটি অধ্যাদেশ জারি করা হলেও পরবর্তীকালে তা সংশোধন করে বাদ দেওয়া হয়। রোগী দেখার ফি নির্ধারণে কোনও আইন না থাকায় চিকিৎসকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ফি নিচ্ছেন বলে মনে করছেন এ খাতের সেবাপ্রার্থীরা। তাদের মতে, চিকিৎকসদের ফি নির্ধারণ করে দেওয়া উচিত। না হলে রোগীদের ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, দেশে সেবামূলক কোনও পেশার ফি নির্ধারিত না থাকায় চিকিৎসকদের ফিও নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। 

জানা গেছে, রোগী দেখার বিভিন্ন পর্যায়ে চিকিৎসকদের ফি বিভিন্ন রকমের। এখন চিকিৎসক ভেদে প্রথমবার রোগী দেখতে ফি ৩০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়। আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখাতেও ১০০ থেকে ১০০০ টাকা গুনতে হয়। আগে এসব রিপোর্ট দেখাতে কোনও ফি নিতেন না চিকিৎসকরা। এছাড়া, সাত থেকে পনের দিনের মধ্যে পুনরায় একই রোগী দেখা করতে চাইলে তাকেও ফি ২০০ থেকে ১০০০ টাকা গুনতে হয়। অথচ আগে এক থেকে তিন মাসের মধ্যে পুরনো রোগীদের কাছ থেকে অর্ধেক ফি নেওয়া হতো।  

রোগীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ, সকালে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো বিভিন্ন টেস্ট করে বিকেলে বা পরের দিন  রিপোর্ট দেখাতে গেলেও ফি গুনতে হচ্ছে। তাদের অভিযোগ—অনেক সময় চিকিৎসকদের ফি আগে থেকেই ভালোভাবে জানানো হয় না রোগীদের।

কাজী আপেল নামের একজন সেবাপ্রার্থী বলেন, ‘আমার মাকে একজন  চিকিৎসক বিভিন্ন টেস্ট করার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী টেস্ট শেষে রিপোর্ট চিকিৎসক দেখিয়ে বের হওয়ার পর তার চেম্বার সহযোগী রিপোর্ট দেখানো বাবদ ফি দাবি করেন। কিন্তু রিপোর্ট দেখাতে টাকা লাগবে, এটি আগে থেকে জানানো হয়নি।’

রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, প্রায় চিকিৎসকদের ফি তালিকা চেম্বারের সামনে উল্লেখ থাকে না। ফি আদায় করে কোনও রশিদ দেওয়া হয় না। কোন চিকিৎসক কিসের ভিত্তিতে ফি নিচ্ছেন, তার কোনও নিয়মনীতি নেই। চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাক্টিসের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে রোগীপ্রতি ফি নির্ধারিত থাকা উচিত বলেও মনে করছেন সেবাপ্রার্থীরা।

এ প্রসঙ্গে সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক মহাসচিব ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনও পেশার মানুষের ফি সরকার নির্ধারণ করতে পারেনি। অতীতেও বিভিন্ন সরকার চেষ্টা করেছে ফি নির্ধারণের। কিন্তু কখনও তা করতে সরকার সক্ষম হয়নি। এ কারণে চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণের বিষয়টি তারা কোনোভাবেই মেনে নেবেন না। তবে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার খুব উচ্চমূল্য রয়েছে, সেগুলোর দিকে সরকার যদি নজর দেয় তাহলে রোগীরা উপকৃত হবে। কারণ, চিকিৎসকের ফি-এর চাইতে রোগীরা আর্থিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এসব উচ্চমূল্যের টেস্টের কারণে।

ওষুধের মূল্যও নিয়ন্ত্রণ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো ওষুধের যে মূল্য নির্ধারণ করে, সেগুলো ঠিক না। কারণ, একটি ওষুধ তৈরি করতে তাদের যে খরচ হয়, কোম্পানিগুলো এর প্রায় চারগুণের বেশি দাম নির্ধারণ করে।’     

চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণের জন্য ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশের একটি অংশ ছিল বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবুল কায়সার মাহমুদ সাইদুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরবর্তীকালে ওই অধ্যাদেশ সংশোধন করে ফি-এর বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। একজন চিকিৎসকের ফি কত হওয়া উচিত, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের কোনও পরিকল্পনা বা আদেশ নেই। আবার প্রথমবার রোগী দেখার পর দ্বিতীয়, তৃতীয় কিংবা পরবর্তীসময়ে কেমন ফি হবে, এমন কোনও নীতিমালাও এখন পর্যন্ত করা হয়নি।’ তবে চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণে একটি নীতিমালা করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, বিষয়টিকে কিভাবে একটি নিয়মের মধ্যে আনা যায়।’

আরও পড়ুন:

৭ খুন মামলা চলাকালে আলোচিত কিছু ঘটনা

 

যেভাবে ট্রাকের হেলপার থেকে ‘গডফাদার’

নূর হোসেনের সহযোগীরা এখনও সক্রিয়!

‘রা’ নেই নূর হোসেনের পরিবারে

/এমএনএইচ/আপ: এসটি

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
পুরান ঢাকার কেমিক্যাল কারখানা সরাতে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ওরসে ঝগড়া, সেই শত্রুতায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
ন্যাপ বাস্তবায়নে উন্নত দেশগুলোর প্রতি পর্যাপ্ত সহায়তার আহ্বান
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা