X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

লিটনের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে যথাযথ শাস্তি দেবো: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:৫৪আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:৪০

সংসদে প্রধানমন্ত্রী (ফাইল ছবি)

দলীয় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি সংসদ সদস্যসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রবিবার জাতীয় সংসদে লিটনের মৃত্যুতে আনীত শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় সংসদ নেতা হিসেবে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন। লিটনের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গ টেনে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, এই ধরনের ঘটনা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। আমরা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি।অবশ্যই লিটনের হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত ঠিকই আমরা তাদের ‍খুঁজে বের করবো। যথাযথ শাস্তি আমরা দেবো। সব সংসদ সদস্যসহ দেশবাসী সকলে নিরাপদে থাকুক সকলের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয় তার জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা আমরা করবো।

সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী চলমান সংসদের কোনও সদস্যের মৃত্যুতে তার জীবন ও কাজের ওপর আলোচনা করা হয়। অধিবেশন শুরুর পর সংসদ সদস্যরা মনজুরুল ইসলাম লিটনের জীবনের ওপর আলোচনা করেন। পরে শোকপ্রস্তাব সংসদে গ্রহীত হয়।প্রয়াতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া এবং এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

চলতি সংসদের এমপি লিটনের মৃত্যুতে রবিবার সংসদ অধিবেশন আধাঘণ্টার জন্য মুলতবি রাখা হয়।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী লিটন হত্যার জন্য বিএনপি জামায়াতকে দায়ী করেন। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে সারা দেশে তাণ্ডবের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। গাড়িতে পেট্রোল মেরে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। বিএনপি-জামায়াতের এই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে লিটন সুন্দরগঞ্জে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল। সুন্দরগঞ্জ ও তার আশাপাশের মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছিল। মনে হয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোটাই ছিল তার বড় অপরাধ। এজন্যই তাকে টার্গেট করা হয়। সারা বাংলাদেশে জামায়াত বিএনপির যে হত্যাযজ্ঞ তার সঙ্গে এ ঘটনার মিল রয়েছে।স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে লিটন।

লিটনের হত্যার কারণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘গোলাম আযম সুন্দরগঞ্জ গিয়েছিল মিটিং করতে, লিটন তাকে মিটিং করতে দেয়নি। আমরা যুদ্ধপরাধীদের বিচার করছি তারা সেই প্রতিশোধও নিতে যাচ্ছে। আমি প্রায়শ শুনি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী সংসদ সদস্য কোথায় কে একটু শক্ত হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাকে শেষ করে দাও। তাদেরকে হত্যা করো। এভাবে নানা পরিকল্পনা তাদের।’

আত্মরক্ষার্থে করা লিটনের ফাঁকা গুলিতে ২০১৫ সালে একজন শিশু আহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘লিটনের বিরুদ্ধে অপবাদ ছড়ানো হলো যে সে শিশুকে গুলি করেছে। ও কেন শিশুকে গুলি করবে? ওই শিশু সৌরভের বাবা আওয়ামী লীগ করতো। ওদের পরিবারের সঙ্গে সে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল। মূল কথা ছিল, ওখানে লিটনকে হত্যা করার জন্য (কেউ) ওঁৎ পেতে বসেছিল। তার ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল। আত্মরক্ষার জন্য সে ফাঁকা গুলি চালায়। ফাঁকা গুলি অনেক সময় গায়ে লাগতে পারে। সৌরভের গায়ে যে আঘাতটা লেগেছিল সেটা নিয়েও তো প্রশ্ন রয়েছে। শিশু হত্যা করতে গেছে বলে এই যে পত্রপত্রিকায় এমনভাবে সেটাকে লিখল, সত্য কথাটা কেউ সেখানে তুলে ধরলো না। আমার কষ্ট এই জন্য যে এই ঘটনার পর তার অস্ত্রগুলি সিজ করা হলো। এই ঘটনার পর ও (লিটন) বার বার বলেছিল যে ‘আমি যেখানে যাই সব সময় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে নিজেকেই চলতে হয়। যেকোনও সময় আমাকে মেরে ফেলে দেবে। তারসহ তার স্ত্রীর অস্ত্রটাও সিজ করা হলো। ওই বাড়িতে পুলিশ পাহারা ছিল, সেই পুলিশও ওইদিন ছিল না। নির্বাচনে পুলিশ লাগবে বলে তুলে নেওয়া হল। এই যে ঘটনাগুলি ঘটে গেছে আর যার ফলে ওর বাড়িতে ওর ঘরে ঢুকে ওকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।’

আলোচনায় সরকার দলের সিনিয়র সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, লিটনকে হত্যার মূল নায়ক হচ্ছে জামাত-শিবির-বিএনপি। এই হত্যার কোনও সাক্ষী লাগে না, কোনও প্রমাণ লাগে না।’ তিনি দাবি করেন, এ মামলার এক নম্বর আসামি হলো খালেদা জিয়া। তিনি খালেদাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাকে উত্তর দিতে হবে কেন তাকে (লিটনকে) হত্যা করা হল।’ সুরঞ্জিত সেন আসামিদের গ্রেফতারে ওই এলকায় চিরুনি অভিযান চালাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

লিটন হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিদের বিচারের মুখোমুখি করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘লিটনের হত্যাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করতে পুলিশ কাজ করছে। তার হত্যাকারী ও হত্যার পরিকল্পনাকারীকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা হবে।’

ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘লিটনকে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। একটি ছেলেকে গুলির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের মিডিয়া উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল। আমরা মিডিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিলাম। ডিসআর্ম হওয়ার কারণে তার এই পরিণতি হয়েছে। আমরা শত চেষ্টা করেও তার বা তার স্ত্রীর অস্ত্রটি ফেরত দেওয়াতে পারেনি। সেটা সম্ভব হলে হয়তো আজ আমরা লিটনকে হারাতাম না। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত চাই।’ বক্তব্যকালে ডেপুটি স্পিকার আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘সকলে মিলে বিশেষ করে মিডিয়া মনজুরুল ইসলাম লিটনকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমি এই সংসদকে বলবো সংসদ সদস্যদের যেন নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে দেওয়া না হয়। কোনও এমপিকে যেন একটি কাঁচা বাড়ি ভাঙ্গার মামলায় জড়ানো না হয়।’

চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ তার বক্তব্যে সব সংসদ সদস্যকে তাদের নির্বাচনি এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।

এছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মীর শওকত আলী বাদশা, শামীম ওসমান, মাহাবুব আরা গিনি, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।

লিটন ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, সাবেক গণ পরিষদ সদস্য আবুল হোসেন, মো. আব্দুল হাকিম, সাবেক সংসদ সদস্য জাফরুল হাসান ফরহাদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আকবর হাসেমি রাফসানজানি, ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জে. জয়ললিতা, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসএম রুহুল আমিন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান ছানা, নৃবিজ্ঞানী হেলাল উদ্দিন খান শামসুল আরেফিন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কবি ও লেখক এবং ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাহবুবুল হক শাকিলের  মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া রাশিয়ার সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়ে, তুরস্কে ইস্তাম্বুলে বোমা হামলায়, নাইজেরিয়ায় গির্জার ছাদ ধসে, মিসরের কায়রোতে গির্জায় বোমা হামলায়, জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ক্রিসমাস মার্কেটে লরি হামলায় এবং দেশে বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক করা হয়।

/ইএইচএস/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
চরের জমি নিয়ে সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী নিহত, একজনের কব্জি বিচ্ছিন্ন
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া