X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ভারত জোট বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে

শেখ শাহরিয়ার জামান
২২ জানুয়ারি ২০১৭, ২২:২৭আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০১৭, ২৩:৫৬

 

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-রাশিয়া চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতিতে এর প্রভাব নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ট্রাম্পের নেতৃত্বকে সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশকে লক্ষ করে কোনও নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চীন, ভারত ও রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এবং তার এশিয়া রিব্যালান্সিংনীতি বাংলাদেশের ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব ফেলবে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যদি বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে ওয়াশিংটন অবশ্যই দিল্লি ও মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। যা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ভারত জোট বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।’  

এদিকে, দীর্ঘ আট বছর ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করেছে বাংলাদেশ। এখন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে অন্তত সামনের চার বছর কাজ করতে হবে সরকারকে।

সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের গভীরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমরা রিপাবলিকানদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার প্রয়াস নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরস্পরকে সহযোগিতা করে থাকে।’ সামনের দিনগুলোতেও এটি অব্যহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ৮ নভেম্বর নির্বাচনের পরে পররাষ্ট্র সচিব যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। রিপাবলিকান দলের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করে আসেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক সম্পর্কের প্রভাব
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ।  যুক্তরাষ্ট্র শুধু বাংলাদেশকে লক্ষ করে কোনও নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্ত নেবে, এমনটা আশা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘চীন, ভারত, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এবং তার এশিয়া রিব্যালান্সিং নীতি বাংলাদেশের ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাব ফেলবে।’ তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যদি বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তবে ওয়াশিংটন অবশ্যই দিল্লি ও মস্কোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। যা বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। এছাড়া, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার এবং রাশিয়ার সঙ্গেও তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।’
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পর্কের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের সোজা অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনের রফতানি সীমিত করণ। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তার অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ বাংলাদেশ পূরণ করতে পারবে। অন্যদিক থেকে দেখলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকারের কারণে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়লে অবাক হওয়ার বিষয় থাকবে না।’
বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া-ভারত জোট বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে তিনি মনে করেন।

বাণিজ্যিক সম্পর্ক

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৭৮ টাকা ডলার হিসেবে বাংলাদেশ ৪৩ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। একইসময়ে আমদানি করেছে ছয় হাজার কোটি টাকার বেশি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজার হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি পণ্য সেখানে গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্কহারে রফতানি হয়। দেশটিতে প্রতিবছরই ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে, শুল্কের হারকে বাড়তে না দেওয়া। এরপর চেষ্টা থাকবে এটিকে কমানোর।’

চীনের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করার বিষয়ে ট্রাম্পের ঘোষণা প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে যে ধরনের পণ্য উৎপাদিত হয়, সেগুলো তারা ওই কারখানাগুলোতে উৎপাদন করতে পারবে না।’ উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে উৎপাদিত একটি শার্ট বা গেঞ্জি ১০ ডলারে বিক্রি হলে, সেটি  যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করতে খরচ হবে দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তারাই ওই পণ্য কিনবে না।’

চীনের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হলে একটি শূন্যতা তৈরি হবে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন,  ‘সেই শূন্যতা পূরণ করতে পারে বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম বা ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের রফতানি বাড়তে পারে।’  

প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইড ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়ে থাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্প অর্থায়নে। এর ওপর প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত  মার্কিন সরকার তাদের নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি বলা যাবে না।’

অভিবাসন
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন,‘পৃথিবীর প্রতিটি দেশ এমনকি বাংলাদেশও অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।’
বাংলাদেশ অবৈধভাবে মিয়ানমার নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিচ্ছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ প্রেক্ষাপটে যারা বৈধ তাদের কোনও অসুবিধা হবে বলে মনে হয়না।’
তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প বেশি করে আমেরিকানদের চাকরির কথা বলেছেন। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়বে ভারত ও চীন। কারণ, এইচ১বি ভিসা বা কর্মসংস্থান ভিসা নিয়ে সবচেয়ে বেশি যায় তাদের নাগরিকরা। আমাদের ছাত্ররা যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যায় এবং পরে সেখানে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। যেটি মার্কিন সমাজে একটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা কারণ যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে অভিবাসীদের দেশ।’

নিরপত্তা সহযোগিতা

নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একই। দুই দেশই এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে যে নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে, সেটির ব্যাঘাত ঘটার কারণ নেই। এটি আরও বাড়তে পারে।’  

 আরও পড়ুন: জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: রাষ্ট্রপতি

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী