X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিতে থাকা ঢামেক হাসপাতালে এবার পলেস্তারা খসার আতঙ্ক!

জাকিয়া আহমেদ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৭:৩০আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২০:০০

ঢামেকের বারান্দার ছাদের পলেস্তারা খসে রবিবার আহত হন একজন

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল রাজধানীর নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের জন্য নির্ভরতার আশ্রয়। কিন্তু, দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানটিতে সম্প্রতি রোগীর সেবার চেয়েও বড় ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে এর ১১৩ বছরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবন। এখানে ভর্তি হওয়া রোগীরা যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে যখনই এর ছাদের দিকে তাকান, তখনই আরও আঁতকে ওঠেন। এখানে চিকিৎসা করে সুস্থ হবেন নাকি তার আগেই ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে আরও ভয়াবহ কিছু ঘটবে এই চিন্তায় এখন আচ্ছন্ন এখানে ভর্তি হওয়া রোগী ও তার স্বজনরা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরনো ভবনটি (ভবন-১) ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে একথা পুরনো। তবে ভূমিকম্পের ঝুঁকির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে হাসপাতালের দেয়াল এবং সিলিং থেকে খুলে পড়া পলেস্তারার অংশ। হাসপাতালে অবস্থানরত রোগী, স্বজন এবং চিকিৎসকরা বলছেন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবনটি সংস্কারের কাজ চলমান।

গতকাল শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারি ঢামেক হাসপাতালের পুরাতন ভবনের তিনতলায় অবস্থিত নাক, কান, গলা (ইএনটি) বিভাগের ৩০৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দার দিকের পলেস্তারা খসে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগী গোলাপ রহমানের স্ত্রী রুচিয়া বেগম আহত হন। তার কপালে ২৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন গোলাপ রহমানের ভাগ্নে আব্দুর রহমান। তবে পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয় বলে জানিয়েছেন তিনতলায় অবস্থিত রোগী এবং চিকিৎসকরা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক,কান ও গলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই ভবনটি (পুরাতন ভবন) অনেক পুরনো, মাঝে মাঝেই দেয়াল থেকে, ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে, সিলিং ফ্যানও পড়েছে কয়েকবার। আমরা নিজেরাইতো আতঙ্কে থাকি এখানে কাজ করার সময়। অনেকবার রিপেয়ার (সংস্কার) করা হলেও এখন সময় এসেছে এটি ভেঙে হাসপাতালের জন্য নতুন ভবন গড়ার, নয়তো বড় বিপর্যয় হতে পারে যেকোনও সময়।

জানা গেছে, ঢামেক হাসপাতালের এই পুরনো ভবনটি নির্মিত হয় ১৯০৪ সালে।ভবনটির বেশির ভাগ দেয়ালই ইট দিয়ে তৈরি। আর ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে তদানীন্তন নির্মাণ শৈলি অনুযায়ী রেললাইনের স্লিপার। সে সময়ের দৃষ্টিনন্দন ভবনটি সময়ের সঙ্গে বুড়িয়ে গেছে, পাশাপিাশি হাসপাতালে দিনকে দিন রোগী বাড়ায় সেই রেল স্লিপারের ওপরেই নির্মিত হয়েছে সম্প্রসারিত ভবন। রোগীদের নিরাপদ আশ্রয় হওয়া ১১৩ বছরের পুরনো এই ভবনটি এখন নিজেই আর নিরাপদ নেই। প্রকৌশলীরা বলছেন, উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পে ভবনের সম্প্রসারিত অংশ ধসে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

ঢামেকের পুরনো ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কিনা জানতে চাইলে বুয়েটের পুরাকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহের আহমেদ আনসারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে পুরনো-নতুন মিলিয়ে বেশ কিছু ভবন রয়েছে। পুরনো ভবনগুলো ইটের তৈরি, ওগুলো অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ।

ঢামেকের বারান্দার ছাদ থেকে খসে পড়া পলেস্তারা। এমন ঘটনা ঘটছে মাঝেমাঝেই

এদিকে, গত বছরের ৬ এপ্রিল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। এগুলো যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো ভেঙে যুগোপযোগী ভবন নির্মাণ করা হবে। এরপরেই গত বছরের ২১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হাসপাতাল সম্প্রসারণ করে নতুন করে বহুতল ভবন নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেদিন তিনি হাসপাতালের মূল ভবন অক্ষত রেখে ওই ক্যাম্পাসে নতুন ভবন নির্মাণের নির্দেশনা দেন এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রকল্প হাতে নিতে।

এদিকে, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢামেক হাসপাতাল আধুনিকীকরণের কাজের পর্যালোচনাকালে কাজের ধীরগতি দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢামেক হাসপাতালের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবিলায় ঢামেক হাসপাতালের বর্তমান স্থাপত্য শৈলি অক্ষুণ্ন রেখে এর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বেশ কিছুদিন আগে নতুন নকশা উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। কিন্তু চূড়ান্ত নক্শা প্রণয়নসহ কয়েকটি কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন মন্ত্রী।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নাম প্রকাশ না শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, পুরাতন ভবনের ব্রিটিশ আমলের নির্মাণশৈলি বজায় রেখে নতুন করে ভবনটি নির্মাণে জটিলতা দেখা দিয়েছে। যার কারণে এ বিষয়ে সময় লাগছে। দেশি-বিদেশি স্থপতিদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানায় সূত্র।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. খাজা আব্দুল গফুর ভবনটি বহু পুরাতন উল্লেখ করে বলেন, ‘অনেক পুরাতন ভবন হওয়াতে বেশ কয়েকবছর ধরেই ভবনের বিভিন্ন স্থানে নানা ধরনের সমস্যা আমরা দেখে আসছি। এজন্য অতি দ্রুত এ ভবনের সংস্কার দরকার। আমাদের সাধ্যের ভেতরে যতটুকু পারছি আমরা করছি। গণপূর্ত বিভাগকে এ জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে চিঠি দিয়েছি, মৌখিকভাবেও বলা হয়েছে কয়েকবার। তারাও কাজ করছে। তবে যদি পুরোটাই ভেঙে ফেলতে হয় তাহলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ দরকার। কারণ, এই পুরাতন ভবনের সঙ্গে হেরিটিজ বিষয়টিও সংযুক্ত। প্রধানমন্ত্রী এর আগে এই হাসপাতাল নিয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই কাজ এগুবে।

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা