X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলার একাল-সেকাল: ‘মানসম্পন্ন বই অল্পই ভালো’

নুরুজ্জামান লাবু
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:০০আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:৪৭

বইমেলায় মানুষের ভিড় অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুরু ১৯৭২ সালে, মুক্তধারার প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে। ওই বছর বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে চট বিছিয়ে কয়েকটি বই নিয়ে বসেছিলেন তিনি। পরের বছরগুলোতে তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন প্রকাশক। ১৯৮৪ সালে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এই মেলা। তখন থেকেই বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানে আয়োজিত হয়ৈ আসছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ওই সময় ৫০-৬০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিত এই আয়োজনে। সময়ের পরিক্রমায় সেই মেলা এখন পরিণত হয়েছে জাতীয় উৎসবে। বাংলা একাডেমি চত্বরে স্থান জায়গা সংকুলান না হওয়ায় গত চার বছর ধরে মেলার পরিধি বাড়ানো হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলা সবার কাছে বইমেলা নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে।
লেখক-প্রকাশকরা বলছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলার পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ও পাঠক। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ওই সময়ের জনসংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। এই সময়ে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীও বেড়েছে। কিন্তু ৩৫-৪০ বছর আগে যে প্রত্যাশা নিয়ে বইমেলার শুরু, তা শতভাগ পূরণ হয়নি বলে মনে করেন তারা। তাদের মতে, আগে বইমেলার যে গাম্ভীর্য ছিল তা এখন কমে এসেছে।
লেখক-সাংবাদিক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন প্রকাশকরা চায় সংখ্যা বাড়াতে, মান নয়। এখনকার বইমেলায় হুজুগের মতো করে বই বের হয়। আগে অল্প বই বের হলেও তা ছিল মানসম্পন্ন। এখন বইমেলায় অংশ নিতে নির্দিষ্টসংখ্যক বইও লাগে। কিন্তু অনেক যাচ্ছেতাই বইয়ের চেয়ে ভালো বই অল্পও ভালো।’
বইমেলায় প্রবেশের দীর্ঘ লাইন গত কয়েক বছরে বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে, অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিণত হয়েছে উৎসবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বইমেলায় থাকে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারির মতো দিনগুলোতে এই ভিড় পরিণত হয় জনসমুদ্রে।
গতকাল মঙ্গলবারও (২১ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সী নারী-পুরুষের উপস্থিতি ছিল মেলায়। অনেকেই এসেছিলেন সপরিবারে। অন্য দিনগুলোর তুলনায় এদিন মেলায় বিক্রিও ছিল বেশি। তবে লোকসমাগমের তুলনায় মানুষের হাতে হাতে বইয়ের সংখ্যা ছিল কমই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের দিনগুলোতে মেলায় প্রকৃত পাঠকদের উপস্থিতিই ছিল বেশি এবং তাদের সবার হাতেই থাকত বই।
মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঠক বেড়েছে। অনেকগুণ বেড়েছে। জনসংখ্যাও তো বেড়েছে। বইয়ের বাজারও বেড়েছে। তবে সেটা সৃজনশীল বা মননশীল বইয়ের চেয়ে টেক্সটবুকই সেই বাজার বেশি দখলে রেখেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে প্রকাশকও কম ছিল, বই প্রকাশ হতো কম। এখন প্রকাশকের সঙ্গে বইয়ের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু বইয়ের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।’
দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশনা ব্যবসায় সম্পৃক্ত মাহমুদুল হক বলেন, ‘অনেক অনেক চকচকে বই প্রকাশিত হচ্ছে। এসব বই পাঠকদের প্রলোভিত করছে। কিন্তু এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এতে পাঠক ঠকছে, বইয়ের প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলছে। আর প্রকাশকরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ পাঠকরা ওই প্রকাশকদের বই কিনতে দ্বিতীয়বার ভাবছেন। এটা সার্বিকবাবে প্রকাশনা শিল্পের জন্য ক্ষতিকর।’
বইমেলায় কয়েকজন দর্শনার্থী প্রায় একই কথা বলেন লেখক জাকির তালুকদারও। তিনি বলছিলেন, ‘বইমেলাতেই বই প্রকাশ করতে হবে— এমন একটি মানসিকতা গড়ে উঠেছে। প্রকাশকরাও বিনামূল্যে প্রচারের সুযোগে এই মানসিকতাতে সায় দিয়ে থাকেন। এতে প্রকাশক, প্রকাশিত বই ও পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে। তবে প্রকৃত পাঠকের সংখ্যা ততটা বাড়েনি।’
জাকির তালুকদার আরও বলেন, ‘বর্তমানের বইমেলায় প্রকাশকদের এক ধরনের অসাধু ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে। এতে মানহীন বইয়ের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এই মান ঠিক করবে কে? এটা ঠিক করার কথা প্রকাশকদের, কিন্তু তারা তা করছেন না। ফলে মেলার পরিসর বাড়লেও এতে আদৌ লাভ হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।’
গত কয়েক ব্ছরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বইমেলায় প্রতিবছর তিন থেকে চার হাজার নতুন বই ছাপা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এত বইয়ের মধ্যে তিন থেকে চারশ বই মানসম্মত। বাকিগুলো শুধু সংখ্যা বাড়াতে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে কারও লাভ হচ্ছে না। এই প্রবণতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
প্রকাশক আহমেদ মাহমুদুল হক অবশ্য ততটা হতাশ নন। তিনি বলছিলেন, ‘ক্রমান্বয়ে বইয়ের কাটতি বেড়েছে। আমি মনে করি, সৃজনশীল বা মননশীল বইয়ের বাজার আরও বাড়বে। এটা সংকুচিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’ এছাড়া, এখনকার মেলায় আন্তর্জাতিক ছাপ রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

আরও পড়ুন-

ফেসবুকজুড়ে একুশের গান, একুশই প্রাণ

ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী সেই আম গাছটির শেষ রক্ষা হয়নি 

একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলে গেছে পুলিশ!

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা