X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাতক হিসেবে ‘আত্মহত্যা’ই শীর্ষে!

জাকিয়া আহমেদ
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:১৯আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ০৮:২২

আত্মহত্যার প্রতীকী ছবি

ডেটলাইন ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সেদিনের বড় ঘটনাগুলোর পাশে একটি অপমৃত্যুর সংবাদেও চোখ আটকে গিয়েছিল মনোযোগী পাঠকদের। আর তা হচ্ছে, গাজীপুরে একই রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে দু’জন নারী-পুরুষ আত্মহত্যা। প্রেমের কারণেই তারা আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। এমন ঘটনার সংবাদ অবশ্য নতুন কিছু নয় সংবাদকর্মী বা পাঠকদের কাছে। প্রতিবছর দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে যাওয়া এমন এক বা একাধিক খবর পাঠকের মনকে বিষণ্ন করে তোলে। প্রেমঘটিত কিংবা যে কারণই হোক না কেন এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। কিন্তু, দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি দিনই নানা কারণে দেশের আনাচে কানাচে ঘটেই যাচ্ছে আত্মহত্যার একের পর এক ঘটনা। স্বেচ্ছায় জীবনদানের এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানোর যেন কোনও উপায় নেই। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের এক জরিপে উঠে এসেছে, সব ধরনের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ ‘আত্মহত্যা’!

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ওই জরিপটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে ২০১৬’। এই জরিপ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা, পানিতে ডুবে মৃত্যু, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু, ভবন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনায় শিকার হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় শীর্ষে রয়েছে আত্মহত্যা। দেশের ১৬টি জেলায় পরিচালিত জরিপ থেকে এ তথ্য জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিষয়টি নিয়ে তারা আরও গবেষণা করতে চায়।

জরিপের তথ্য থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ১৭ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল প্রতিদিন গড়ে ৩০। ২০০৩ সালে একই সংস্থার জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৬ জন। সেই হিসাবে ১৩ বছরের ব্যবধানে ওই বয়সী শিশু-কিশোরদের আত্মহত্যার সংখ্যা বছরে ২,২১৮ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ১০,৯২১ জন।

জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে পূর্ণবয়স্কদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল প্রতিদিন ৩৬ জন। এ হিসাবে সারাবছরে আত্মহত্যার মোট সংখ্যা ছিল ১৩,২২৬ জন। এছাড়াও, গত বছর আত্মহত্যার চেষ্টা করে ১৫,৯৮১ জন।

জরিপ থেকে জানা যায়, যেকোনও বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা প্রতি লাখে ১৪ জন। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৮ জন, নারীদের মধ্যে ২১ জন। অন্যদিকে, ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যা ২৮.৮ জন, ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪৪.৯ জন, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৪.৩ জন, ২৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৩.৭ জন, ৪০ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ৩.৪ জন এবং ষাটোর্ধ্বদের মধ্যে ২১.৯ জন।

এদিকে, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। সে হিসাবে প্রতিবছর দেশে প্রায় ১০ হাজার মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগেরই বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। আর জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জরিপ বলছে, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।

জরিপে অন্যান্য দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি হলেও আত্মহত্যায় নারীদের সংখ্যা বেশি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের পরিচালক (অপারেশনস) ও জরিপ পরিচালনাকারী দলের সদস্য সেলিম মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যার এই প্রবণতা মূলত শুরু হয় বয়ঃসন্ধিকাল থেকে, যা গভীর উদ্বেগের কারণ।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারিবারিক নির্যাতন, কলহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরীক্ষা ও প্রেমে ব্যর্থতা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয়, মাদক প্রভৃতি ছাড়াও এখন অনেক তুচ্ছ কারণেই মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আত্মহত্যা করার বিভিন্ন উপাদান নাগালের মধ্যে থাকাও আত্মহত্যার সংখ্যা এত বেশি হওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখে।

বিশ্বায়নের এই সময়ে পারিবারিক বন্ধনের দৃঢ়তা কমে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগও কমে যাচ্ছে। এতে বাড়ছে বিচ্ছিন্নতার প্রবণতা। তা আত্মহত্যার প্রবণতাকে উসকে দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সারাবিশ্বেই তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে বলে জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু-কিশোর মানসিক রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান খান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। নানা কারণে তারা জীবনের প্রতি টান অনুভব করছে না। এ কারণে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে।’

আত্মহত্যা প্রতিরোধে পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্বের উল্লেখ করে ডা. জিল্লুর বলেন, ‘যেকোনও পরিস্থিতিতে পরিবার, কাছের মানুষসহ বন্ধু-স্বজনদের আক্রান্ত মানুষটির পাশে থাকতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে যেকোনও পরিস্থিতিতে তারা আপন মানুষটির পাশেই আছেন। অবহেলা করে নয়, ভালোবাসা দিয়েই বাঁচিয়ে রাখতে হয় মানুষকে।’

/টিআর/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!