X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসাবান্ধব সামরিক সমঝোতা স্মারক নিয়ে দর কষাকষি

শেখ শাহরিয়ার জামান
২২ মার্চ ২০১৭, ২৩:১৩আপডেট : ২৩ মার্চ ২০১৭, ০৯:৪২

বাংলাদেশ-ভারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে ব্যবসাবান্ধব সামরিক সহযোগিতা কাঠামোর সমঝোতা স্মারক নিয়ে দর কষাকষি করছে বাংলাদেশ ও ভারত। এছাড়া ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে ৫০ কোটি ডলার লাইন অফ ক্রেডিট বিষয়ক পৃথক একটি সমঝোতা স্মারক নিয়েও দর কষাকষি করছে দুই দেশের সরকার। দুই পক্ষের আলোচনায় রয়েছে চিটাগাং ড্রাই ডক, খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জ ড্রাই ডকের সঙ্গে ভারত ইলেকট্রনিক্স ও গার্ডেন রিপ শিপবিল্ডার্সের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারকের বিষয়টিও।
সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামরিক সমঝোতা স্মারকে নতুন দু’টি দফা যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া এই স্মারকে আর যেসব বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো আগে থেকেই কোনও ধরনের চুক্তি ছাড়াই সম্পাদন করে আসছে বাংলাদেশ ও ভারত।’
এ সমঝোতা স্মারকে যুক্ত করা নতুন দফা দু’টির একটি বাণিজ্য বিষয়ক এবং অন্যটি দুই দেশের সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা সচিবের মধ্যে বার্ষিক আলোচনা সংক্রান্ত বিষয়ক দফা।
বাণিজ্য বিষয়ক দফায় বলা হয়েছে, দুই দেশের সামরিক শিল্পের (ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি বা বেসরকারি খাতের যেকোনও প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে টিকে থাকতে সক্ষম, প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য সরবরাহ, গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং দুই দেশের জন্য লাভজনক— এমন জয়েন্ট ভেঞ্চার বা অন্যান্য ব্যবসা করতে পারবে। তবে এ ধরনের জয়েন্ট ভেঞ্চারে তৃতীয় কোনও পক্ষ থাকলে ওই পক্ষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে এই দফায়।
সামরিক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো— বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ), চিটাগাং ড্রাই ডক, খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়ণগঞ্জ ড্রাই ডক। ভারতেরও বেশকছু সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামরিক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
স্মারকে নতুন করে যুক্ত করা দফায় রয়েছে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও প্রতিরক্ষা সচিবের মধ্যে নিয়মিত বার্ষিক আলোচনা হওয়ার বিষয়টি। স্মারকে যুক্ত থাকা অন্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশিক্ষণ, যৌথ মহড়া, তথ্য বিনিময় এবং অন্যান্য সহযোগিতা। এগুলো কোনও ধরনের চুক্তি ছাড়াই দু’দেশের মধ্যে সম্পাদিত হচ্ছে।
এ সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ কত দিনের জানতে চাইলে সরকারের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি স্বল্পমেয়াদের জন্য হবে। তবে কোনও পক্ষ বাধা না দিলে অটো রিনিউয়াল শর্তের আওতায় স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর মেয়াদ বাড়বে।’ এর আগে, ২০০২ সালে সামরিক খাতে কারিগরি সহায়তায় অটো রিনিউয়াল বিধান রেখে বাংলাদেশ ও চীন সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছিল পাচঁ বছরের জন্য। ওই স্মারক এখনও বলবৎ আছে।
এদিকে, ৫০ কোটি ডলার লাইন অব ক্রেডিট দিয়ে বাংলাদেশ কী ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কিনতে পারে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ভারত প্রতিযোগিতামূলক দামে সরবরাহ করলে এবং অন্য শর্তাবলী মেনে নিলে প্রয়োজন অনুযায়ী পণ্য কেনা হবে।’
প্রসঙ্গত, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-২০১৬ মেয়াদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ছিল ভারত। তারা তাদের অস্ত্র কেনার জন্য রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে বাংলাদেশ বেশিরভাগ অস্ত্রই সংগ্রহ করে চীন থেকে। এছাড়া, রাশিয়া ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ থেকেও অস্ত্র সংগ্রহ করে থাকে বাংলাদেশ। এবার ৫০ কোটি ডলারের লাইন অব ক্রেডিট দিয়ে ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার পথে এগিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ।
দুই দেশের মধ্যে সামরিক সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর হবে কিনা জানতে চাইলে সরকারের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সামরিক বিষয়ে কোনও ধরনের চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না এর ভবিষ্যৎ কী।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ নভেম্বর দুই দিনের সফরে প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর। ওই সফরে তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সামর্থ্য ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন কিছু উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন। একই সময়ে তিনি সামরিক চুক্তি করার প্রস্তাব করলেও পরে সামরিক সমঝোতা স্মারক নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়।
মনোহর পারিকর প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। সফরে তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ সেনা ও বিমান বাহিনীর প্রধান, কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পারিকরের ঢাকা সফরের সময় ভারতীয় দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, যৌথ মহড়া, এইচএডিআর কার্যক্রম বাড়ানো ও ব্লু ইকোনমি নিয়ে পারিকরের আলোচনা হয়েছে।
/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
৫ বছর বন্ধ সুন্দরবন টেক্সটাইল, সংকটে শ্রমিকরা
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২০ এপ্রিল, ২০২৪)
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া