X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৯৭১: বছরজুড়ে গণহত্যা

উদিসা ইসলাম ও হেদায়েৎ হোসেন
২৫ মার্চ ২০১৭, ২২:২১আপডেট : ২৫ মার্চ ২০১৭, ২২:৩৪

 

গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ ১৯৭১ সাল, বছরজুড়ে ছিল গণহত্যা। বাংলার নানা প্রান্তে গণহত্যার নজির ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এখনও জীবিতরা সেসব বর্বরতার কথা বলেন। ২০১০ সালের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এবং একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সুরক্ষিত রাখার খবরে তাদের মনে আশা জাগে। আবার অনেক গণহত্যার জায়গা সুরক্ষিত না করতে পারার কষ্টও আছে অনেক মুক্তিযোদ্ধার।

গণহত্যা

চুকনগরে গণহত্যা

১৯৭১ সালের ২০ মে। এদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১০ থেকে ১২ হাজার সরণার্থীকে হত্যা করে।  স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চুকনগরের গনহত্যা এক কালো অধ্যায় হয়ে রয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনী এ দেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর প্রাথমিকভাবে শুরু হয় বাঙালিদের প্রতিরোধ যুদ্ধ।১৯৭১ এর ১৯ মে বিকাল থেকে খুলনা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বাস্তুহারা মানুষ ভারতে যাওয়ার আগে চুকনগর বাজার ও আশপাশ এলাকায় জড়ো হয়। ২০ মে সকালে চুকনগর হাইস্কুল, বাজার, চাঁদনী ও পাতাখোলা বিল এলাকায় সমবেত নারী-পুরুষ পরিবার পরিজন নিয়ে খাবার রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এর মধ্যেই সাতক্ষীরা থেকে পাক বাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি চুকনগরে এসে থামে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই মেশিন গান ও রাইফেলের গুলি চালতে থাকে। অর্ধমৃত ব্যক্তিদের বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে হত্যা করা হয়। জীবন বাঁচাতে দৌড়ে পালানোর সময় মানুষ নদীতে পরে ডুমে মারা যায়। ধারণা করা হয়, সেদিন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়।

গণহত্যা স্মৃতিস্তম্ভ

পাগলাদেওয়ানে গণহত্যা

পাগলা দেওয়ানে ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহীনি ক্যাম্প ও বাঙ্কার । ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে জয়পুরহাটে পাক বাহিনীর আক্রমণ শুরু হয় এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে। জয়পুরহাট শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন প্রায় দশ হাজার নিরীহ বাঙ্গালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে গণ কবর দেওয়া হয় এ পাগলাদেওয়ান বধ্যভূমিতে। জয়পুরহাটের এই হত্যাকাণ্ডলোতে প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছিল আলবদর বাহিনীর প্রধান আব্দুল আলীম। আলীম মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যায়।

দিঘলিয়া গণহত্যা স্মৃতিস্মারক

দিঘলিয়া গণহত্যা

১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট খুলনার দিঘলিয়ায় পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিরীহ ৬০ জন গ্রামবাসী নিহত হন। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও শহীদ পরিবারগুলোর খোঁজ কেউ রাখেনি। লোমহর্ষক ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তি সৈয়দ আবুল বাসার। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও কোনও সরকার শহীদদের গণকবর সংরক্ষণের উদ্দোগ নেয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট ভোর রাতে সাবেক ছাত্রনেতা শেখ আব্দুর রহমান তার দলবল নিয়ে উপজেলার দেয়াড়া নিজ গ্রামে অবস্থান করছিলেন। এ খবর পেয়ে কয়েক’শ রাজাকার, বিহারী ও পাক-হানাদার বাহিনী তার বাড়িসহ গোটা এলাকা ঘিরে ফেলে। ওই বাড়ি থেকে একই পরিবারের ৬ সদস্যকে (ডা. মতিয়ার রহমান, তার চাচাতো ভাই পিরু ও আলী, ভাগ্নে ইসমাঈল হোসেন ছোট খোকা, জামাই আব্দুল জলিল, সহোদর আব্দুল বারিক, হোসেন সরদার, মো. আজিম হোসেন, সাত্তার শেখ , পরা মনিক) ধরে নিয়ে যায় হানাদাররা। একই রাতে গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও ৫৫ জনকে ধরে নিয়ে যায়। সকাল নটার দিকে দেয়াড়া বিহারী কলোনীর পৃথক তিনটি স্থানে তাদের গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। রাজাকাররা ২২ জনের লাশ পৃথক তিনটি স্থানে গণকবর দেয়। বাকি লাশগুলো পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদীতে ভাসিয়ে দেয়।

বুধপাড়া বধ্যভূমি

রাজশাহীর বুধপাড়ায় গণহত্যা

১৯৭১ সালে পুরো রাজশাহী বিভাগ জুড়েই পাকবাহিনী নারকীয় হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যা ঘটে। বোয়ালিয়া থানার ২৫ গজ দূরে ঠিকাদার মুসলিম শাহ’র দ্বিতল বাড়ির পেছনে রয়েছে একটি বধ্যভূমি। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসলিম শাহ সপরিবারে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। এই সুযোগে তার বাড়িটি আলবদররা দখলে নিয়ে সেখানে ক্যাম্প গড়ে তোলে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে অসংখ্য নারী-পুরুষকে ধরে এনে নির্যাতন চালানো হয়।

যুদ্ধ শেষে বুধপাড়ার বধ্যভূমি  থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েকশ নারী-পুরুষের হাড় ও কঙ্কাল। রাজশাহীর বোয়ালিয়া, কাটাসুর, শিয়ালবাড়ি এবং গোদনাইলের পাশ দিয়ে আরও একটি বধ্যভূমির সন্ধান মিললেও কেবল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বুধপাড়া এলাকার বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

/ইউআই/এসএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
আইসিসি এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার সৈকত
অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে ভুটানের রাজার সন্তোষ প্রকাশ
অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে ভুটানের রাজার সন্তোষ প্রকাশ
ট্যুর অপারেশনে ব্যাংকে থাকতে হবে ১০ লাখ টাকা
ট্যুর অপারেশনে ব্যাংকে থাকতে হবে ১০ লাখ টাকা
এনভয় টেক্সটাইলসের ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা
এনভয় টেক্সটাইলসের ২৮তম বার্ষিক সাধারণ সভা
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে