X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতা যুদ্ধে আমলাদের ভূমিকা

শফিকুল ইসলাম
২৭ মার্চ ২০১৭, ১৩:১২আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০১৭, ১৬:৪২

স্বাধীনতা যুদ্ধ

মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। আমলাদেরও অনেক অবদান আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন বেশ কয়েকজন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচএম মাহমুদ আলী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মরহুম এএসএইচকে সাদেক, সাবেক অর্থ সচিব এম মতিউল ইসলাম। তারা প্রত্যেকে ছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস (সিএসপি) অফিসার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মিশনে পাকিস্তানের ভাইস-কনসালের দায়িত্বে ছিলেন ২৮ বছর বয়সী মাহমুদ আলী। ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেন তিনি।  পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত আদায়ে সোচ্চার ছিলেন। বর্তমানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মাহমুদ আলীই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করা প্রথম কূটনীতিক।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবদানও কম নয়। ১৯৫৬ ব্যাচের সিএসপি কর্মকর্তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে ইকোনমিক কাউন্সিলরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ৩০ জুন তিনি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেছিলেন। এরপর বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরি ও সমর্থন আদায়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ স্থাপন এবং সমর্থন আদায় করেছিলেন আবদুল ‍মুহিত।

মাহমুদ আলী ও আবদুল মুহিতের আগেই অবশ্য দুজন আমলা পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৬ এপ্রিল ভারতের নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান দূতাবাসের  সেকেন্ড সেক্রেটারি কেএম শিহাব উদ্দিন ও অ্যাসিসট্যান্ট প্রেস অ্যাটাশে আমজাদুল হক চাকরি ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ শুরু করেন। এরপর কলকাতায় ডেপুটি হাই কমিশনার হোসেন আলী ও থার্ড সেক্রেটারি আনোয়ারুল করিম এবং লন্ডন দূতাবাসের মহিউদ্দিন আহমেদও পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেন।

সিএসপি কর্মকর্তা এম সাইদুজ্জামান, এএসএইচকে সাদেক, এম মতিউল ইসলামও  পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেছেন। তারা শুধু পাকিস্তান সরকারের চাকরিই ছেড়ে দেননি, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন,  বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে বাংলা ট্রিবিউন যোগাযোগ করেছে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করা কয়েকজন আমলার সঙ্গে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরে গর্বিত। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে পারা অহঙ্কারের। আর পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করতে পারা সৌভাগ্যের। আমি সেই সৌভাগ্যের অধিকারী।’

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান ও এম কে আনোয়ার অবশ্য অসুস্থতার কারণে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।

সবাই অবশ্য পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করেননি। কয়েকজন বাঙ্গালি আমলা ছিলেন, যারা পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। জানা গেছে, ‘ম’ আদ্যাক্ষরের এক আওয়ামী লীগের এবং ‘আ’ আদ্যাক্ষরের এক বিএনপি নেতা বাংলাদেশের মন্ত্রী ছিলেন। দুজনই এখনও রাজনীতি করেন। প্রথমজন দশম জাতীয় সংসদের সদস্য, অন্যজন বর্তমান সংসদে না থাকলেও একাধিকবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে তারা ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার প্রশাসক ছিলেন।  পাকিস্তান সরকারের করা রাজাকারদের তালিকায় স্বাক্ষর করার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।

প্যাপিরাস প্রকাশনী প্রকাশিত জয়ন্ত কুমার রায় ও অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন রচিত ‘প্রশাসনের অন্দরমহলঃ বাংলাদেশ’ গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ‘১৯৫৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসকে ক্লাস ওয়ান গ্রেডের সঙ্গে একত্রিত করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মেহেরপুর জেলার মুজিব নগরে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার। সেই সময়ে বাংলাদেশের কিছু আমলা পাকিস্তান সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে মুজিব নগরের প্রবাসী সরকারে যোগ দিয়েছিলেন। পাকিস্তানে আটকে পড়া সিনিয়র বাঙ্গালি আমলারা যখন দেশে ফিরেছিলেন, তখন মুজিব নগর সরকারে যোগ দেওয়া আমলাদের আধিপত্যে তারা কোণঠাসা হয়েছিলেন, বিষয়টি তাদেরকে অনেক ক্ষুব্ধ করেছিল। এছাড়াও তাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ ছিল। তা হলো, তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হতো যে যারা মুজিব নগর সরকারে যোগ দিয়েছিলেন, তারাই দেশ প্রেমিক, বাকিরা কোলাবরেটর। তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা ও কোলাবরেটররাই একে অপরকে তখন দোষারোপ করতে লাগলেন।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আমলা জানিয়েছেন, বিষয়টি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও দীর্ঘ সময় প্রশাসনকে অদৃশ্যভাবে আলাদা করে রেখেছিল।

মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক আমলাই চাকরি হারানোর ভয়ে পাকিস্তান সরকারের  আনুগত্য ত্যাগ করতে পারেননি। তাদের অনেকেই বেঁচে আছেন এখনও। তবে ‘কতজন বাঙালি আমলা পাকিস্তান সরকারের পক্ষে কাজ করেছিলেন?’ প্রশ্নের জবাব দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ বিষয়টি ‘রাজনৈতিক’ বা ‘স্পর্শকাতর’ বলে এড়িয়ে গেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান প্রশাসনের শীর্ষ পদে কাজ করা বাঙালি কর্মকর্তার সংখ্যা ছিল খুবই কম। তাদের কারও কারও কর্মস্থল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যারা প্রশাসনে ছিলেন, তাদের মধ্যে যতটা দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ দেখা যেত, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশাসনে কাজ করা কর্মচারীদের মধ্যে ততটা দেখা যেত না। তার অবশ্য কারণও আছে। পশ্চিম পাকিস্তানে চাকরি হারানো বা অন্য কোনও শাস্তির ভয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মুখ খুলতে পারতেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর নির্দেশ মানতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এএআর/আপ-এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ থাকবে চুয়েট, হলে থাকতে পারবেন শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী