X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লা নির্বাচন: বাহারের টার্গেট ১৮ ওয়ার্ড

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২৯ মার্চ ২০১৭, ০৬:০০আপডেট : ২৯ মার্চ ২০১৭, ০৮:০৫

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন কুমিল্লার স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের টার্গেট ১৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলর। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে (কুসিক) ৩০ মার্চের ভোটে এই ১৮ ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে জেতাতে মরিয়া বাহার নিজে ও তার অনুসারীরা। এরই মধ্যে নির্বাচনি কৌশল নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন সদর আসনের এই সংসদ সদস্য।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বাহারের কর্মীরাও অনেক ভোটারের দরজায় গিয়ে বলছেন, ‘মেয়র যেই হোক, কাউন্সিলর আমাদের হওয়া চাই।’ সর্বশেষ গত রবিবার ১৫ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে নিয়ে বাহার নিজে বৈঠক করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আফজল হোসেনের মেয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা নৌকার প্রার্থী হওয়ায় একটু বেকায়দায় পড়তে হয়েছে বাহারকে। তাই সীমা যদিও জিতেও যায়, কাউন্সিলর হিসেবে নিজের লোকদের বিজয়ী করে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টায় রয়েছেন তিনি।
তবে প্রকাশ্যে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কুমিল্লার রাজনীতির এই প্রভাবশালী নেতা। আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে কারও কারও মিথ্যাচার। আমি এসবের সঙ্গে নাই।’
মেয়র প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার সঙ্গে দূরত্ব আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। দূরত্ব থাকবে কেন? তাকে বিজয়ী করতে সবাই কাজ করছে, ইনশাল্লাহ সেই জিতবে।’
মেয়র প্রার্থীর ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি দলের বাইরে নই, আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারি না।’
তবে ঢাকা থেকে নির্বাচনি প্রচারণায় যাওয়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, সেখানে এখন পর্যন্ত বাহার ‘ফ্যাক্টর’। আমরা জেনেছি, বাহার ও তার অনুসারীরা মেয়রের বিজয়ের চেয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিজয়ী করতে বেশি সরব।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। সবগুলো ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বাহারের আসন নিয়ে প্রায় ১৮টি ওয়ার্ড রয়েছে। প্রায় সব ক’টি ওয়ার্ডেই তার আশীর্বাদপুষ্ট কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে বাহারের বিশেষ দৃষ্টি ১৮টি ওয়ার্ডে। এখানকার ১ থেকে ১৮ নম্বর পর্যন্ত ওয়ার্ডগুলোতে আশীর্বাদপুষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিজয়ী করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি । তবে এ ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১২, ১৬ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী রয়েছে।
আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এ প্রসঙ্গে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আসলে কাউন্সিলর নির্বাচন দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হয় না। এটা সম্পূর্ণ সামাজিক জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। এখানে অন্য মানসিকতার লোকও নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন। তবে দলীয় লোকজনই যাতে বেশি নির্বাচিত হন সেই জন্যে কিছুটা চেষ্টা করছি।’
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী কাউন্সিলরদের নিয়ে সংসদ সদস্য বাহার ঢাকাসহ কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেছেন। তার অনুসারীরাও কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু আওয়ামী লীগের প্রথম টার্গেট কাউন্সিলর নয়, মেয়র। তাই মেয়রের পক্ষেই নির্বাচনি কৌশল ব্যবহার করতে বাহারকে কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছে।
ওই দুই নেতা আরও বলেন, ‘বাহারকে সরাসরি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়রের পক্ষে কাজ করতে। এর অন্যথা ঘটলে বাহারকে বড় আকারে মাসুল দিতে হবে।’
যে ওয়ার্ডগুলোতে বিশেষ দৃষ্টি বাহারের
বিষ্ণুপুর, ভাটপাড়া এলাকা নিয়ে গঠিত ১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থনে জিয়াউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী তারেক লড়ছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর কাজী গোলাম কিবরিয়ার বিপক্ষে। এ ওয়ার্ডে বিএনপির কোনও প্রার্থী নেই। ছোটরা এলাকা নিয়ে গঠিত ২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুদুর রহমান মাসুদ। আর বিএনপির প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো. বিল্লাল। কালিয়াজুরি শাসনগাছা এলাকা নিয়ে গঠিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন— সাবেক কাউন্সিলর সরকার মাহমুদ জাবেদ, মো. আশরাফুজ্জামান পিয়াল ও এনামুল হক ভূইয়া। এ ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী মো. শাহজাহান।
জাহাননগর, কাপ্তানবাজার ও ইসলামপুর এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাসির উদ্দিন নাজিম। আর বিএনপির প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মোসলেম উদ্দিন। গাংচরের একাংশ, রাজগঞ্জ, মনোহরপুর ও গঙ্গাগঞ্জের একাংশের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর একে সামাদ সাগর। বিএনপির প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের সাবেক কাউন্সিলর কোহিনুর আক্তার কাকলি। গাংচরের একাংশ, চানপুর, শুভপুর, চকবাজার ও গঙ্গাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিএনপির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম। এ ওয়ার্ডে জামায়াত নেতা সাবেক কাউন্সিলর মোশারফ হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
গোবিন্দপুর ও অশোতলার একাংশ নিয়ে গঠিত ৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মো. শাহ আলম খান। বিএনপির মো. আবুল হোছাইন। অশোকতলার একাংশ ও দ্বিতীয় কান্দিরপাড়ের একাংশ নিয়ে গঠিত ৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল কামালের সঙ্গে লড়ছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ একরাম হোসেন। এ ওয়ার্ডে বিএনপির কোনও প্রার্থী নেই। বাগিচাগাঁও এলাকা নিয়ে গঠিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর জমির উদ্দিন খান জম্পি ও বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিলন।
ঝাউতলা, কান্দিরপাড়, বাগিচাওগাঁওয়ের একাংশ নিয়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সাবেক কমিশনার হেলাল উদ্দিন আহমেদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। এ ওয়ার্ডে বিএনপির কোনও প্রার্থী নেই। মনোহরপুর ও উত্তর চর্থার একাংশ নিয়ে গঠিত ১১ নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রার্থীর মধ্যে হাবিবুর আল আমিন সাদী আওয়ামী লীগ সমর্থিত। আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হলেন সাবেক কাউন্সিলর আহমেদ শোয়েব সোহেল। বজ্রপুর ও উত্তরচর্থার একাংশের এলাকা নিয়ে গঠিত ১২ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাজী জিয়াউল হক মুন্না। এ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হলেন মো. ইমরান বাচ্চু।
দক্ষিণ চর্থার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাউয়ুম খান বাবুল এবং বিএনপির প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর শাখাওয়াত উল্লাহ। দ্বিতীয় মুরাদপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ও বিএনপির সাবেক কাউন্সিলর সেলিম খান। বজ্রপুরের একাংশ ও প্রথম মুরাদপুর নিয়ে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মো. রোকন উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী সাইফুল বিন জলিল।
টিক্কাচর ও সংরাইশ এলাকা নিয়ে গঠিত ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই প্রার্থী হলেন সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন খোকন ও নতুন মুখ জাহাঙ্গীর আলম বাবুল ওরফে মুহুরী বাবুল। এ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কোনও প্রার্থী নেই। দ্বিতীয় মুরাদপুরের একাংশ ও সুজানগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর মধ্যে সাবেক কাউন্সিলর মো. সোহেল আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও সাবেক কমিশনার দেলোয়ার হোসেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। নুরপুর ও দ্বিতীয় মুরাদপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এ ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সাবেক কাউন্সিলর শওকত আকবর, সাবেক কমিশনার আফসান মিয়া, মোহাম্মদ হোসেন বাবর ও রাজু আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আরও পড়ুন-

কুসিক নির্বাচন: শেষ হলো প্রচারণা
 
কুসিক নির্বাচন: শেষ দিনের প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন প্রার্থীরা
 
কুমিল্লা সিটি নির্বাচন: সংঘর্ষের ঘটনায় কাউন্সিলর প্রার্থী গ্রেফতার
 
'কুসিক নির্বাচনে নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে বিজিবি বদ্ধপরিকর’



/টিএন/আপ-টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
সেতুমন্ত্রীর মানহানির অভিযোগে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বিরুদ্ধে জিডি
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
দাফনের ১৫ দিন পর তোলা হলো ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
ফসলের মাঠে সোনারঙ, তীব্র গরমেও কৃষকের মুখে হাসি
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা