X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কওমির দাওরায়ে হাদিস মাস্টার্সের সমমান: বাকি স্তরগুলোর কী হবে?

এস এম আববাস
২০ এপ্রিল ২০১৭, ১০:০৯আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:১৭

ছবি: সংগৃহীত কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণায় কওমিপন্থীরা উচ্ছ্বসিত হলেও দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা এর ভবিষ্যৎ ও কার্যকর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, কওমির সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণার আগে এই শিক্ষাপদ্ধতির প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরের মান নির্ণয় করা উচিত ছিল। মান নির্ণয়ের আগে প্রয়োজন ছিল প্রতিটি স্তরের পাঠ্যসূচি-পাঠ্যক্রম সংস্কার করা। তারা বলছেন, সরকার দেশের শিক্ষাবিদ থেকে শুরু বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)—কারও সঙ্গে আলোচনা না করেই এই স্বীকৃতি দেওয়ায় কওমি সনদের বাকি স্তরগুলোর মান-সিলেবাস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফলে শিগগিরই কওমির প্রাথমিক পর্যায় (মক্তব) থেকে শুরু করে স্নাতক পর্যন্ত—প্রতিটি স্তরের শিক্ষাক্রম সংস্কার করে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে হবে। না হলে কওমি শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষার আলোয় আনার পরিবর্তে উল্টো আরও অন্ধকারেই ঠেলে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতি আল্লাম শাহ আহমদ শফীসহ কওমিপন্থীরা দেখা করতে যান। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান ঘোষণা করেন। এরপর গত ১৩ এপ্রিল দাওরায়ে হাদিসকে ইসলামিক স্টাডিজ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে মাস্টার্সের সমমান স্বীকৃতি দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ গেজেট প্রকাশ করে। পাশাপাশি প্রজ্ঞাপনও জারি করে সরকার।
জানা গেছে, সরকারের গেজেট প্রকাশের দিনই আল্লামা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে সর্বোচ্চ সংস্থার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সংস্থা বা বোর্ডই দাওরায়ে হাদিসের (মাস্টার্স) সনদ দেবে।
এই প্রসঙ্গে কথা হয়, শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এর কী যুক্তি আমি জানি না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনা করে দিলেন, নাকি প্রধানমন্ত্রী নিজেই দিলেন, সে তথ্য আমার জানা নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পড়াশোনা হয়, তা থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা।’ চলমান শিক্ষাব্যবস্থায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চালেডালে মিশে গেল। একজন নাগরিক হিসেবে আমার মনে হয়, যে শিক্ষা আমরা পেয়েছি, তা থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। তারা কী পড়ায়, কিছুই দেখা হলো না, জানা হলো না, তুলনা করা হলো না, কোনও সংস্কার প্রয়োজন কিনা, তাও না দেখেই স্বীকৃতি দেওয়া হলো। এভাবে একটি শিক্ষা চলতে পারে না।’
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার বিষয়ে ইউজিসির সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। যেকোনও শিক্ষাই জনকল্যাণের জন্য হতে হবে। মাদ্রাসার কোনও বিষয় নিয়ে কথা হয়নি। তবে এটিকে কিভাবে কার্যকর করা যায়, তা দেখতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী সেখানে লেখাপড়া করেন, তাদের ফেলে দেওয়া যাবে না। তাদের যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।’
শিক্ষাবিদ ড. হায়াৎ মামুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার মূল স্রোতধারায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতে কওমি শিক্ষকদের সহমর্মী হতে হবে। নাহলে চাপিয়ে দিয়ে লাভ হবে না। যদি তারা মূল স্রোতধারায় না আসে, তাহলে সনদ নিয়েও তারা কোনও সুবিধা করতে পারবে না। কোনও লাভ হবে না। বিজ্ঞান শিক্ষা প্রয়োজন অন্ধ লোকও বোঝে। তারা যদি না বোঝে, তাহলে কওমি শিক্ষার সমস্যা কওমিপন্থীরাই। এ সমস্যা সরকারের নয়। যদি তারা না চায়, না করবে। তারা চাকরিসহ কোনও সুযোগই পাবে না। তাই কওমি শিক্ষার সব স্তর সংস্কার করে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় আনতে হবে। সংস্কারের পরই প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরকে স্বীকৃতি দিতে হবে।’
শিক্ষাবিদ ড. অধ্যাপক শফিউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থাকে মধ্যযুগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু শিক্ষাব্যবস্থা নয়, পুরো দেশকেই অন্ধকারে নিয়ে যাবে। শিক্ষার পরিবেশ নেই, সিলেবাস নেই, উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষক নেই, সার্টিফিকেট দেবে কোন বিশ্ববিদ্যালয়? তার কোনও হিসাব নেই। এভাবে একটি শিক্ষাব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সনদের স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক শিক্ষায় হয়তো কওমিন্থীরা আসতে পারে। কিন্তু ধাপেধাপে কওমি শিক্ষার সংস্কার না করে, প্রাথমিক-মাধ্যমিক-স্নাতকের মান-নির্ধারণ না করে হঠাৎ উচ্চশিক্ষা কেন? তাদের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নেই। শিক্ষকও নেই। স্নাতকোত্তর পাসের জন্য কার্যকর পরিবেশ নেই। উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের সিলেবাস নেই। উচ্চশিক্ষা দেওয়ার শিক্ষক নেই। তাহলে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে উত্তোরণ ঘটবে কিভাবে?’

আরও পড়ুন:  উত্তরার হোটেলে নিহত নারীর শিশুনাতনি 'হত্যাকারীর' কাছে!

/এমএনএইচ/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আসা ৫ টন কফি পাউডার জব্দ
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
শিশুকে পালাক্রমে ধর্ষণের অভিযোগে ৪ কিশোর সংশোধনাগারে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন