X
মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
৩ বৈশাখ ১৪৩১

হকারদের দখলে ধানমণ্ডি লেক ও ফুটপাত

আবু হায়াত মাহমুদ
২০ এপ্রিল ২০১৭, ২২:৩২আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:৩৫

রবীন্দ্র সরোবরে খাবারের দোকান রাজধানীর ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার বড় অংশ জুড়ে অবৈধভাবে ব্যবসা করছে প্রভাবশালী রাজনৈতিক একটি চক্র। তাদের মধ্যে আছেন স্থানীয় দুই ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আমলা থেকে রাজনীতিকে পরিণত হওয়া ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার ছেলে।

এই চক্রটি ধানমণ্ডির ফুটপাতে হকারদের এবং লেকের তীর ঘেঁষে বিশাল এলাকাজুড়ে চেয়ার-টেবিল দিয়ে দোকান বসিয়েছে। যা এখানকার উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিপন্থী এবং জনসাধারণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। রবীন্দ্র সরোবরের পুরো উন্মুক্ত জায়গা এখন একটি বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। সকাল-সন্ধ্যা এখানকার ফুটপাথে হকারদের দোকান বসছে, দখল হয়ে থাকছে অবৈধ খাবারের দোকানে।


২০১১ সালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর থেকে ৬ নম্বর পর্যন্ত লেকের ৯৮ একর এলাকাজুড়ে একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নগরবাসী ও পথচারীদের কাছে এই স্থানকে আরও সবুজ ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এটি যৌথভাবে নিয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় (এলজিইডি) ও তৎকালীন ঢাকা সিটি করপোরেশন।

এরপর মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নকে ন্যস্ত করা হয়। কনসালটেন্ট হিসেবে তাদের সঙ্গে কাজ করার দায়িত্ব পায় বেসরকারি স্থাপত্য কোম্পানি ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইকবাল হাবিব বলেন, ‘স্থায়ী দুটি দোকান বাদে এলাকাটিতে ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকানগুলো উন্নয়ন পরিকল্পনা বহির্ভূত।’

ভিত্তি স্থপতি বৃন্দ লিমিটেডের পরিচালক আরও বলেন, ‘ধানমণ্ডি লেক সরকারি প্রকল্পের অংশ হওয়ার আগে অনেক অবৈধ স্থাপনা ছিল। আমরা সেগুলো সরানোর প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু রিট পিটিশনের মাধ্যমে দুটি স্থাপনা তৈরি হয়। একটি ফাস্টফুড, অন্যটি বিশ্রামের জায়গা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে তিন-চারবার এ বিষয়ে অবহিত করলেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)। তাদের ১ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয় এখানেই। এই ধানমণ্ডিতেই আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, যেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কার্যালয়ের কমকর্তারা জানান, ধানমণ্ডি লেক ও এর চারপাশের এলাকাকে ৮টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩ ও ৭ নম্বর সেক্টরটি ২০১৩ সাল থেকে ইজারা নিয়েছে মির্জা শাহরুখ জলিল তুষারের প্রতিষ্ঠান ডায়নামিক ফুড কোর্ট।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত মঞ্চ এলাকায় মাত্র দুটি স্টলের অনুমতি দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাত্র দুটি স্টলের অনুমতি থাকলেও ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির হোসেন স্বপনের সহায়তায় তুষার এলাকাটিতে একটি বাজার তৈরি করেছেন। এটি পার্কের সীমানাও ছাড়িয়ে বাইরে চলে গেছে। ২০১৬ সালে ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও পুরোদমে এখনও ব্যবসা চলছে।

সূত্র জানিয়েছে, ডিএসসিসির সাবেক এক কর্মকর্তার সহায়তায় এই ইজারা নিয়েছিলেন তুষার। ইজারার অল্প টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। তবে সূত্র মতে, তার কাছে এখনও প্রায় ১ কোটি টাকা পাবে সিটি করপোরেশন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৩ সালের এপ্রিলে সিটি করপোরেশন ও ডায়নামিক ফুড কোর্টের মধ্যকার চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। ২০১৬ সালের মার্চে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে এখনও চুক্তি নবায়ন করেননি লিজ গ্রহীতা। এমনকি ইজারার জন্যও হস্তান্তর করেননি।’

হকার ও ব্যবসায়ীদের আগ্রাসন
ফাস্টফুডের দোকান ছাড়াও পার্কিং এলাকায় ছোট দোকান দিয়েছে দখলকারীরা। চায়ের দোকান ছাড়াও শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সেখানে মাছ, কাপড় কিংবা জুতা বিক্রি করছে।
এজন্য প্রাতঃভ্রমণে বের হওয়া পথচারীদের পড়তে হচ্ছে সমস্যার মুখে। এছাড়া সকালের ব্যস্ততম সময়ে রাস্তায় জ্যামও লেগে যায়।

ধানমণ্ডির বাসিন্দা সিয়াম বললেন, ‘লেকের পাশে রবীন্দ্র সরোবরের বেশিরভাগ এলাকাজুড়ে এই অবৈধ দখলের কারণে স্থানীয়দের সকালে হাঁটার সময় অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়।’ তার অভিযোগ, এই পরিস্থিতির জন্য কিছু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ দায়ী।

ফুটপাতে কাপড় ও জুতা বিক্রি করা এক ব্যবসায়ী জানান, তারা প্রতিদিন লাইনম্যান শাহ আলমকে চাঁদা দেন। তিনি স্থানীয় দুই রাজনীতিবিদের প্রতিনিধিত্ব করেন। প্রতিদিন তাদের শাহ আলমকে ৩০০ ও পুলিশকে ৫০ টাকা করে দিতে হয়। এ প্রসঙ্গে তুষার কিংবা শাহ আলমের সঙ্গে অনেক যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

তবে অবৈধ দখলের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ ওয়ার্ড নম্বরের কাউন্সিলর জাকির হোসেন স্বপন।

এদিকে ঢাকার বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো সরাতে বছরব্যাপী কাজ করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। ধানমণ্ডিসহ অন্যান্য অভিজাত এলাকাগুলোতেও তাদের এই কার্যক্রম চলছে। কিন্তু সবসময়ই ফুটপাত দখল করা হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের এড়িয়ে গেছেন তারা।

রাজউকের ধানমণ্ডি জোন ফাইভে দায়িত্বরত আবু জাফর মো. শফিউল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ফুটপাত দখলের বিষয়ে অবগত আছে সিটি করপোরেশন।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জানান, তারা এই বিষয়ে অবগত এবং শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে মেয়র সাঈদ খোকনের কাছ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

/এমএইচ/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিকশিত করতে যে শর্ত দিলো চীন
জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিকশিত করতে যে শর্ত দিলো চীন
স্থায়ী জামিন পেলেন না ড. ইউনূস
স্থায়ী জামিন পেলেন না ড. ইউনূস
আইপিএল থেকে অনির্দিষ্টকালের বিরতি নিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল!
আইপিএল থেকে অনির্দিষ্টকালের বিরতি নিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল!
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
ঘরে বসে আয়ের প্রলোভন: সবাই সব জেনেও ‘চুপ’
সর্বাধিক পঠিত
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
কিছু আরব দেশ কেন ইসরায়েলকে সাহায্য করছে?
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
সরকারি চাকরির বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ১৮ এপ্রিল
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
৪ দিনেই হল থেকে নামলো ঈদের তিন সিনেমা!
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি
বিসিএস পরীক্ষা দেবেন বলে ক্যাম্পাসে করলেন ঈদ, অবশেষে লাশ হয়ে ফিরলেন বাড়ি