X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

শত বাধা আর কষ্টেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তারা

এস এম নূরুজ্জামান, সাভার থেকে
২৪ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:০১আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:০১

শত বাধা আর কষ্টেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন তারা রিতা, রেখা, হালিমা, ফাতেমা ও জাকিয়া। তারা ছিলেন পোশাক শ্রমিক। রানা প্লাজার দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাদের শারীরিক শক্তি। সেই সঙ্গে বদলে দিয়েছে তাদের পেশা।

রিতা এখন টেইলার্সের দোকানের মালিক, রেখা সেই দোকানের কর্মচারী। হালিমা ও জাকিয়া মুদি দোকানদার। আর ফাতেমা গার্মেন্ট ছেড়ে এখন বাঁশ ও বাঁশের চাটাই বিক্রি করে স্বাবলম্বী। তারা প্রত্যেকেই প্রাপ্ত আর্থিক সহায়তা কাজে লাগিয়েছেন। শারীরিক ও মানসিক বাধা জয় করে সচল রেখেছেন নিজেদের সাংসারিক জীবনের চাকা।

শুধু তারাই নন। ‘আশার আলো’, ‘হাসিখুশি’, ‘প্রত্যাশা’ ও ‘লাল গোলাপ’সহ বিভিন্ন সেলফ হেল্প গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় আহত প্রায় চার হাজার শ্রমিকের বেশিরভাগই পোশাক কারখানা ছেড়ে নতুন পেশায় যুক্ত হয়েছেন। চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক অনুদান কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার। তবে কেউ কেউ আবার সহায়তার পুরো টাকাই সাংসারিক ব্যয় ও চিকিৎসা খাতে ফুরিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

রবিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে সাভারের গেণ্ডা পুকুর পাড়ে অবস্থিত ত্রিশা টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্সের মালিক রিতা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তার জীবনযুদ্ধের কাহিনী বর্ণনা করেন। কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। অভাবী পরিবারের ১১ ভাইবোনের মধ্যে তিনি অষ্টম। তার বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। পরপর দুই কন্যাসন্তানের জন্ম হওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে জায়গা হয়নি। স্বামী আতিয়ার মালিথা তাকে ছেড়ে বিয়ে করেন অন্যজনকে।

‘নিজে বাঁচবো, বাচ্চাদেরও বাঁচাবো’— এমন প্রতিজ্ঞা নিয়ে ২০১০ সালে ঢাকায় চলে আসেন রিতা খাতুন। প্রথমে চাকরি করেন সাভারের বেবিলোনে, তারপর ভারটেক্সে। নিজে না খেয়ে দুই কন্যার নামে প্রগতি ইন্সুরেন্সে টাকা জমাতে থাকেন। জমার অঙ্ক ৪২ হাজারে উঠলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই বীমা কোম্পানি লাপাত্তা। টাকার শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। চলে যায় চাকরিও। এ কারণে সুদের ওপর ৫০০ টাকা ধার করে ওষুধ কেনেন নিজের জন্য।

সুস্থ হওয়ার পর ২০১২ সালে রানা প্লাজার নিউ ওয়েভ স্টাইল কারখানায় সুইং অপারেটর পদে চাকরি শুরু করেন রিতা খাতুন। এর আট মাস পরই ধ্বসে পড়ে ভবনটি। ঘটনার দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার হলেও কোমর ও মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায় তার। প্রচণ্ড চোট পান মাথায়। এতসব আঘাতের পর আরও নতুন নতুন রোগ বাসা বেঁধেছে শরীরে। বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। কথা বলতে গেলেই বিগড়ে যায় মেজাজ। সবসময় জ্বর থাকে শরীরে।

আহতের তালিকায় ক্ষতিপূরণ পাওয়া প্রসঙ্গে রিতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি তো ক্ষতিপূরণ পাইনি। যা পেয়েছি তা অনুদান। অ্যাকাউন্ট করে ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছে। আর বিকাশের মাধ্যমে তিন দফায় ১৫ হাজার করে ৪৫ হাজার টাকা পেয়েছি। বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন ব্যক্তিপর্যায় থেকে ৩০ হাজার টাকা পেয়েছি। ওষুধ না কিনে ওই টাকা জড়ো করে ২০১৩ সালের শেষের দিকে দেড় লাখ টাকা খরচ করে মেয়ের নামে টেইলার্সের দোকান দিয়েছি। এখন আমার ঘরে তিনটি মেশিন। একজন কর্মচারীও আছে। নানা বাধা সত্ত্বেও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়।’

রিতার কথা শেষ না হতেই তারই দোকানের বয়স্ক কর্মচারী রেখা বেগম (৪৫) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমিও রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচেছি। হাড় ভাঙা কোমর নিয়ে চাকরি খুঁজেছি পথে পথে। রানা প্লাজার নাম শোনার পর কেউ চাকরি দেয়নি। ১৭ বছর আগে স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। তাই তিন সন্তানের খাবার জোগাতে চায়ের দোকানে পর্যন্ত কাজ করেছি। এখন এই দোকানের অর্ডার নিয়ে এসে নিজেই সেলাই করি। মাসে ৭-৮ হাজার টাকা রোজগার হয়। তবুও সাহায্যের জন্য কারও কাছে হাত পাতি না।’

একই গল্প শোনালেন সাভারের ডগরমোড়া এলাকার ফাতেমা বেগম। যিনি রানা প্লাজার দুর্ঘটনায় ডান পায়ের গোড়ালি হারিয়েছেন। বেঁকে গেছে তার মেরুদণ্ডের হাড়। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বামী পরিত্যক্ত হয়েই রানা প্লাজার পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলাম। আর্থিক অনুদানের টাকা দিয়ে এখন বাবার সঙ্গে বাঁশ ও বাঁশের চাটাইয়ের ব্যবসা করি। চট্টগ্রামের কাপ্তাই এলাকা থেকে বাঁশ নিয়ে আসি। তবুও গার্মেন্টে আর চাকরি করবো না।’

সাভার উপজেলার ছায়াবিথী এলাকার মুদি দোকানদারের একজন হালিমা বেগম। যে পায়ে পোশাক কারখানার মেশিন চালাতেন, তার সেই পা এখন অকেজো। তাই গার্মেন্টের চাকরি ছেড়ে অনুদানের টাকায় দোকান দিয়েছেন। চলনশক্তি হারালেও মনোবল হারাননি কখনোই। ১৯ বছর আগে স্বামী হাবিবুর রহমানকে হারিয়েও দমে যাননি। একমাত্র ছেলের কথা ভেবে ঘর বাঁধেননি আর। এখন তার বয়স ৫০-এর ওপরে। ছেলের ঘরে নাতনি আছে। দোকানের লাভ দিয়েই চলে তার চার জনের সংসার। এখন তিনি হালিমা স্টোরের মালিক।

একই পথের পথিক জাকিয়া বেগম (৩৮)। রানা প্লাজার ছাদ ধ্বসে পড়ায় মাথায় ও কোমরে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। এখনও ঠিকভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। তারপরও সাভারের জামসিং সুলেমান মার্কেটে দোকান ভাড়া নিয়েছেন। সেই দোকানের লাভ দিয়েই দুই সন্তানকে কলেজে ভর্তি করিয়েছেন জাকিয়া।

/জেএইচ/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
জানা গেলো বেইলি রোডে আগুনের ‘আসল কারণ’
গরমে খান দইয়ের এই ৫ শরবত
গরমে খান দইয়ের এই ৫ শরবত
সাভারে ভাঙারির দোকানে আগুন, এক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
সাভারে ভাঙারির দোকানে আগুন, এক ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে
বার্সা চায় শিরোপার দৌড়ে ফিরতে, আরও কাছে যাওয়ার বাসনা রিয়ালের
এল ক্লাসিকোবার্সা চায় শিরোপার দৌড়ে ফিরতে, আরও কাছে যাওয়ার বাসনা রিয়ালের
সর্বাধিক পঠিত
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
শিল্পী সমিতির নির্বাচন: সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও