X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে চুরি হয়ে যায় শিশু সুমাইয়া (ভিডিও)

নুরুজ্জামান লাবু
২৪ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:০৬আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ২৩:২২

 

শিশু সুমাইয়া বারান্দায় বসে খেলা করছিল পাঁচ বছরের শিশু সুমাইয়া। মা ঘরের ভেতর বসে কোরআন তেলোয়াত করছিলেন। এমন সময় আসে ওই বাসার পুরনো ভাড়াটিয়া অথৈ আক্তার বৃষ্টি। খোঁজ করে বাড়িওয়ালা হাছনা হেনার। না পেয়ে বারান্দায় শিশু সুমাইয়ার সঙ্গে বসে কথা বলতে থাকে বৃষ্টি। ঘরের ভেতর থেকে তাদের কথা শোনেন সুমাইয়ার মা মুন্নী আক্তার। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও তিনি ভাবতে পারেননি, এই নারী যাওয়ার সময় তার মেয়েকে চুরি করে নিয়ে যাবেন। কোরআন তেলওয়াত করছেন বলে ওই নারী ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। তারপর সুযোগ বুঝে সুমাইয়াকে সঙ্গে নিয়ে চলে যান। গত ২ এপ্রিল বিকেলে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এরপর প্রায় ২৪ দিন পেরিয়ে গেছে কিন্তু শিশুটিকে উদ্ধার বা শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া বৃষ্টিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

শিশুটিকে বাসা থেকে ফসুলিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন শিশুটির বাবা জাকির হোসেন। প্রথম দিকে শিশুটিকে উদ্ধারের ব্যাপারে কোনও গুরুত্ব দেয়নি পুলিশ। সোমবার এ বিষয়ে একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর টনক নড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি ইব্রাহীম খাঁন নিজে যান শিশুটির বাসায়। র্যা ব, গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই কর্মকর্তারা শিশুটির বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।

জানতে চাইলে কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকির বলেন, ‘শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি, র্যা ব, পিবিআই কাজ করছে। সবাই আমরা একযোগে শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য কাজ করছি।’ ওসি বলেন, ‘আমরা হয়তো খুব শিগগিরই ভালো এক খবর দিতে পারবো।’

অভিভাবকের হাতে সুমাইয়া সোমবার দুপুরে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রামের কুঁড়ারঘাট চিনিবাড়ি গলির ৮৮ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাসায় প্রতিবেশী লোকজনের ভিড়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন। সুমাইয়ার বাবা-মায়ের পাশপাশি আহাজারি করছেন প্রতিবেশীরাও। মিষ্টি চেহারার শিশুটি যেন সুস্থভাবে উদ্ধার হয় সেজন্য সবাই প্রার্থনা করছেন।

শিশু সুমাইয়ার বাবা জাকির হোসেন জানান, তিনি একটি স্টিল কারখানায় কাজ করেন। ঘটনার দিন বিকেলে তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। সন্ধ্যায় তিনি একমাত্র মেয়ে হারানোর খবর পেয়ে বাসায় ছুটে আসেন। পুরো বড়গ্রাম এলাকায় খোঁজ করেন। তারপর এলাকার প্রতিটি মসজিদে মাইকিং করেন। পরদিন মাইক ভাড়া করে পুরো লালবাগ এলাকায় মাইকিং করেন। কিন্তু মেয়েকে ফিরে পাননি। ওইদিনই বাসার গলির মুখের বিপরীতে এক ভবনে লাগানো সিসিটিভির ফুটেজ দেখেন। সেখানে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত অথৈ আক্তার বৃষ্টি নামের পুরানো সেই ভাড়াটিয়া সুমাইয়াকে হাত ধরে নিয়ে পশ্চিমের রাস্তায় যাচ্ছে। পরে ওই ভিডিও ফুটেজও জমা দেওয়া হয় পুলিশের কাছে।

জাকির হোসেন বলেন, আমার একটাই সন্তান। মেয়েটাকে ফিরে পাবার জন্য যে যা বলছে তাই করছি। থানা পুলিশের পাশাপাশি গণক-ফকিরের কাছেও গিয়েছি। আমি যে কোনও মূল্যে মেয়েকে ফেরত পেতে চাই।

সুমাইয়ার মা মুন্নী আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমি বিকেলে বিছানায় বসে কোরআন শরীফ পড়ছিলাম। অথৈ আক্তার বৃষ্টি বাড়িওয়ালার খোঁজ করে। পরে বারান্দার মেঝেতে বসে সুমাইয়ার সঙ্গে কথা বলে। আমি বুঝতেও পারি নাই তার মনে এইসব ছিল।’ মুন্নী আক্তার বলেন, আমি কোরআন পড়ছিলাম বলে বৃষ্টি নিজেই দরজাটা বন্ধ করে দেয়। কোরআন পড়ছিলাম বলে ডিস্টার্ব হতে পারে এজন্য দরজা লাগিয়ে দেয়। আমি কোরআন পড়া শেষে মেয়েকে ডাকাডাকি করি। ওর সাড়া না পেয়ে রাস্তায় গিয়ে খুঁজি। তখনই আমার সন্দেহ হয়।

বাড়িওয়ালী হাছনা হেনা বলেন, গত রোজার ঈদের আগে বৃষ্টি ও তার স্বামী তাদের একটি রুম ২ হাজার ৮শ’ টাকায় ভাড়া নেয়। স্বামীর নাম ডলি এবং হাজারীবাগের একটি এম্ব্রয়ডারিতে কাজ করে। বৃষ্টি বাসায় থাকতো। গ্রামের বাড়ি কেরানীগঞ্জের বাবুনসুর এলাকায় বলেছে। তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাইলে নাই বলে জানায়। এছাড়া স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিয়মিত ঝগড়া হওয়ায় তাদের এক মাসের মধ্যেই বাসা ছেড়ে দিতে বলেন তিনি। এক মাস ১৭ দিনের মাথায় তারা বাসা ছেড়ে যায়।

হাছনা হেনা বলেন, ঘটনার দিন বৃষ্টি নাকি তাকে খুঁজতে এসেছিল। কিন্তু সেসময় তিনি মেয়েকে নিয়ে কোচিং সেন্টারে গিয়েছিলেন। বাসায় ফিরে তিনি সুমাইয়ার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। হাছনা হেনা বলেন, সুমাইয়া খুব চঞ্চল প্রকৃতির ছিল। সবার সঙ্গে মিশতো। সারাক্ষণ সবার সঙ্গে দুষ্টুমি করতো। মিষ্টি চেহারার মেয়েটির জন্য সবার মন খারাপ হয়ে আছে।

বাড়িওয়ালীর ভাই মোহাম্মদ নাঈম বলেন, শিশুটি খুব চঞ্চল প্রকৃতির ছিল। কিন্তু গলির মুখের বাইরের রাস্তায় বেরোলেও বেশি দূরে যেত না। এলাকার সবার সঙ্গেই তার ভাব ছিল। শিশুটিকে সবাই আদর করত।
প্রতিবেশী মুশফিকা লাইব্রেরির কর্ণধার মাহফুজুর রহমান বলেন, শিশুটি দিনে অন্তত একবার তার দোকানে আসতো। সবাই তাকে আদর করতো। আমরা চাই শিশুটিকে যেন দ্রুত সুস্থভাবে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ইব্রাহীম খাঁন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। পরিবারের সদস্যরা মামলা করেছে। আমরা শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছি। ডিসি বলেন, বৃষ্টি নামে যে ভাড়াটিয়া শিশুটিকে চুরি করেছে তাকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তার পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

/টিএন/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা