X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রাইম বোর্ডে নেই শীর্ষ অপরাধীদের ছবি!

রাফসান জানি
২৫ এপ্রিল ২০১৭, ১২:৫৪আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৫৪

থানায় থাকা ক্রাইম বোর্ড

আগে থানাগুলোয় প্রবেশ করলেই চোখে পড়তো নোটিশ বা ক্রাইম বোর্ড। জরুরি নোটিশ ছাড়াও এলাকায় চিহ্নিত ও শীর্ষ অপরাধীদের ছবি সাঁটানো থাকতো এতে। সতর্ক করতে এবং পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে সাধারণ মানুষের সহায়তা পাওয়াই ছিল এ কাজের প্রধান উদ্দেশ্য। থানায় এখনও বোর্ড আছে, তবে তাতে নেই কোনও শীর্ষ অপরাধীর ছবি। এর বদলে হয়েছে, মাদকসেবাী, চোর ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি। পুলিশ বলছে, থানাগুলো ডিজিটাল হওয়ার অপরাধীদের তালিকা অনলাইনে প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে সেই তালিকা শুধু দেখতে পারে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি রাজধানীর শাহবাগ, নিউমার্কেট, রমনা, কলাবাগান, ধানমণ্ডি, তেজগাঁও, মিরপুর, মোহাম্মদপুর থানা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের কোনও তালিকা বা ছবি নেই। থানাগুলো ক্রাইম বোর্ডে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের পরিবর্তে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছবি ঝুলছে। আবার কোথাও কোথাও মোটরসাইকেল ও মোবাইল চোর এবং মাদকসেবীদের ছবি লাগানো।

ঢাকা মহাগনরের থানাগুলোয় শীর্ষ অপরাধীদের ছবি দৃশ্যমান স্থানে না থাকার ভিন্ন ভিন্ন কারণের কথা বলেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কেউ বলছেন, থানাগুলো ডিজিটাল হয়েছে, যে কারণে ক্রাইম বোর্ডে অপরাধীদের তালিকা না টাঙিয়ে অনলাইনে ডাটাবেজ করা হচ্ছে। আবার কেউ বলছেন, আগের মতো দাগী অপরাধী নেই, তাই বোর্ডে ছবিও নাই।

ক্রাইম বোর্ডে নেই শীর্ষ অপরাধীদের ছবি!

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন সবকিছু ডিজিটাল হয়েছে। প্রতিটি থানাতেই ডাটাবেজে অপরাধীদের তালিকা রয়েছে।  অপরাধীদের গ্রেফতারে এসব তথ্যই ব্যবহার করা হচ্ছে।’

অপরাধীদের ডাটাবেজের আওতায় নিয়ে আসতে কেন্দ্রিয়ভাবে ‘ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (সিডিএমএস) তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বলেন, ‘এই সিডিএমএস-এ অপরাধীদের ডাটা প্রতিটি থানাতেই এন্ট্রি করা হয়। সারাদেশে যত মামলা হয় সব এই সিডিএমএস এ লিপিবদ্ধ থাকে। একবার কারও নামে মামলা হলে সেটা সিডিএমএস এ ওঠে। ফলে এইক ব্যক্তি আবার অন্য কোথাও গ্রেফতার বা মামলা হলে তার নামে দেশের অন্য থানাগুলোতে যত মামলা আছে সেগুলোর আপডেট তথ্য চলে আসে। যাতে করে আসামি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে সময় কম লাগছে। এটার সুফল পাওয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।’

তেজগাঁও থানায় কোনও চিহ্নিত সন্ত্রাসী নেই তাই তালিকাও নেই বলে জানিয়েছেন সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কিছু মাদকসেবী ও মোবাইল চোর আছে। এগুলো ছাড়া বড় চিহ্নিত কেউ নেই। যে কারণে তালিকাও নেই।’

সন্ত্রাসীদের নাম বা ছবি প্রকাশে যেমন সুবিধা আছে, তেমনি অসুবিধাও আছে বলে জানান মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন মীর। তিনি বলেন, ‘থানায় অপরাধীদের ছবি থাকলে মানুষ সতর্ক থাকতে পারতো। কিন্তু এতে কিছু সমস্যাও আছে। ছবি প্রকাশের পর অপরাধীরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়।’

থানায় তালিকা বা ছবি না থাকলেও জনগণকে সচেতন করতে বা পলাতকদের ধরিয়ে দিতে এলাকায় পোস্টারিং ও টিভিতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।

ক্রাইম বোর্ডে নেই শীর্ষ অপরাধীদের ছবি!

আবার ছবি প্রকাশ করা নিয়ে হাইকোর্টের এক রুলের ব্যাপারে অপস্পষ্টতা রয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে। যদিও ২০১২ সালের দেওয়া রুলে বলা হয়েছে, ‘গ্রেফতারকৃত বা সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ব্যক্তিকে স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্যে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা যাবে না। কারণ গ্রেফতারকৃত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিচারে নির্দোষ প্রমাণিত হতে পারেন। তাই বিচারের আগে তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা শুধু মিডিয়া ট্রায়ালই নয়, এটা মিডিয়া কনভিকশনও বটে।’

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওসি বলেন, ‘একজন ম্যাজিস্ট্রেট গ্রেফতারের পর ছবি প্রকাশ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তখন থেকে আর থানায় ছবি প্রকাশ করা হয় না। এমনকি থানা থেকে আসামিদের কোনও ছবিও এখন সাংবাদিকদের দেওয়া হয় না।’

থানায় প্রকাশ্য স্থানে অপরাধীদের ছবি বা তালিকা রাখার ব্যাপারে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তালিকা বা ছবি রাখার মূল উদ্দেশ্য ছিল লোকজন তাদের দেখবে, নাম জানবে। যাতে পরবর্তীতে তাদের কোথায় দেখলে বা সন্ধান পেলে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে। এতে পুলিশ আসামি গ্রেফতারে সাধারণ জনগণের সহায়তা পাবে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধের ধরন পাল্টেছে, অপরাধীদের সংখ্যাও বেড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, অপরাধ দমনের জন্য আইন রয়েছে। সেই আইনের প্রয়োগ যথাযথ করতে হবে বা প্রয়োগ করতে দিতে হবে। তাহলেই অপরাধ দমন সম্ভব হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের ছবিসহ তালিকা থাকা প্রয়োজন। তবে ছবি বা তালিকা থাকার পরও যদি আসামিদের গ্রেফতার করা না হয় তাহলে কোনও উপকার নাই। ডিজিটাল হচ্ছে, অনলাইনে তালিকা হচ্ছে। ন্যাচারালি অপরাধীদের সংখ্যাও বাড়ছে। তালিকা আছে কি নেই সেটার চেয়ে বড় বিষয় হলো অপরাধীরা গ্রেফতার হচ্ছে কিনা।’

তার মতে, ‘থানায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা থাকা একটা ভ্যালু আছে। কিন্তু এটা না রেখে যদি প্রকৃত অর্থে দশটা অপরাধী ধরার কাজে সফটওয়ার বা ডাটাবেজ ব্যবহার করা হয় তাহলে আমার আপত্তি নাই। কিন্তু সেই কাজ করা হচ্ছে কিনা? আমার কথা হচ্ছে, মূল কাজটা হচ্ছে- অপরাধীদের শনাক্ত করা ও তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সেটা কতটুকু আন্তরিকতার সঙ্গে হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়।’

/আরজে/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
জীবনানন্দ পুরস্কার পেলেন জাহিদ হায়দার ও মোস্তফা তারিকুল আহসান
জীবনানন্দ পুরস্কার পেলেন জাহিদ হায়দার ও মোস্তফা তারিকুল আহসান
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস