X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত যাত্রীর জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকে না লঞ্চে

ওমর ফারুক
২৭ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:১৭আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:০৯

লঞ্চ নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলোয় অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য কোনও নিরাপত্তা সরঞ্জাম থাকে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করলেও এদিকে কারও নজর নেই। এমনকি ডেকযাত্রীদের নাম-ঠিকানাও লিপিবদ্ধ করা হয় না। ফলে লঞ্চ দুর্ঘটনায় পড়ে কোনও যাত্রী মারা গেলেও তার লাশ বেওয়ারিশ হয়ে যায়। এছাড়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল, তারও হিসাব পাওয়া যায় না।

নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চের বিপন্ন যাত্রীদের জীবন বাঁচাতে অন্যতম উপায়-‘লাইফ বয়া’। এটি মানুষকে ভাসিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এ কারণে প্রতিটি লঞ্চেই লাইফ বয়া রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি লঞ্চেই যাত্রী ধারণক্ষমতা নির্ধারণ করা আছে। সে অনুযায়ী লঞ্চগুলোয় অন্য সরঞ্জামের পাশাপাশি লাইফ বয়াও রাখা হয়। সরকার লঞ্চের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী নিরাপত্তা সরঞ্জাম আছে কিনা, তা তদারকি করে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, কোনও লঞ্চই যাত্রী ধারণক্ষমতার সীমা রেখে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলাচল করেন না। অতিরিক্ত যাত্রী থাকে প্রতিটি লঞ্চেই। অথচ অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য কোনও ধরনের জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকে না কোনও লঞ্চে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ কারণে কোনও লঞ্চ প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়লে যাত্রীদের মধ্যে বেঁচে থাকার লড়াইটা শুরু হয় বয়ার দখল নিয়ে। লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম

মঙ্গলবার দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে দূরপাল্লার বেশ কয়েকটি লঞ্চ ঘাটে ভেড়ানো অবস্থায় দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা-আমতলী রুটের সুন্দরবন-৫। প্রবেশমুখে লেখা লঞ্চটির যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৪০০ জন। তাদের নিরাপত্তার জন্য অন্য সরঞ্জামের সঙ্গে লাইফ বয়া রয়েছে ১০৪টি।

‘অতিরিক্ত যাত্রী উঠলে তাদের নিরাপত্তার জন্য কী ব্যবস্থা আছে’ জানতে চাইলে সুন্দরবন-৫ লঞ্চের সুপারভাইজার আসাদুজ্জামান অপু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চারজন যাত্রীর জন্য থাকে একটি বয়া। সে অনুযায়ী আমরা বয়া রেখেছি। তবে যাত্রীসংখ্যা যাই হোক, নিরাপত্তা সরঞ্জাম এগুলোই।’ তিনি বলেন, ‘ঝড়ের সময় যাত্রীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করলে লঞ্চটি দুলতে থাকে। এ সময় যাত্রীরা লঞ্চের ডেকের পর্দা নামিয়ে দেয় বৃষ্টির পানি ঠেকাতে। এতে বাতাসের গতি বাধাগ্রস্ত হয়। বাতাস তখন লঞ্চটিকে ধাক্কা দিতে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে যাত্রীদের স্থির থাকতে বলি ও জানালার পর্দা তুলে দেই। যেন সহজেই বাতাস চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া আবহাওয়া বেশি খারাপ হলে মাস্টার তার লঞ্চটি পার্শ্ববর্তী তীরে ভিড়িয়ে রাখেন। এরপর পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে যাত্রীরা লাইফ বয়া নিয়ে টানাটানি শুরু করে দেন।’

ঢাকা-বরগুনা রুটের এমভি প্রিন্স আওলাদ-২ লঞ্চের টিকিট মাস্টার মিজান বলেন, ‘ধারণক্ষমতা অনুযায়ী আমাদের লাইফ বয়া আছে। একটি বয়ায় চার-পাঁচ জন মানুষ ভেসে থাকতে পারে। অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য এমন কিছু রাখা হয় না।’ তিনি জানান, ‘কোনও লঞ্চেই ডেকযাত্রীদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করা হয় না। কারণ ডেকযাত্রীরা একবার এই লঞ্চে ওঠে তো আরেকবার অন্য লঞ্চে চলে যায়। তাই লঞ্চ ছাড়ার পর তাদের কাছ থেকে টিকিট দিয়ে ভাড়া আদায় করা হয়। তবে কেবিনযাত্রীদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহে থাকে। লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম

লঞ্চ চলাচলের সার্টিফিকেটদাতা সরকারি সংস্থা সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেকোনও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন একদম নিষিদ্ধ। এরপরও বাস্তবতার নিরিখে ঈদের সময় আমাদের কিছু মেনে নিতে হয়। বেশ কয়েকটি সভায় মালিকদের বলেছি, কখনও অতিরিক্ত যাত্রী উঠলে তাদের জন্য যেন লাইফ বয়া রাখা হয়। কিন্তু তারা তা করছেন না। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শুধু সরকারের ওপর দিলেই চলবে না, মালিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

যাত্রীদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা সাইফুর রহমান বলেন, ‘এক সময় কোনও যাত্রীরই নাম-ঠিকানা লেখা হতো না। সম্প্রতি কেবিনযাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ডেকযাত্রীদের তথ্য লিপিবদ্ধ হচ্ছে না। আমরা মালিকদের অনুরোধ করেছি, তারা যেন ডেকযাত্রীদেরও তথ্য সংগ্রহে রাখেন।’

ঢাকা নদীবন্দর ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ নৌচলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার উপদেষ্টা লুৎফর রহমান রুমী কিসলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডেকযাত্রীদের নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে সরকার আমাদের বলেনি। তাই কেউ করছে না। সরকার বললে আমরা নিশ্চয়ই করব। বর্ষা মৌসুমে কোনও লঞ্চেই বেশি যাত্রী হয় না। তাই অতিরিক্ত বয়ারও প্রয়োজন পড়ে না।’

প্রসঙ্গত, বিগত সময়ে সংঘটিত প্রতিটি দুর্ঘটনার পর নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় বেশ কিছু যাত্রীর লাশ বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা হয়েছে। যাত্রীদের তথ্য না থাকায় দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের যাত্রীসংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। এ কারণে যাত্রীদের তথ্য সংরক্ষণের ওপর নৌপরিবহন সংশ্লিষ্টরা গুরুত্বারোপ করলেও লঞ্চ মালিকরা তা গ্রাহ্যই করেননি।

/এসএমএ/ এমএনএইচ/আপ-এফএস/

আরও পড়ুন- 

মসলা বিক্রেতা থেকে ‘জঙ্গি’ শিবগঞ্জের আবু
৭ খুনের ৩ বছর: আপিলেও ফাঁসির রায় বহালের আশা স্বজনদের

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!