X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণে সহযোগিতার প্রমাণ পেলে রেইনট্রি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা

জামাল উদ্দিন ও এস এম নূরুজ্জামান
২০ মে ২০১৭, ০০:৩৪আপডেট : ২০ মে ২০১৭, ১৬:১৭

হোটেল রেইনট্রি ধর্ষণে সহযোগিতার প্রমাণ পেলে রেইনট্রি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলেন, রেইনট্রি হোটেলে ঘটনার দিন যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সেদিন কার কী ভূমিকা ছিল, তাও জানার চেষ্টা করা হবে। কারণ, ঘটনার পর থেকেই রেইনট্রি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।
তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার সময় রেইনট্রি হোটেলের রহস্যজনক আচরণের কারণ জানতে হোটেলে দায়িত্ব পালনকারী মালিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও রিমান্ডে থাকা তিন আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম, সাফাতের গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন ও বডিগার্ড রহমত আলী ওরফে আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদের পর রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক আচরণের অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। হোটেলটির মালিকের ছেলে, একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত তদারককারী একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘সব আসামি গ্রেফতারের পর রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষের অনেক তথ্য হাতে এসেছে। ঘটনার সময় মালিকপক্ষের এক সদস্যের উপস্থিতি ও একজন সংসদ সদস্যের ছেলের প্রভাবের কারণে ধর্ষকরা সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া আচরণ করেছিল।’ তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনের আগেই কেন হোটেলটির রুম ভাড়া দেওয়া হয়েছিল ও রেজিস্ট্রার মেইনটেইন না করে অতিথিদের কেন ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল? কিভাবে আসামিরা অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেছিল এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য মদ ও ইয়াবার সরবরাহ কারা করেছিল? কেন তারা ধর্ষণের ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেছিলেন, এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করা হবে।’ এছাড়া হোটেল মালিক, সংসদ সদস্য বজলুল হক (বিএইচ) হারুনের ছেলের সঙ্গে ধর্ষকদের সখ্যের বিষয়টিও জানার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ রাতে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীরা পুলিশের কাছে সব তথ্য দিলেও  হোটেল কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করেছে। প্রবেশ পথসহ হোটেলের ভেতরে সিসিটিভিতে ধারণ করা ফুটেজ নিয়েও তারা নানা লুকোচুরি করেছে। হোটেলের কোন কক্ষ তারা (ধর্ষকরা) ভাড়া নিয়েছিল, তাও উদ্দেশ্যমূলকভাবে রেজিস্ট্রারে নথিভুক্ত করা হয়নি। হোটেল মালিকের ছেলের উপস্থিতিতেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছে আসামিরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনস্পেক্টর ইসমত আরা এমি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হোটেলের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদারক করছেন জানিয়ে তিনি আর কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ধর্ষণ মামলার তদারক কর্মকর্তা ও ঢাকা মহানগর পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেইনট্রি হোটেলটি ঘটনাস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া ঘটনার সময় উপস্থিত হোটেলের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনার রাতে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল, সব বিষয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ধর্ষণে সহযোগিতার প্রমাণ পেলে অবশ্যই তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। হেফাজতে রেখে তিন আসামিকে এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া তদন্তে রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় হোটেলটির কারও জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে  তাকেও গ্রেফতার করা হবে।’

সাফাত ও সাদমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বর্তমানে এজাহারভুক্ত আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে হালিম, সাফাতের গাড়ির চালক বিল্লাল হোসেন ও বডিগার্ড রহমত আলী ওরফে আজাদ রিমান্ডে রয়েছে। নাঈম আশরাফের সাত দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার। এছাড়া বিল্লাল হোসেনের রিমান্ডের চতুর্থদিন এবং রহমত আলী ওরফে আজাদের রিমান্ডের তৃতীয় দিন। শনিবার ও রবিবার বিল্লাল ও রহমতের রিমান্ড শেষ হবে।

গত ১৩ মে সংবাদ সম্মেলকে হোটেলের অন্যতম মালিক সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের ছেলে আদনান হারুন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সাফাত আহমেদের নামেই হোটেলের ৭০০ ও ৭০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। ঘটনারদিন রাত সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত হোটেলের মহাব্যবস্থাপক অবস্থান করলেও তিনি অস্বাভাবিক কিছু দেখেননি। ধর্ষণ ঘটনার প্রধান আসামি শাফাত আহমেদের সঙ্গে হোটেলের পরিচালক মাহির হারুনের বন্ধুত্বের বিষয়টিও তারা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘হোটেলের নিয়ম অনুযায়ী অতিথিদের বিশেষ দিনকে উপলক্ষ করে হোটেলের পক্ষ থেকে কেক ও ফুলের ব্যবস্থা করা হয়। শাফাত আহমেদের জন্মদিনেও তাই করা হয়েছিল।’

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা