X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুতে, গুরুত্ব পাবে মানবসম্পদ

শফিকুল ইসলাম
২৫ মে ২০১৭, ০৭:৫২আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ১৪:৩০

এবার বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুতে, গুরুত্ব পাবে মানবসম্পদ আগামী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেট হবে নির্বাচনি বাজেট। এটি হবে বর্তমান সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। অবশ্যই সরকার এর পরের অর্থবছরেরও (২০১৮-১৯)  বাজেট দেবে, তবে তা হবে ৬ মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন। এবারের বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত, সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে মানবসম্পদ উন্নয়ন খাত। নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন করারোপের বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর সব কিছুই অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ নাও থাকতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।  

এবারের বাজেটে অতীতের রেকর্ড ভেঙে শিক্ষাকে বাদ রেখে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে বিদ্যুৎ ও জ্বলানি খাতে। চলতি অর্থবছরের জন্য বিদ্যুৎ খাতে ১৩ হাজার ৪০ কোটি ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট ৬৭টি প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার ৫৪০ কোটি ৯ লাখ এবং অনুন্নয়ন খাতে ২২ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  ২০১৫-১৬ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ অর্থবছর বিদ্যুৎখাতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কমানো হলেও এ বছর এ সীমানা ছাড়িয়ে বাড়তি বরাদ্দ দেওয়া হবে, যা নিশ্চিত। অর্থমন্ত্রী নিজে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কত বাড়বে, তা তিনি এখনও চূড়ান্ত করেননি।

জানা গেছে, বিশেষ সুবিধা, বরাদ্দ, ভর্তুকি, প্রকল্প রাখা হতে পারে নতুন বাজেটেই। আর এর সবই হতে পারে আগামী নির্বাচনকে মাথায় রেখে। নদীভাঙা ও গৃহহীন পরিবারকে সহায়তা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী, সহায় সম্বলহীন ব্যক্তি, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ বঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে আসন্ন বাজেটে।

এ ছাড়াও দলীয় কর্মীদের সুবিধা দিতে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে কিছু প্রকল্প নেওয়া হতে পারে। এ সব প্রকল্পের মধ্যে পুকুর সংস্কার,  কচুরিপানা পরিষ্কার, খাল খনন ও সংস্কার, পুরনো সড়ক, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের সরকারি ভবন সংস্কার কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য। এজন্য ভর্তুকি বাড়ানো হবে।

এবারে বাজেটে ভর্তুকির প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর ভর্তুকিবাবদ বরাদ্দ ছিল ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। এ বছর কৃষি ও খাদ্য খাতে ভর্তুকি বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম থাকায় জ্বালানি তেলের ক্ষেত্রে কোনও ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে না।

নতুন ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ হবে ২০১৮ সালের ৩০ জুন। আর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যেন ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ না হন, সেদিকে নজর রেখে সংশোধন করে কমানো হবে ভ্যাটের হারও।  

এ প্রসঙ্গে  বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘অবশ্যই নির্বাচনের বিষয়টি দেখতে হবে।  রাজস্ব আদায় না হলে জনগণের উন্নয়ন হবে কী করে? জনগণকে সুবিধা দিতে রাজস্ব আয়ের কোনও বিকল্প নেই। তবে রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে যেন জনগণ ভোগান্তিতে না পড়ে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।’   

আগামী অর্থ বছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হরে পারে ৪ লাখ কোটি টাকার ওপরে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে বাজেট বৃদ্ধির হার ১৬ দশমিক ৫১ শতাংশের বেশি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকার। ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৭-১৮ নতুন অর্থবছরের জন্য মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।

এবারের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর থেকে আসবে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে সম্ভাব্য আয় ধরা হতে পারে ১১ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণবাবদ সহায়তা নেওয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে ৫৫ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অনুদান নেওয়া হতে পারে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত খাত থেকে আসবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি পূরণ করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস ও বিদেশি সহায়তা থেকে।

আগামী অর্থবছরে মোট ব্যয় হবে ৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা খাতে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ভর্তুকি খাতে ব্যয় হবে ২৭ হাজার ৫শ কোটি টাকা। বাকি ব্যয় ধরা হয়েছে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ, পেনশন গ্র্যাচুইটি, প্রণোদনাসহ আনুষঙ্গিক খাতে।

পাশাপাশি উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা।  এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য ব্যয় ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। নির্বাচনি চমক থাকছে মেগা প্রকল্প। সরকারের ৮ মেগা প্রকল্পেই থাকছে ৩৩ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা।

সব কিছু ঠিক থাকলে ১ জুন জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত হবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। এর আগে ৩০ মে চলমান ১০ম জাতীয় সংসদের ১৬তম অধিবেশন (যা বাজেট অধিবেশন নামেই পরিচিতি)  ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটানা ৯ম বাজেট। এর আগে তিনি এরশাদ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে আরও ২টি বাজেট পেশ করেছিলেন।

/এমএনএইচ/

 

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
ইউরোপা লিগ থেকে বিদায়ের ভালো দিক দেখছেন লিভারপুল কোচ
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
রাশিয়ায় বোমারু বিমান বিধ্বস্ত
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন